নিম্ন জলাভূমিবেষ্টিত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় অসংখ্য খাল ও বিল রয়েছে। ফলে এখানে প্রচুর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এই মাছ প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে শতাধিক শুঁটকিখোলা। বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে এসব শুঁটকিখোলায় মাছ শুকানো শুরু হয়। চলে শীতকালজুড়ে। এলাকার শত শত নারী-পুরুষ এসব শুঁটকিখোলায় কাজ করে তাদের সংসার চালান।উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের ধারাবাশাইল, মাচারতারা, তালপুকুরিয়া, ভেন্নাবাড়ি, নয়াকান্দি, গজালিয়া, আমবাড়ি, পিঞ্জুরী ইউনিয়নের দেওপুরা, ছত্রকান্দা, সোনাখালী, কোনেরবাড়ি, তারাইল, রামশীল ইউনিয়নের রামশীল, রাজাপুর, মুশুরিয়া, জহরের কান্দি, কাফুলাবাড়ি, ত্রিমুখী, সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লাটেঙ্গা, লখণ্ডা, নৈয়ারবাড়ি, ভাঙ্গারহাট, পিড়ারবাড়ি, কলাবাড়ি ইউনিয়নের কালিগঞ্জ, রামনগর, মাছপাড়া, বুরম্নয়াবাড়ি, হিজলবাড়ি, শিমুলবাড়ি, তেঁতুলবাড়ি, বৈকণ্ঠপুর, কুমুরিয়া, কাফুলাবাড়ি, কুশলা ইউনিয়নের জাঠিয়া, মান্দ্রা, পৌরসভার ঘাঘর কান্দাসহ প্রায় অর্ধশত গ্রামে ছোট-বড় শতাধিক শুঁটকিখোলায় এখন মাছ শুকানোর কাজ চলছে।মৎস্যজীবীরা খাল-বিল থেকে মাছ ধরে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এখান থেকে মাছ কিনে অনেকে শুকিয়ে উপজেলার বিভিন্ন বাজারের আড়তে বিক্রি করেন। আবার অনেক মৎস্যজীবী বিল থেকে মাছ ধরে নিজেরাই বাড়িতে শুকান।মিঠা পানির মাছ হওয়ায় কোটালীপাড়ার শুঁটকি খুব সুস্বাদু। তাই দেশে-বিদেশে এ শুঁটকির বেশ কদর রয়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে কোটালীপাড়ার শুঁটকি।উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজারের আড়তদার নিখিল সেন ও অসীম হালদার বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন শুঁটকিখোলার মালিকদের কাছ থেকে শুঁটকি কিনে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে বিক্রি করি। এসব জেলার অনেক ব্যবসায়ী এই শুঁটকি ভারত, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশে পাঠায়।কলাবাড়ি ইউনিয়নের কাফুলাবাড়ি গ্রামের শুঁটকিখোলার মালিক মৃত্যুঞ্জয় বাড়ৈ বলেন, ‘আমরা কলাবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রতি মণ কাঁচা পুঁটি ছয়-আট হাজার টাকা করে কিনি। এই পুঁটি শুকিয়ে মণপ্রতি ২০-২৪ হাজার টাকা করে বিক্রি করি। এ ছাড়া খৈলসা, শোল, গজাল, টেংরাসহ নানা প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ এখানে শুকিয়ে থাকি’।কাফুলাবাড়ি গ্রামের রিতা বাড়ৈ বলেন, ‘আমি মৃত্যুঞ্জয় বাড়ৈর শুঁটকিখোলায় কাজ করি। এখানে আমরা মাছের আঁশ ছাড়িয়ে দিই। এ কাজের জন্য আমাদেরকে প্রতিদিন দুই থেকে তিন শত টাকা করে দেয়। এই টাকা দিয়ে আমাদের সংসার চলে।ঘাঘরকান্দা গ্রামের শুঁটকিখোলার মালিক শাহিন হাজরা বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও পুঁজির অভাবে আমরা অনেক সময় শুঁটকির ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা এই ব্যবসায় আরো লাভবান হতে পারতাম।’উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান প্রধান বলেন, ‘শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ বা সংরক্ষণের জন্য এ উপজেলায় সরকারি কোনো প্রকল্প নেই। সরকার যদি এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয় তাহলে স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ী বা প্রস্তুতকারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘আমরা দ্রুত এ উপজেলায় শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ বা সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আর এই পদক্ষেপ গ্রহণ করার ফলে এ এলাকার শুঁটকিখোলার মালিকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।’