
পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের মুসলিমপাড়ায় স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে থাকেন নাসরিন জাহান। সচ্ছল পরিবারের মেয়ে, বিয়েও সচ্ছল পরিবারেই হয়েছে। চাইলেই শুয়েবসে আয়েশি জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু সেটা না করে নিজে কিছু করতে চেয়েছেন সব সময়।
নাসরিন জাহান বলেন, ‘পরিবারের কাজ শেষ করার পর অলস সময় কাটাত। তাই নিজে কিছু করার জন্য ভাবতে থাকি। এমন সময় মাথায় আসে, বাড়ির ভেতর প্রচুর জায়গা পড়ে আছে। একটি অংশে একটি ডেইরি ফার্ম করা যায়।’
নিজের ইচ্ছের কথাটা স্বামীর কাছে তুলে ধরেন নাসরিন জাহান। উৎসাহ পেয়ে ভালো জাতের তিনটি গরু কিনে বাড়ির এক পাশে গবাদিপশু পালনের জন্য একটা খামার গড়ে তুললেন তিনি, নাম ‘নাসরিন ডেইরি ফার্ম’। সেটা ২০০৮ সালের কথা। বর্তমানে নাসরিনের ফার্মে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫টি গরু আছে। মূলধন দেড় কোটি টাকা। গবাদিপশু পালন করে বিক্রি করেন তিনি। পাইকারি দরে স্থানীয় বাজারে দুধও বিক্রি করেন।
কৃষি উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় ২০১৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ পেয়েছেন এই উদ্যমী নারী। ২০২১ সালে প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে গবাদিপশু পালনে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম হন নাসরিন জাহান। ২০২০ সালেও একইভাবে সেরার পুরস্কার অর্জন করেন। এ ছাড়া বাছুর পালনে ২০১৮ সালে পটুয়াখালী জেলায় তিনি শ্রেষ্ঠ খামারির স্বীকৃতি পান।

প্রতিদিন ২০০ লিটার দুধ
নাসরিন জাহানের ফার্মে প্রতিদিন এখন ২০০ লিটার দুধ উত্পাদিত হয়। কোনো কোনো সময় ৩০০-৪০০ লিটার পর্যন্ত পৌঁছায়।দুধ সংগ্রহ, দুধ থেকে ক্রিম আলাদা করা ও মাঠা তৈরির কাজ স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে সম্পূর্ণ মেশিনের মাধ্যমে করা হয়। দুধ সংগ্রহ করার সময় নিজে উপস্থিত থেকে সব তদারক করেন নাসরিন। জানালেন, দুজন কর্মচারীও আছে। তাঁদের বেতনসহ সব মিলিয়ে প্রতি মাসে তাঁর খরচ প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
নাসরিন জাহানের ফার্মে প্রতিদিন ২০০-৪০০ লিটার দুধ উত্পাদিত হয়। এত দুধ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা কঠিন। কাছের মানুষদের বিনা মূল্যে দিয়েও অনেক দুধ নষ্ট হয়ে যেত। তখন একটি মিষ্টির দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কুয়াকাটা পর্যটন এলাকায় মিষ্টির দোকানটি খোলেন। তখন যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় কলাপাড়া থেকে মিষ্টি তৈরি করে কুয়াকাটায় নিয়ে বাজারজাত করা কঠিন ছিল। এ কারণে কুয়াকাটার দোকানটি কলাপাড়া শহরে নিয়ে আসেন। মিষ্টি মেলা নামে তাঁর দোকানটি এখন শহরের অভিজাত এক মিষ্টির দোকান হিসেবে পরিচিত। তাঁর দোকানে রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা, কালোজাম, রসমালাই, ক্ষীরমালাই, বেবি সুইট, লাল চমচম, সাদা চমচম, তাসনি চপ, পাটিসাপটা ও ছানা পাওয়া যায়। এ ছাড়া মেলে দই আর ঘি। মিষ্টির এই দোকান দেওয়ার আগে ২০১৪ সালে তিনি একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে মিষ্টি তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এখন তিনি অন্যদেরও মিষ্টি তৈরির প্রশিক্ষণ দেন।