বহু মানুষের প্রিয় খাদ্য শুঁটকি। শুঁটকি অনেকে কিনেও খান অনেকে আবার বাড়িতে বানিয়েও নেন। শুটকির ঝোল ভালো ভাবে রান্না করলে তা চেটেপুটে খাওয়া যায়। শুটকি তৈরি করার কিছু নিয়ম কানুন আছে যেগুলো জানা থাকলে খুব সহজেই শুটকি তৈরি ও সংরক্ষণ করা যায়। শুঁটকি বহু ব্যবসায়ী বাণিজ্যিক ভাবে তৈরী করেন। বিদেশের বহু জায়গায় শুঁটকি রফতানি হয়। বিদেশেও আমাদের শুঁটকির ভালোই চাহিদা আছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক শুঁটকি বানানোর সহজতম পদ্ধতি।
শুঁটকির কাঁচামাল বাছাই কালে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এক্ষেত্রে নষ্ট, পচা বা আংশিক পচা মাছ ব্যাবহার করা যাবে না। সদ্য আহরণ করা মাছ সংগ্রহ করতে হবে এবং পরিবহণের সময় বরফ দিয়ে পরিবহণ করতে হবে। সংগ্রহ করা মাছকে যথাযথভাবে পরিচর্যা করতে হবে। যেমন আকার অনুযায়ী মাছ বাছাই করা, মাছ কাটাই-বাছাই করার সময় ঠাণ্ডা স্থানে রাখা এবং প্রয়োজনে বরফ ব্যবহার করা, কর্মীদের হাত-পা পরিষ্কার আছে কি না তা নিশ্চিত করা ইত্যাদি। মাছ কাটাই বাছাই করার পর আবারও পরিষ্কার জল দিয়ে ধুতে হবে এবং পরিষ্কার প্লাস্টিকের পাত্রে বা পলিথিন কাগজের উপর রাখতে হবে।
মাছের তেল নিষ্কাশন ও সংরক্ষণ
মাটিতে বা ঘাসের উপর বা মাটির উপর পাটিতে বা চাটাইয়ে রেখে মাছ শুকানো যাবে না। মাছ শুকানোর জন্য অবশ্যই মশারী জাল দিয়ে ঢাকা উঁচু মাচা ব্যবহার করতে হবে। সম্ভব হলে মাছ শুকানোর জন্য উন্নত যন্ত্র যেমন রিং টানেল ড্রায়ার বা রোটারি ড্রায়ার ব্যবহার করতে হবে। শুঁটকির চাতালে যেন কোন প্রকার জীবজন্তু যেমন কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও মাছি বা অন্যান্য কীট-পতঙ্গ আক্রমণ করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মাছকে খুব ভাল করে শুকাতে হবে, যাতে মাছের দেহে জলের পরিমাণ শতকরা ১৬-১৮ ভাগে নেমে আসে। কোন পর্যায়েই কোন প্রকার ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেমন কীটনাশক, ফরমালিন ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে না।
সঠিক ভাবে শুকানো শুঁটকি সংগ্রহ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শুঁটকি যেন পোকা আক্রান্ত না থাকে এবং ভাঙ্গাচোরা শুঁটকিমাছ পরিহার করতে হবে। শুঁটকি সংগ্রহ করার সময় পরিষ্কার প্লাস্টিকের ড্রামে করে পরিবহণ করতে হবে। সংগৃহীত বা তৈরিকৃত শুঁটকি বেশীদিন সংরক্ষণ না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুঁটকি উৎপাদনের কাজে ব্যাবহার করতে হবে। শুঁটকি বাছাইয়ের সময় যেন এর গায়ে ময়লা আবর্জনা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একান্তই ময়লা আবর্জনা লেগে গেলে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যদি সংরক্ষণের প্রয়োজন পড়ে তাহলে পলিথিনের বস্তায় সংরক্ষণ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই চটের বস্তা বা চাটাই বা মাদুরে রেখে সংরক্ষণ করা যাবে না। শুঁটকি ধোয়ার সময় পরিষ্কার জল ব্যাবহার করতে হবে এবং পরিষ্কার স্থানে রাখতে হবে। মাটির হাড়ি বা মটকা অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে এবং ময়লা আবর্জনা না পড়ে এমন স্থানে রাখতে হবে। মাছের তেল দিয়ে মটকা ভেজানোর আগে তেল ভালভাবে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করা উচিৎ এতে তেলে থাকা জীবাণু ধ্বংস হবে ও শুঁটকিতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হ্রাস পাবে। হাড়ির ভিতর শুঁটকি ভর্তি করার সময় কোন ভাবেই পায়ে মাড়ানো যাবে না। ছোট মটকা বা হাড়িতে হাত দিয়ে বা লাঠির অগ্রভাগে কাপড়ের শক্ত কুণ্ডলী বানিয়ে চেপে চেপে শুঁটকি ভরতে হবে।
প্রয়োজনে পরিষ্কার লবণসহ হাড়িতে শুঁটকি সাজিয়ে ভর্তি করতে হবে। একান্তই যদি পায়ে মাড়িয়ে শুঁটকি ভরতে হয় তবে অবশ্যই পা পরিষ্কার করে পরিষ্কার পলিথিন কাগজে মুড়িয়ে পায়ে মাড়ানো যেতে পারে। মাটির হাড়ির মুখ ভালভাবে বায়ুরোধী করে বন্ধ করে গাঁজন প্রক্রিয়ার জন্য ঠাণ্ডা ও শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে এবং মাঝে মাঝে বায়ুরোধী করা অংশ পরীক্ষা করে দেখতে হবে কারণ মাটি দিয়ে বায়ুরোধী করা অংশ বেশি শুকিয়ে গেলে ফেটে যায় ফলে এর ভেতরে বাইরের বাতাস প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে। তাই কয়েকদিন পর পর সিল করা অংশটি লেপে দিতে হবে। গাঁজন সম্পন্ন হওয়ার পর পণ্যকে বায়ুরোধী পলিথিন প্যাকেটে ভরে সংরক্ষণ ও বাজারজাত করতে হবে। এতে ইঁদুর-বিড়াল ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ এবং অণুজীব সংক্রমণ ও জলীয় বাষ্প শোষণ থেকে পণ্যকে সহজেই রক্ষা করা সম্ভব হবে। এতে ক্রেতাগণ পণ্য কিনতে অধিক আগ্রহী হবে, ভোক্তার সংখ্যা বাড়বে এবং গৃহিণীরাও রান্নাঘরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে।
শুঁটকি যদি যত্ন নিয়ে বানানো যায়, তাহলে তা খেতে অনবদ্য লাগে। তবে মনে রাখা উচিত সঠিক স্থান থেকেই শুঁটকি কিনে খাওয়া উচিত। সবথেকে ভালো প্যাকেটজাত শুঁটকি কিনে খাওয়া। প্যাকেটজাত শুঁটকি ভালো ভাবে বানানো হয় বলে তা স্বাস্থ্যসম্মত এবং উপকারী।