কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কালে মৌজা গ্রামের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ফাহিম ফেরদৌস গরু পালন করে সফল হয়েছেন। সমাজ ও পরিবারের বোঝা না হয়ে গরু পালন করে নিজের আত্মকর্মসংস্থানের পথ বেঁচে নেন তিনি। গরু পালন করে লাখ টাকা আয় করছেন তিনি।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের কালে মৌজা গ্রামের দিনমজুর ফজলার রহমানের ছেলে ফাহিম ফেরদৌস। সাত বছর বয়সে দুচোখের দৃষ্টিশক্তি হারায় ফাহিম ফেরদৌস। বাবার অভাবের সংসারে তিনভাই বোন মিলে কষ্টে দিন কাটে তার। উন্নত চিকিৎসার অভাবে আর ফিরে পায়ননি চোখের আলো। বাবার কিনে দেওয়া একটি গরু দিয়ে খামার শুরু করেন। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়া সত্বেও গরু পালন করে নিজের কর্ম নিজে করছেন। অন্যের উপর ভর করে চলছেন না। বর্তমানে প্রতি বছরেই তার খামার থেকে ৩-৪ টি গরু বিক্রি করেন।
ফাহিম ফেরদৌস বলেন, বাবার কাছে আবদার করে একটি গরু দিয়ে খামার শুরু করি। এখন আমার খামারে ৬টি গরু রয়েছ। প্রতি বছর ৩-৪ টি গরু বিক্রি করতে পারি। এই গরু বিক্রি করেই সংসার চালাই।
তিনি আরো বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে গরুর দেখাশোনা শুরু হয়। গরুকে খাবার দেওয়া, খড় দেওয়া মায়ের কাজে সহযোগিতা করে সময় কাটে। আমি অন্ধ হলেও মায়ের ভালোবাসা সহযোগিতায় এতটুকু অর্জন করতে পেরেছি।
দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও সমাজের আর দশজন স্বাভাবিক মানুষের মতো চলাফেরা করে সে। গরুকে খাবার দেওয়া, গোসল করানো, অসুস্থ গরুর সেবা করা, খড় কাটা এসব করেই তার দিন কাটে। এখন তিনি আর পরিবারের বোঝা নন। ফাহিম এখন তিন ভাই-বোনের মধ্যে একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি।
ফাহিমের মা বলেন, আমার ছেলেটি অন্ধ। চোখে না দেখলেও অন্য সবার মতো স্বাভাবিক চলাফেরা করে। যেকোনো কাজ একবার বুঝিয়ে দিলে সে সহজে বুঝতে পারে। ফাহিম আমাদের কাছে একটি গরু কিনে দেওয়ার আবদার করেছিল। তারপর আমরা তাকে একটি গরু কিনে দেই। সেই একটি গরু দিয়েই সে আজ এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে। দোয়া করি ফাহিম যেন দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায়।
প্রতিবেশী আমেনা বেগম বলেন, ফাহিম খুব ভালো ছেলে। সারাদিন গরু লালন পালনে কঠোর পরিশ্রম করে। আমি ফাহিমের মঙ্গল কামনা করছি। ফাহিমকে দেখে অনেকে গরুর পালন করে সফল হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. ইউনুছ আলী বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ফাহিমের এই এগিয়ে যাওয়াকে সাধুবাদ জানাই। ফাহিমের মতো এভাবে উদ্যোক্তা তৈরি হলে দেশে আর বেকারত্ব বলে কিছু থাকবে না। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ফাহিমকে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা করা হবে।
সূত্র: আধুনিক কৃষি খামার