খামারিরা তো বটেই, যাদের বাড়িতে দু-একটি গাভী আছে তাঁরাও এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। সুন্দর নাদুসনুদুস একটা বাছুর হয়েছে, স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পরও ফুল পড়ছে না। এ নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই। অভিজ্ঞ খামারি ছাড়া বাকিরাও বুঝতেও পারেন না, এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন।

ফুল আটকে গেলে কিন্তু মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। এমনকি গাভী মারাও যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যা নিয়েই এই আর্টিকেলটি। এটি নতুন খামারিদের জন্য সহায়ক হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

এখানে যেসব টপিক নিয়ে আলোচনা থাকছে:

 

  • গাভীর গর্ভফুল কী? গাভীর গর্ভফুলের কাজ কী?
  • গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়া কাকে বলে?
  • গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়া ফলে কী সমস্যা হয়?
  • গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়ার কারণ
  • গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়ার লক্ষণ

 

গাভীর গর্ভফুল কী?

এনডোমেট্রিয়াম ও করিয়ন এর সংযোগকারী অঙ্গের নাম প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল। সাধারণত গাভীর গর্ভধারণের ৩২ দিন পর থেকেই গর্ভফুলের কার্যক্রম শুরু হয়।

গাভীর গর্ভফুল নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত বলা যাক:

গাভী কনসিভ করার পরে ভ্রূণকে সুরক্ষা ও বৃদ্ধির জন্য গাভীর শরীরে কিছু জৈবিক প্রক্রিয়ার পরিবর্তন ঘটে।

প্রথমত জরায়ুর মুখে সার্ভিক্যাল প্লাগ তৈরি হয়ে ভ্রুণকে বাইরের যাবতীয় জীবাণু ও বিপদ আপদ থেকে সুরক্ষা দেয় ।

 

 

দ্বিতীয়ত করপাস লুটিয়াম অটুট অবস্থায় থেকে ওভারিতে (ডিম্বাশয়) এই সিগন্যাল দেয় যে জরায়ুতে বাচ্চা রয়েছে ।

 

 

এছাড়া প্রোজেস্টেরন হরমোন নিঃসৃত হয়। এর ফলে গাভীর ওভারি থেকে আর কোনো ফলিকল বা ডিম্বাণু ওভুলেশন (ডিম্বস্ফোটন ডিম্বাণু নিঃসরণ) করে না।

এইভাবে গর্ভবতী গাভীর ইস্ট্রাস সাইকেল বন্ধ থাকে ।

গাভী সিমেন গ্রহণের প্রায় দুই সপ্তাহ পরে ভ্রূণের থেকে পার্টিশন হয়ে প্লাসেন্টা বা গর্ভফুল/অমরা তৈরি হয়।

তখন থেকে ভ্রুণটি প্লাসেন্টার মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি গ্রহণ করে থাকে। প্লাসেন্টার ভেতরে গাভীর শরীর থেকে রক্ত প্রবাহিত হয়।

এই রক্তের সাথে মিশ্রিত থাকে অক্সিজেন গ্লুকোজ, এমাইনো এসিড এবং বিভিন্ন ধরনের মিনারেল ।

ভ্রুণ তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি আম্বিলিক্যাল কর্ডের (নাড়ি) মাধ্যমে প্লাসেন্টা থেকে গ্রহণ করে এবং দেহে উৎপাদিত সব বর্জ্য পদার্থ ওই নাড়ির মাধ্যমে প্লাসেনটাতে জমা করে ।

বাছুরের ফুসফুস আস্তে আস্তে গঠিত হয় কিন্তু এটা শ্বাস প্রশ্বাসের কোনো কাজ করে না।

এর বদলে গর্ভফুল থেকে পাওয়া অক্সিজেন বাছুর ব্যবহার করে ।

তাই বাছুর জন্মের সাথে সাথে নাক মুখের আঠালো পদার্থ পরিষ্কার করে শ্বাস প্রশ্বাস চালু করতে হয়।

এছাড়া বাছুর যে প্রস্রাব করে সেটি পানিপাতার (amniotic fluid) ভেতরে জমা থাকে । কিন্তু ইহা সাধারণত পানি ছাড়া আর তেমন কিছু থাকে না।

গরুতে বাচ্চা প্রসবের পর সাধারণত ৬–১২ ঘণ্টার মধ্যে গর্ভফুল পড়ে যায়। এর চেয়ে বেশি সময় লাগলে তখন তাকে গর্ভ ফুল আটকে যাওয়া বলে।

এই গর্ভফুল যদি ভেতরেই থেকে যায় তবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ হয়ে গাভীর জরায়ুর ভেতরে ইনফেকশনের সৃষ্টি হয়। এই ইনফেকশন বা সংক্রমণের কারণে গাভীর দেহে নানা শরীরবৃত্তীয় জটিলতা দেখা দেয়। সংক্রমণজনিত কারণে গাভী খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দেয় এবং দুধ উৎপাদন কমে যায়। পরবর্তীতে প্রজনন ক্ষমতাও কমে যায়।

গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়া কাকে বলে?

গর্ভফুল পরে যাওয়ার স্বাভাবিক সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১২-২৪ ঘণ্টা। বাচ্চা প্রসবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে গর্ভফুল না পড়লে গর্ভফুল আটকে গেছে (Retained Placenta) বলে ধরে নিতে হবে। দুর্বল ও উন্নত জাতের গাভীতে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।

গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়া ১৯টি কারণ

১. প্রসবের পর বাচ্চাকে সরাসরি ওলান থেকে শাল দুধ চুষে না খাওয়ালে।

২. গর্ভাবস্থায় গাভীর শরীরে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ভিটামিন এ.ডি.ই ও মিনারেলের অভাব হলে।

৩. রক্তে ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব ও অপুষ্টি হলে।

৪. বিভিন্ন জীবাণুর আক্রমণ হলে।

৫. অপরিপক্ব গর্ভফুল আটকে যেতে পারে ।

৬. গাভীর অপরিপক্ব প্রসব।

৭. গর্ভকালীন কাঁচা ঘাস ও সুষম খাদ্য না খাওয়ালে।

৮. গাভীর শরীরে বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে।

৯. নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে বাচ্চা প্রসব করলে।

১০. জোরপুর্বক বাচ্চা টেনে হিচড়ে বের করলে অর্থাৎ কষ্ট প্রসব বা প্রসবে বিঘ্ন ঘটলে

১১. গাভীর শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবের কারণে।

১২. কোনো কারণে গাভীর স্বাস্থ্যহানী ঘটলে।

১৩. যমজ বাচ্চা হলেও গর্ভফুল আটকে যায়।

১৪. গর্ভবতী গাভীতে ছত্রাক সংক্রমণ জনিত রোগ ভিব্রিওসিস বা যক্ষ্মা হলে।

১৫. জরায়ুর মাংশপেশীর সঙ্কোচনহীনতা।

১৬. মরা বাছুর হওয়া।

১৭. অতিরিক্ত গরম-ভ্যাপসা আবহাওয়াতে, ডেলিভারি হওয়া।

১৮. গাভীর অ্যাবরশন হওয়া বা, অ্যাবরশনের হিস্ট্রি থাকা।

১৯. ডেলিভারিতে অনেক লম্বা সময় লাগা বা, অনেক কষ্ট হওয়া। ইত্যাদি।

গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়ার লক্ষণ

১. স্বাভাবিক সময়ের ( ৬–১২ ঘণ্টা) মধ্যে গর্ভফুল না পড়া হলো অন্যতম প্রধান লক্ষণ।

২. বাচ্চা প্রসবের পর গর্ভফুলের অর্ধেকটা বের হয়ে নিচের দিকে ঝুলে থাকে।

 

 

৩. গাভীর অল্প জ্বর, অস্বস্তি বোধ ও খাওয়ায় অরুচি দেখা যাবে।

 

 

৪. গর্ভফুল বের করার জন্য বারবার কোঁথ দিবে ফলে জরায়ু বের হয়ে আসতে পারে।

৫. ভ্যাজাইনাল ও জরায়ুর প্রোলাপস (স্থানচ্যুতি) হতে দেখা যায়।

৬. প্রসাব করার সময় দুর্গন্ধ হবে ও দুধ কমে যাবে।

 

৭. জীবাণু দ্বারা আক্রন্ত হলে জ্বর থাকবে এবং খাবে না।

গাভীর গর্ভফুল বের করার নিয়ম

১. প্রথমত এটাকে টেনে বের করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকবেন।এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি চিকিৎসকের সহায়তায় আটকে যাওয়া গর্ভফুল অপসারণ করে গাভীকে তার পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা দিবেন। কোনো ভাবেই হাত দিয়ে টানাটানি করা যাবে না, কারণ এতে গাভী বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে।

২. গর্ভফুল হাত দিয়ে টেনে বের করা যাবে না। এতে গর্ভফুলের ১০০% বের করা সম্ভব হয় না বরং হাত দিয়ে বের করলে জরায়ুতে ক্ষতের সৃষ্টিসহ সেপ্টিক ম্যাট্রাইটিস, পায়োমেট্রা, রক্তক্ষরণ, স্থায়ীভাবে গর্ভধারণ ক্ষমতা নষ্ট হওয়া এমনকি জরায়ু প্রদাহে আক্রান্ত হয়ে গাভীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যদি হাত দিয়েই গর্ভফুল বের করার একান্ত প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই বাচ্চা প্রসবের কমপক্ষে তিন দিন পর অভিজ্ঞ ভেটেরিনারি ডাক্তার দিয়ে বের করা উচিত।

প্রসবের তিন দিন পর গর্ভফুল খুব সহজে বের করা যায়। কারণ জরায়ুর মাংশপেশীর সঙ্কোচন হতেই সময় লাগে ৪৮ ঘণ্টা। গর্ভফুল বের করার পর Oxytetracyclin অথবা Penicillin গ্রুপের ওষুধ এআই টিউবের মাধ্যমে জরায়ুতে প্রয়োগ করতে হবে ৩-৫ দিন। ১০-১৫ দিন পর আবার ডাক্তারকে দিয়ে জরায়ু পরীক্ষা করতে হবে- জরায়ুতে প্রদাহ হয়েছে কি না। আর যদি গর্ভফুল আটকে যাওয়ার পরেও গাভীর খাওয়া দাওয়া, চলাফেরা, তাপমাত্রা সব কিছুই স্বাভাবিক থাকে তাহলে হাত দিয়ে বের করার দরকার নেই।

৩. যেহেতু গর্ভফুল পড়ার স্বাভাবিক সময় ২৪ ঘণ্টা, অতএব ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তারপর চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে। বাইরের ঝুলন্ত অংশ যতদূর সম্ভব টেনে ধরে কেটে দিন।

প্রসবের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেসব ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে

ইনজেকশন: পিটোন–এস, মাএা: ১০–২০ আই ইউ। মাংসে দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফুল না পড়লে আবার পিটোন –এস একই মাত্রায় মাংসে দিতে হবে। সাথে ইনজেকশন: মিথার স্পেন, মাত্রা–১-৫ গ্রাম। গাভীর মাংসে দিতে হবে।

যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গর্ভফুল না পড়ে তাহলে বাইরের ঝুলন্ত অংশ যতদূর সম্ভব টেনে ধরে কেটে দিতে হবে এবং জীবাণুনাশক ও গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

অথবা, অক্সিটোসিন বা প্রোস্টাগ্লাডিন হরমোন ইনজেকশন (PG) মাংসে দিলে দ্রুত গর্ভফুল পড়ে যায়। অক্সি-টেট্টাসাইক্লিন ট্যাবঃ ও মেট্রোনিডাজল ট্যাবঃ দুটি করে একত্রে গুঁড়া করে Uto-pessury হিসেবে জরায়ুতে প্রয়োগ করতে হবে পরপর ২-৩ দিন। কয়েক দিনের মধ্যেই গর্ভফুল আপনা আপনি পচে বের হয়ে যাবে জরায়ুর কোনো ক্ষতি ছাড়াই। তবে এক্ষেত্রে ইউট্রোকেয়ার সিরাপ খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।

অথবা, inj: Renamycin-100. এআই টিউবের মাধ্যমে ৪০ সিঃসিঃ করে ৩/৪ দিন দিতে হবে। সাথে syr: UTROCARE 450ml করে দিনে ২ বার খাওয়াতে হবে ২/৩ দিন।

U-Flash / Super Womb / বা গাভীর গর্ভফুল বের হতে কার্যকরী আরো অনেক ওরাল সাসপেনশন / লিকুইড ফিড প্রিমিক্স বাজারে আছে সেগুলোও খাওয়ানো যেতে পারে।

জরায়ুতে সংক্রমণ থাকলে ট্রাইজেক্ট ভেট / ট্রাইজেক্ট ভেট ইনজেকশন অথবা মারবো ভেট ইনজেকশন গাভীর মাংসপেশীতে প্রয়োগ করতে হবে।

গাভীকে ক্যালসিয়াম ইনজেকশন শিরায় প্রয়োগ করতে হবে।

ভ্যাজাইনার চারিদিকে জীবাণুমুক্ত করে তারপিন তেল লাগিয়ে দিতে হবে এতে মাছির উপদ্রব কম হয়।

 

 

শরীরের তাপমাএা স্বাভাবিক থাকলে ক্যালসিয়াম ফোর্ট এম ২৫০ মিলি মাত্রা ১০০–২০০ মিলি ধীরে ধীরে শিরায় দিতে হবে।

গাভীকে পরিমাণমতো স্যালাইন দিতে হবে।

গাভীর গর্ভফুল বের করার ক্ষেত্রে সতর্কতা

১. গর্ভ ফুল ঝুলে থাকলে, ৪–৫ ইঞ্চি রেখে কেটে দিতে হবে।

২. যোনিদ্বারের চতুর্দেকে তারপিন বা সরিষার তেলে ৩–৪টি রসুনের কোয়া ছেঁচে একটু গরম করে লাগাতে হবে

৩. ৪–৫ দিনের আগে হাত দিয়ে ফুল বের করা যাবে না। এক্ষেত্রে ভেটেরিনারি সার্জনের সহায়তা নিতে হবে।

৪. জ্বর থাকলে জরায়ুতে হাত দেওয়া যাবে না।

গর্ভফুল আটকে থাকা প্রতিরোধের জন্য করণীয়

১. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, কোনো সমস্যা না হলেও , লক্ষ্য রাখতে হবে যে, গাভীর মেট্রাইটিস বা টক্সেমিয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে কি না । কারণ, এ দুটি অবস্থাতেই গাভীর জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে ।

২. গাভী গর্ভবতী থাকা অবস্থায় তার খাদ্যে নিয়ম অনুযায়ী ভিটামিন এ, ই এবং সেলেনিয়াম সরবরাহ করলে এই গর্ভফুল আটকে যাওয়ার সমস্যাটি অনেকাংশেই কমে যায়। আর যেসব গাভী পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস খায় সে সমস্ত গাভীর এই সমস্যাটি খুব একটা দেখা যায় না।

৩. গাভীর দুগ্ধবিহীন সময় বা dry cow management নিশ্চিত করতে হবে।

৪. পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।

৫. গাভীর বাসস্থান সবসময় শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখতে হবে।

৬. গর্ভাবস্থায় গাভীকে দৈনিক ১০-২০ কেজি কাচা ঘাস ও প্রয়োজনীয় মাত্রায় সুষম দানাদার খাবার এবং দৈনিক ০.১ পিপিএম সেলিনিয়াম+ ভিটামিন এডি৩ই খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি দৈনিক কমপক্ষে ১ ঘণ্টা ব্যায়াম (হাঁটা চলা) ব্যবস্থা করতে হবে এবং নিয়মানুযায়ী কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে।

৭. প্রসবের পর বাচ্চাকে সরাসরি বাট থেকে শাল দুধ চুষে খাওয়াতে হবে। তাহলে গাভীর রক্তে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসরণ বেড়ে যায় এবং গর্ভফুল পড়তে সহায়তা করে।

৮. বাচ্চা প্রসবের আধা ঘণ্টার মধ্যে ১০-১৫ লিটার কুসুম গরম পানির সাথে আধা কেজি পুরাতন আখের গুড় মিশিয়ে খাওয়াতে হবে এবং অক্সিটোসিন জাতীয় ওষুধ যেমন inj: Oxcin 5ml. মাংসে দিলে দ্রুত গর্ভফুল পড়ে যায়।

৯. পাশাপাশি গর্ভফুলের বাইরের ঝুলন্ত অংশের সাথে আধা কেজি ওজনের ইট বা কাঠের টুকরা বেঁধে দিলে গর্ভফুল পড়তে সহজ হয় এবং প্রসবের ৪ ঘণ্টা পর Syr: Utrocare or Utroclean 500ml. খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

১০. এক কথায়- ভিটামিন, খনিজ এবং হরমোনের তারতম্য জনিত সমস্যার কারণে এটা হয়ে থাকে। গাভীর জন্য যে খাদ্য সরবরাহ করা হয় তাতে যথাযথ পরিমাণে ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ এবং মিনারেলস বা খনিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করলে গর্ভফুল পড়া নিয়েও খামারিরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।

গাভীর গর্ভফুল না পড়লে প্রতিকার কী

১. রিটেইন্ড ফিটাল মেমব্রেন যাতে না হয় সেজন্য আগে থেকেই গাভীর ভিটামিন ই, সেলেনিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করতে হবে । রিটেইন্ড ফিটাল মেমব্রেন হয়ে গেলে, ক্যালসিয়াম-ভিটামিন দিয়ে কোনো লাভ নেই ।

২. অনেক খামারি এবং ডাক্তার গাভীর জরায়ুতে পেসারি এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করে থাকেন । এতে কোনো লাভই হয় না বরং গর্ভফুল পড়তে আরও বেশি সময় লাগে। কারণ রিটেইন্ড ফিটাল মেমব্রেনটি পচে বের হয়ে আসতে হবে আর জরায়ুতে দেওয়া অ্যানটিবায়োটিক এই পচন প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়।

 

 

৩. আগে হাত দিয়ে গর্ভফুল বের করার কথা বলা হলেও, এখন বলা হচ্ছে যে এতে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়। অর্থাৎ মেট্রাইটিস এবং টক্সেমিয়া গর্ভফুল পচার কারণে নিঃসৃত টক্সিন রক্তে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। কেবল পচা গর্ভফুলের দুর্গন্ধ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়ার জন্য গাভীর জরায়ুর ভেতর থেকে বের হয়ে থাকা অংশটুকু কেটে ফেলতে বলা হয়।

৪. প্রতিকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো গাভীকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা এবং মেটরাইটিস বা টক্সেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাথে সাথেই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পেনিসিলিন বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন এবং মেট্রোনিডাজল-এর কোর্স শুরু করা ।

৫. মনে রাখা জরুরি, মেট্রাইটিস বা টক্সেমিয়া না হলে ২ থেকে ১১ দিনের মধ্যে গর্ভফুল পচে পড়ে যাবে এবং কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই ।

শেষ কথা

গাভীর গর্ভফুল আটকে যাওয়ার কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে ধারণা থাকলে এ সমস্যা বহুলাংশে এড়ানো সম্ভব। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই রোগটি মিল্ক ফিভার (milk fever) ও ডিসটোসিয়া (dystocia) এর সাথে সম্পৃক্ত। এটি একটি গবাদি পশুর প্রজনন তন্ত্রের রোগ। ফলে সচেতন হয়ে আগে থেকেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।