মোঃআল আমিন (কুমিল্লা)
প্রত্যেক সফল মানুষেরই জীবনে একটি গল্প থাকে। তাকে ওই সফলতার জন্য অনেক কষ্ট ও চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হয়। তেমনি সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছেন, এমন একজন শিক্ষিত উদ্যমী যুবক। তিনি হলেন কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার আমড়াতলী ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামের বাসিন্দা আবু রাজিব মারুফ ।উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও এগিয়ে এসেছেন ডেইরি খামার ব্যবসায়। তিনি নিজ উদ্যোগে প্রায় ৬ একর জমির উপর এফ আর এগ্রো ফার্ম গড়ে তোলেন।
মারুফ তার খামার সার্বক্ষনিক ভাবে দেখাশুনা করার জন্য প্রায় ২৬ জন লোক নিয়োজিত আছেন । বর্তমানে তার খামারে শাহীওয়াল,হলেস্টাইন ফিজিয়ান,জার্সি জাতের ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২৭৭টি গবাদি পশু রয়েছো ।বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী গরুগুলো কে আলাদা আলাদা শেডে রাখা হয়। তিনি নিয়মিত গাভীকে খাবার দেন ও গাভীর পরিচযা করেন।তিনি গাভীর খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন ৭০০-৮০০ কেজি খাদ্য প্রদান করে থাকেন এবং বাহিরের কোন খাবার তিনি তার গরুকে খাওয়ান না। তিনি গরুর খাদ্য তালিকায় নিয়িমিত নিম্নোক্ত উপাদান গুলো ব্যবহার করে থাকেনঃ
গমের ভূষি-২২০কেজি
সয়াবিনের ভূষি-১৫০ কেজি
সয়ামিল -১০০ কেজি
সরিষার খৈল-৫০ কেজি
ভুট্টা -১৫০কেজি
চালের কুড়া-৭০ কেজি
লাইম স্টোন-২০ কেজি
ডিসিপি-২.৫ কেজি
লবন-৫ কেজি
কালোজিরা-৫০০ গ্রাম
তাছাড়া মারুফ তার খামারের পাশে কয়েকটি জমিতে জার্মান নেপিয়ার,জারা,ও পাংচং জাতের ঘাসের চাষ করেন এবং এই উৎপাদিত ঘাস নিয়মিত গরুকে খাওয়ান।মারুফ আরও জানান যে তার খামার থেকে তিনি প্রতিদিন ৬০০-৬২০ লিটার দুধ সংগ্রহ করেন এবং স্থানীয় বাজারে ৫০টাকা হিসাবে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করে থাকেন।
মারুফ বলেন দুধ বিক্রির পাশাপাশি তিনি গরুর মাংস বিক্রি করে থাকেন ,অর্থাৎ বিভিন্নি বিয়ে,সামাজিক অনুষ্ঠান এবং স্থানীয় বাজারের হোটেলগুলুতে গরুর মাংস বিক্রি করে থাকেন।
তিনি আরও বলেন খামার নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ওতদারকি করার কারনে তার খামারে গরুর বড় ধরনের রোগ দেখা দেয় নাই। তবে বাচ্চা গরুর মাঝে মাঝে জ্বর,পেট ফাপা,খাবারে অরুচি দেখা দেয় এর ফলে তিনি উপজেলা প্রাণিস্পদ অফিসের সহযোগীতায় তার গরুগুলো কে সুস্থ করে তোলেন। জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সহায়তায় তিনি গরুগুলোকে ভ্যাকসিন দিয়ে থাকেন ।
এছাড়া ও তিনি নিজের জমিতে জার্মান নেপিয়ার,জারা ও পাংচং জাতের ঘাস উৎপাদন করেন। খামারটিতে পর্যাপ্ত ঘাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।যারা ডেইরি ফার্ম করতে চান তাদের অবশ্যই গরু কেনার আগেই ঘাস লাগানো উচিত। কাঁচা ঘাসের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস দানাদারের উপর চাপ কমিয়ে খামারের খরচ কমাতে সাহায্য করবে। যে সমস্যা গুলো পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস থাকলে খামারিরা খুব সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারে।
তার খামারে দুই সারি টেল টু টেল সিস্টেমে করা শেড টি যথেষ্ট উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে যাতে করে আলো বাতাসের কোন ঘাটতি না থাকে। দুই সারির মাঝখানে মানুষ চলাচলের জন্য জায়গা এবং গরুর মলমূত্র ও গোসলের পানি প্রবাহের জন্য ড্রেন রাখা হয়েছে যেটার সংযোগ চলে গিয়েছে বাহিরে একটা গর্তে। পায়ের সামনে দেড় ফিট উঁচু দেয়াল করে মেঝের লেবেলেই খাবার ও পানি দেয়া হয়।প্লাস্টিকের বালতিতে দানাদার খাবার সরবরাহ করা হয়।
ভেতর-বাইর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন সব সময়। এ ছাড়া মশা-মাছি আর পোকা-মাকড় প্রতিরোধেরও ব্যবস্থা আছে। গরুর খাবার নিয়ে বললেন, ‘প্রতিদিন কাঁচা ঘাস, খড়, ভুসি, ভুট্টা, খৈল খাওয়ান এতে করে বাজার থেকে খাবার বেশি কিছু কিনতে হয় না।
মারুফ বলেন যে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পুরনের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য্ গবাদি পশুর খামারের বিকল্প নেই।এর ফলে পারিবারিক আমিষের চাহদা পুরনের পাশা পাশি বাজারে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া যায়।
প্রতিবেদনকারীঃ
মোঃআল আমিন
কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
কুমিল্লা।