রুচিবর্ধক খাবারগুলোর মধ্যে শুঁটকি মাছ অন্যতম। বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী এই শুঁটকি মাছ পছন্দ করেন। বর্ষা মৌসুমে হাওর-বাঁওড়, নদী বা সমুদ্রে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা পড়ে। সব মাছ বিক্রি করা সম্ভব হয় না। এর অধিকাংশ প্রাকৃতিক উপায়ে অর্থাৎ রৌদ্রে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হয়। তাই মাছের দেহের পানি বা তরল অংশ শুকিয়ে যায়। এছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নতমানের শুঁটকি প্রস্তুত করা হয়। ফলে এ মাছে কোনো জীবাণু জন্মাতে পারে না। দেশ বিদেশে শুঁটকি মাছের একটি ভালো বাজার তৈরি হয়েছে। প্রায় সববাজারে শুঁটকি মাছ বিক্রি হয়। এতে ভিটামিন ‘ডি’ এর পরিমাণ রয়েছে পর্যাপ্ত, যা হাড়, দাঁত, নখের গঠন মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া টাটকা মাছ থেকে শুঁটকি মাছে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই গুরুত্ব বিবেচনায় আপনিও এ ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে পারেন।
সুবিধা
তুলনামূলক কম পুঁজি লাগে
লাভ বেশি
সহজে নষ্ট হয় না। দীর্ঘ সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা যায়
বছরব্যাপী বিক্রি করা যায়
বাজার সম্ভাবনা
যে সব অঞ্চলে বেশি পরিমাণ মাছ ধরা পড়ে সেখানে মাছ শুঁটকি ব্যবসা লাভজনক হতে পারে। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় উৎপাদিত শুঁটকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। আমাদের দেশের উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছের শুঁটকি মধ্যপ্রাচ্য, পাকিস্তান, চীন, হংকং, জাপান, চীন, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, রাশিয়াসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ এবং আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে শুঁটকির জনপ্রিয়। শুঁটকি শুধু সুস্বাদু খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, দেশের পোলট্রি ও মৎস্য খামারেও এর ব্যবহার চোখে পড়ে।
বিভিন্ন প্রকার মাছের শুঁটকি
জনপ্রিয় শুঁটকি মাছ সাধারণত লইট্টা, রূপচাঁদা, কোরাল, লাক্ষ্যা, সুরমা, পোপা, ফাইস্যা, কাতরা, বিসা, রিঠা, কাইক্যা, বাচা, চান্দা, চিংড়ি, ইলিশ, শোল, পুুটিসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণ হয়। সারা বছর সাগর থেকে মাছ ধরা হলেও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ করা হয় অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত।
শুঁটকি তৈরি
কুয়াকাটা, দুবলারচর, বাঁশখালী, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ, সোনাদিয়া, রাঙ্গুনিয়া, খুরুশকুল, ঘোরকঘাটা, চকোরিয়া, সেন্টমার্টিন, নাজিরের টেক, সোনারচর, কক্সবাজার, আশারচরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে শুঁটকি শুকানো হয়।
পুঁজি
২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন। এ ব্যবসায় খুব বেশি স্থায়ী উপকরণের প্রয়োজন হয় না। পুঁজির পরিমাণের উপর নির্ভর করে কাঁচা মাছ কিনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে শুকিয়ে বছরব্যাপী বিক্রি করা যায়।
লাভ
ভোজনরসিকদের কাছে অতিপ্রিয় ও সুস্বাদু এসব শুঁটকি অতি উচ্চমূল্যে বেচা হয়। তিন কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে এক কেজি শুঁটকি তৈরি হয়। প্রকার ভেদে শুঁটকির দাম ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত হয়।