সামছুল আলম
ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা ২০২২-২৩ অর্থবছরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থা পর্যায়ের অফিসের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে বাস্তবায়িত ন্যূনতম একটি উদ্যোগ পরিদর্শনের নিদের্শনা ছিল। এ লক্ষ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের ইনোভেশন টিম গত ২৪ মে (বুধবার) নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলায় ১টি উদ্যোগ পরিদর্শন করে।
সরেজমিন পরিদর্শনে জানা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন ২০২০ সালে IOT ( Internet of Thing) ভিত্তিক পানির গুণাগুণ পরিমাপক স্মার্ট ডিভাইস আবিষ্কার করেন। উদ্ভাবনের যুক্তিকতা হিসেবে তিনি বলেন, নিবিড় প্রক্রিয়ায় মাছ চাষের ফলে পানির দূষণ বেড়ে যায়, এই দূষণকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা দরকার। তাছাড়া বিদ্যমান পদ্ধতিতে পানির ভৌত ও রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যসমূহ জানা ব্যয়বহূল ও সময় সাপেক্ষ। এছাড়া বিদ্যমান শ্রম-নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার চেয়ে প্রযুক্তি নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা সময়, শ্রম, জ্বালানী সাশ্রয়ী ও অধিক উৎপাদনশীল হবে। এ ধরনের উদ্ভাবন চাষীরা ব্যবহার করলে, সার্বক্ষণিক তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করে চাষীর পক্ষে সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা সম্ভব হবে। ফলে অনাকাঙ্খিত ক্ষতির হাত থেকে বিনিয়োগের সুরক্ষা হবে। তিনি বলেন, এই উদ্ভাবনটি মাঠ পর্যায়ে ব্যবহার করা গেলে মৎস্য চাষের বর্তমান ধারাকে টেকসই ও অব্যাহত রাখতে পারবে। এর মাধ্যমে একটি গতিশীল বাস্তু-সংস্থানিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে পানির বিভিন্ন ধরনের ভৌত-রাসায়নিক মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যাবে। তিনি আরো বলেন, মাছের সঠিক বৃদ্ধি অনেকাংশে পানির গুণাগুণের উপর নির্ভরশীল। জলাশয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য ব্যাহত হলে মাছ সহজেই রোগাক্রান্ত হতে পারে বা মাছের মড়ক দেখা দেয়। সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য না পাওয়ার ফলে বেশির ভাগ সময় রোগবালাই/মড়কে আক্রান্ত হয়ে মাছ মারা যায়। ফলে বিনিয়োগকৃত অর্থের সুরক্ষা নিশ্চিত হয় না।
উদ্ভাবনটি কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে উদ্ভাবক বলেন, যন্ত্রটির ব্যবহার মূলত অ্যান্ড্রয়েট মোবাইল ফোন ব্যাজড। এটি ব্যবহার করতে গেলে একটি মোবাইল ফোন এবং এর সাথে ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। পাশাপাশি মোবাইল ফোনে একটি সফটওয়্যার ইনস্টল করে নিতে হবে, যার মাধ্যমে পুকুরের পানির বিভিন্ন প্যারামিটার যেমন পানির পিএইচ, তাপমাত্রা, অক্সিজেন লেভেল এবং অ্যামোনিয়ার মাত্রা কি পরিমান আছে তার তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাষির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের পর্দায় চলে আসবে এবং উল্লেখিত প্যারামিটারগুলো নির্দিষ্ট মাত্রার উপরে বা নিচে চলে গেলে অ্যালার্ম বাজতে থাকবে। অ্যালার্ম বাজার পরও চাষী সতর্ক না হলে ডিভাইসের সাথে সংযুক্ত প্যারামিটার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যাবে। উদাহরন দিতে গিয়ে তিনি বলেন, যদি কোন পুকুরের পানির অক্সিজেন এর লেভেল যদি ৪ মি.গ্রাম/লিটার এর নিচে নেমে যায় তাহলে চার মোবাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মেসেজ চলে আসবে ডিভাইসে সংযুক্ত এরেটর চালু করার জন্য। পরবর্তীতে চাষী মোবাইলের সুইচের মাধ্যমে বা ম্যানুয়ালি এরেটর চালু করতে পারবে।
উদ্ভাবনটি সম্পর্কে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.আলমগীর হোসেন বলেন, উদ্ভাবনটি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করে সাশ্রয়ীমূল্যে সারা দেশে চাষীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে বাংলাদেশে মৎস্য খাতে উল্লেখযোগ্য হারে উৎপাদন বাড়াবে এবং সময়, যাতায়াত, খরচ কমানোর পাশাপাশি চাষীর নানা ভোগান্তি কমাবে। এতে উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে। ফলে দেশে বেকারত্ব হ্রাস পাবে এবং পুষ্টি চাহিদাও পূরণ হবে।
গণযোগাযোগ কর্মকর্তা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়
০১৭৪৬৭৪৯০২০