এই হ্যাচারির কর্মকর্তা–কর্মচারীর ২৭টি পদের মধ্যে ১৭টিই শূন্য। প্রতিষ্ঠানটি খুলনা বিভাগে রেণু ও পোনার চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ করছে।
নেই পর্যাপ্ত জনবল। বসার জন্য ভালো কার্যালয়ও নেই। পুকুরপাড়ের সড়কবাতিও জ্বলে না। এত সমস্যা থাকার পরও খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় মাছ চাষের জন্য রেণু ও পোনার চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ করে আসছে এই প্রতিষ্ঠান। এগুলো বিক্রিও হচ্ছে সুলভ মূল্যে।
কম দামে উন্নত মানের রেণু ও পোনা কিনে উপকৃত হচ্ছেন মাছচাষিরা। এ বিভাগে মাছ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসা সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি ঝিনাইদহ কোটচাঁদপুরে। এর নাম বলুহর কেন্দ্রীয় মৎস্য হ্যাচারি।
বলুহর কেন্দ্রীয় হ্যাচারি সূত্র জানায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মাছের হ্যাচারি ও মাছচাষিদের কার্পজাতীয় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ১৯৮৪ সালে কোটচাঁদপুর উপজেলার বলুহর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয় দেশের বৃহত্তম এই হ্যাচারি। ১০৩ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত এই হ্যাচারিতে রয়েছে ৩০টি পুকুর। এসব পুকুরে নিয়মিত মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ চীন ও ভিয়েতনাম থেকে রেণু আমদানি করে মাছের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে বিক্রি করছে।
হ্যাচারির এক কর্মকর্তা জানান, কয়েক বছর আগে লোকবল–সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছিল। হ্যাচারির ভবনগুলো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছিল। পুকুরগুলোও ঠিকমতো ব্যবহার করা যাচ্ছিল না।
২০২০ সাল থেকে হ্যাচারিটি আবার ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। হ্যাচারির ব্যবস্থাপক আশরাফ-উল-ইসলাম যোগদানের পর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলছে। খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় তারা নিয়মিত রেণু, পোনা ও ব্রুড মাছ প্রজননক্ষম মাছ সরবরাহ করছে। প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সম্প্রসারণমূলক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় এলাকায় কার্প হ্যাচারির প্রসার ঘটেছে। শুধু যশোর ও ঝিনাইদহ জেলায় দুই শতাধিক কার্প প্রজাতির মাছের হ্যাচারি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে এই হ্যাচারিতে সরকার–নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্র অর্জনে সক্ষম।
হ্যাচারি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এই হ্যাচারি থেকে ৪৮ লাখ ১১ হাজার টাকার রেণু, পোনা ও ব্রুড মাছ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ৪৮ লাখ ১১ হাজার টাকা। হ্যাচারি কর্তৃপক্ষ ৪৮ লাখ ১৫ হাজার টাকার রেণু, পোনা ও ব্রুড মাছ বিক্রি করে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। এর আগের অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৬ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। ওই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৪৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার রেণু, পোনা ও ব্রুড মাছ বিক্রি হয়েছে। এখানে সরকার–নির্ধারিত মূল্যে প্রতি কেজি রেণু ১ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
মৎস্য হ্যাচারির কর্মকর্তারা জানান, এখানে বর্তমানে ২৭টি পদের মধ্যে ১৭টি শূন্য। এর মধ্যে সাতজন দক্ষ ফিশারম্যান থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র দুজন। চারজন পাম্প অপারেটরের স্থানে আছেন একজন। এ ছাড়া এখানে দুজন ঝাড়ুদার এবং একজন করে হ্যাচারি অ্যাটেনডেন্ট ও অফিস সহায়ক কর্মরত।