28/11/2021, Desk report:
দেশে বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গরুর খামার। লাভজনক হওয়ায় প্রতিদিনই নতুন নতুন উদ্যোগতা যুক্ত হচ্ছে খামার ব্যবসায়। সফলতা পাচ্ছেন অনেকেই। এমনই এক সফল খামারি হচ্ছেন কুমিল্লা জেলার বুড়িরচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ভবেরমুরা গ্রামের খায়রুল বাসার। উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও সরকারি -বেসরকারি কোন চাকরি না করে ঝুকেছেন খামার ব্যবসায়। এতে তিনি সফলতাও পেয়েছেন। ফলে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন একজন আদর্শ খামারী হিসেবে।
খামারী খাইরুল বাসারের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন জীবনের শুরু থেকেই। স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায় তিনি ২০০০ সালে কুরিয়ায় পাড়ি জমান । সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করতে শুরু করেন । তবে কিছুতেই লাভের মুখ দেখতে পাননি তিনি। অবশেষে ২০১০ সালে এলাকায় নিজস্ব জমির ওপর একটি গরুর খামার গড়ে তুলেন। প্রাথমিকভাবে ৫টি গরু নিয়ে ছোট একটা ঘরে তিনি খামার শুরু করেন। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে সফলতার মুখ দেখেছেন খায়রুল বাসার । পাঁচটি গরু থেকে বর্তমানে তার খামারে গরুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫টি। এর মধ্যে রয়েছে গর্ভবতী, দুগ্ধজাত,মোটাতাজাকরণ গাভী।এছাড়াও রয়েছে ১৫টি বাছুর। যেগুলো বড় করে তিনি বিক্রি করেন।
বর্তমানে তার খামারে হলেস্টেইন ফ্রিজিয়ান, জার্সি, মুন্ডি জাতের গরু রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২০ থেকে ২২ টি গাভী গর্ভবতী আর ১৭টি গাভী দুধ দিচ্ছে। তিনি প্রতিদিন ঐ গাভীগুলো থেকে কমপক্ষে ১ হাজার ২শ কেজি দুধ সংগ্রহ করছেন। প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুবার গোয়াল গাভীগুলো দহন করে দুধ সংগ্রহ করে থাকেন। পাইকারিভাবে গোয়ালারা প্রতি কেজি ৪০ টাকা হারে দুধ কিনে থাকেন। আবার প্যাকেটজাত করেও অনলাইনে প্রতি ৫০০ গ্রাম ৩৫ টাকা হারে বিক্রি করেন । এর মাধ্যমে একদিকে তিনি যেমন আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে পুষ্টি ঘাটতি মিটাতে ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অবদান রাখছেন।
এছাড়াও তিনি নিজের জমিতে ঘাস উৎপাদন করেন।“নো ঘাস নো গরু” এই থিমকে সামনে রেখে খামারটিতে পর্যাপ্ত ঘাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা ডেইরি ফার্ম করতে চান তাদের অবশ্যই গরু কেনার আগেই ঘাস লাগানো উচিত বলে মনে করেন খাইরুল। তিনি আরো বলেন, কাঁচা ঘাসের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস দানাদার খাবারের উপর চাপ কমিয়ে খামারের খরচ কমাতে সাহায্য করবে।
এছাড়া কাঁচা ঘাসের অভাবে গাভী বা বকনা ঠিক সময়ে হিটে আসা না । তাছাড়া গাভী বিভিন্ন ধরণের হরমোনাল সমস্যায়ও আক্রান্ত হতে পারে। পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস থাকলে সমস্যা গুলো খামারিরা খুব সহজেই কাটিয়ে উঠতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি একটি প্রবাদ বাক্য বলেন, “গাভীর মুখে দিলে ঘাস দুধ পাবেন বারো মাস”।
খামার তৈরি সম্পর্কে তিনি জানান, দুই সারি টেল- টু -টেল সিস্টেমে শেড টি তৈরি করা হয়েছে। যথেষ্ট উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে যাতে করে আলো বাতাসের কোন ঘাটতি না থাকে। দুই সারির মাঝখানে মানুষ চলাচলের জন্য জায়গা এবং গরুর মলমূত্র ও গোসলের পানি প্রবাহের জন্য ড্রেন রাখা হয়েছে যার সংযোগ চলে গিয়েছে বাহিরে একটা গর্তে। গরুর খাবার পাত্র হিসেবে ডাইনিং টেবিল বানিয়ে এখানে খরচ বাড়ানো হয় নি। জাস্ট পায়ের সামনে দেড় ফিট উঁচু দেয়াল করে মেঝের লেবেলেই খাবার ও পানি দেয়া হয়। প্লাস্টিকের বালতিতে দানাদার খাবার সরবরাহ করা হয়।
খামার গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অফিসের সহায়তা সম্পর্কে তিনি জানান, নিজে প্রাণিসম্পদ অফিসে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরামর্শ নিয়েছেন। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস কুমিল্লা, সেখানে বিনামূল্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গবাদি পশুর রোগ সম্পর্কে জেনেছেন। বিভিন্ন রোগের কারণ ও তার প্রতিকার এবং প্রতিরোধের ব্যাপারে বেশ ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
খায়রুল বাসার খামারের পরিবেশ ভাল রাখার জন্য নিয়মিত খামারের ভিতর ও বাহির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখেন। এছাড়া মশা-মাছি আর পোকা-মাকড় প্রতিরোধেরও ব্যবস্থা আছে। গরুর খাবার নিয়ে বললেন, ‘প্রতিদিন কাঁচা ঘাস, খড়, ভুসি, ভুট্টা, খৈল খাওয়ানো হয়। প্রায় দুই বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ঘাস নিজেই চাষ করি। বাজার থেকে খাবার বেশি কিছু কিনতে হয় না।
তিনি আরো বলেন, বাছুরকে সরাসরি ওলান থেকে দুধ না খাইয়ে ফিডারে করে খাওয়ানো হয়। বর্তমানে তার খামারে ৫ জন লোক কাজ করেন। এছাড়া তিনি নিজেও তাদের সাথে কাজে সাহায্য করেন। তিনি তার খামারকে আরো সমৃদ্ধ করতে সরকারি উদ্যোগে উন্নত মানের ভ্যাকসিন সরবরাহ এবং গো খাদ্যের দাম কমিয়ে আনার অনুরোধ জানান । খায়রুল বাসারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এলাকার আরো অনেকেই এ কাজ করছেন আর তাতে সফলতাও পাচ্ছেন।এ ধরনের খামার দেশের বেকার কর্মক্ষম লোকদের কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও গুরুত্¦পূর্ণ অবদান রাখবে।
প্রতিবেদনকারী : লিমা আক্তার ,সহকারী তথ্য কর্মকর্তা।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর।