আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ ) সংবাদদাতা
জানা গেছে, সখি আক্তারের জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। বর্তমানে তার স্বামীর বাড়ি দড়ি বিশনন্দীতে বসবাস করছেন। তার বাবা ছিলেন একজন প্রবাসী। পাঁচ ভাইবোনের সংসারে তিনি ছিলেন বাবা-মার সবচেয়ে বড় সন্তান। তার সংসার ছিল অভাবের সংসার। সখি আক্তারের ছোটকাল থেকেই স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা করে ডাক্তার হবেন। কিন্তু দরিদ্রতার কাছে তার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেল। তার স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
সখি আক্তার যখন ৭ম শ্রেণিতে পড়ে তখন বাবা মা তার বিয়ে দিয়ে দেন। বিবাহিত জীবন ভালোই কাটছিল তার। প্রায় ১৯ বছরের সংসারে তিন মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জননী তিনি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে শান্তিতেই দিনকাল কাটছিল তার। পরে তিনি চিন্তা করেন স্বামীর পাশাপাশি থেকে যেন সংসারের হাল ধরবেন। এই ভেবে টাকা জমানো শুরু করেন। সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে কিছু টাইগার মুরগির বাচ্চা কিনে আনেন। মাত্র ২০০ টাইগার মুরগির বাচ্চা দিয়ে খামারের যাত্রা শুরু করেন। মুরগির বাচ্চাগুলো যত্ন সহকারে বড় করেন তিনি। বড় হওয়ার পর যখন ডিম দেওয়া শুরু করল তখন ডিম থেকে বাচ্চা উত্পাদন শুরু করেন। কিন্তু এ বাচ্চাগুলো কীভাবে বিক্রি করবেন তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। হঠাত্ তার মনে হল টাইগার মুরগির ভিডিও বানিয়ে ইউটিউবে আপলোড করলে তার খামার সম্পর্কে সবাই জানতে পারবে। পরে সাংবাদিকদের এনে প্রতিবেদন দিয়ে নতুন করে অনলাইনে ব্যবসা শুরু করেন। অনলাইনে ব্যবসা শুরু করার পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাচ্চা উত্পাদনের পর সেখান থেকে কিছু বাচ্চা বিক্রি করে দেন এবং বাকি ১ হাজার ৫০০ বাচ্চা নিজের জন্য পালন শুরু করেন। যখন ১ হাজার ৫০০ মুরগি একসঙ্গে ডিম দেওয়া শুরু করে তখন ইনকিউবেটর (ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর মেশিন) এর জায়গা হচ্ছিল না। যেহেতু তার ইনকিউবেটর ছিল অনেক ছোট তাই নতুন আরো তিনটি ইনকিউবেটর ক্রয় করে আনেন তিনি। যেগুলো দিয়ে একসঙ্গে ১৫ হাজার মুরগির বাচ্চা ফুটানো যায়। যেগুলো পালনের জন্য তার কাছে পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। তাই তিনি নতুন আরেকটি ঘর নির্মাণ করেন এবং সেখানে মুরগি পালন শুরু করেন। আর এই ঘর মুরগির বাচ্চা ও ডিম বিক্রি করে তার আয়ের অংশ দিয়ে নির্মাণ করেছেন। এরপর টাইগার মুরগির পাশাপাশি মিশরী ফাওমি মুরগি, তিথী মুরগি, ট্রার্কি মুরগি ও কোয়েল পাখি পালন শুরু করেন তিনি। যেগুলো তাকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করেছে। প্রায় সাত বছর যাবত্ মুরগি পালন করেন তিনি।
সখি আক্তার জানান, প্রথমত মুরগি পালনের সময় আমি সমস্যায় পড়েছিলাম। যেমন মুরগি প্রায় অসুস্থ হয়ে যেত। মুরগির অনেক রোগবালাই হত। তাই আমি আমাদের বাড়ির পাশে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর আমার মুরগি পালনে আর কোনো সমস্যা হয়নি। এখন মুরগি পালন করতে খুবই সহজ হয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে আমাকে পুরস্কৃত করা হয় পরপর দুই বার।