আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি মৌসুমে থাকছে না ম্যাংগো ক্যালেন্ডার বা আম পাড়ার সময়সীমা। আম পরিপক্ব হলেই গাছ থেকে পেড়ে বাজারজাত করতে পারবেন আমচাষিরা।
মো. জাহাঙ্গীর আলম
ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রণয়ন, বিষমুক্ত আম উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণের প্রস্তুতিমূলক সভায় আমচাষিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং গবেষক ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ফলে গাছে পাকা আম দেখা দিলেই বা পরিপক্ব হলেই তা বাজারজাত করতে পারবেন আমচাষিরা। দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় দেরিতে আম পাকা ও সাম্প্রতিক আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণেই এবারও ক্যালেন্ডার রাখা হচ্ছে না।
আমচাষিরা বলছেন, হঠাৎ করেই তীব্র তাপপ্রবাহ ও অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টির কারণে আম আগে-পরে পরিপক্ব হচ্ছে। তাই আম পাড়ার সময় বেঁধে দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কৃষকরা। এ সিদ্ধান্তে খুশি জেলার আমচাষি ও রফতানিকারকরা।
আমচাষি রুবেল হোসেন বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসনকে এমন সিদ্ধান্তের জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমরা জেলা প্রশাসনকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, কোনো চাষি অপরিপক্ক আম বাজারজাত করবে না। কেউ করলে অন্য আমচাষিরা তা প্রতিরোধ করবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়ে আম পাড়ার নির্ধারিত সময় বেঁধে দিলে বাজারজাত করতে অসদুপায় অবলম্বন করে অনেকেই। তাই তা রোধ করতে ও নায্যমূল্য নিশ্চিতে ম্যাংগো ক্যালেন্ডার না রাখার সিদ্ধান্ত। জেলার আমচাষিরা এমনিতেই পরিপক্ব না হলে আম পাড়ে না, তাই এখানে আলাদাভাবে ক্যালেন্ডারের দরকার নাই।’
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, ‘আবহাওয়ার কারণে আগে-পরে আম পেকে যাচ্ছে স্বল্প সময়ের মধ্যেই। একই কারণে চলতি মৌসুমে আমের ফলন কম হলেও সাইজ বড় হবে। আগামীতে বৃষ্টি পেলে আরও বড় সাইজ হবে। অন্যদিকে, ফলন কম ও ম্যাংগো ক্যালেন্ডার না থাকায় দামের দিক থেকেও ভালো পাবেন কৃষকরা।’
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের চিফ কর্মাশিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস জানান, আগামী ১০ জুন থেকে চালু হয়ে যতদিন আম পরিবহন করবেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা, ততদিন ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চলবে। কম খরচে নিরাপদে আম পরিবহনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আগামীতে বাগান থেকে গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এবার কুলি ও বুকিংকারীদের সিন্ডিকেট থাকবে না বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
এদিকে, ম্যাংগো ক্যালেন্ডার না থাকার সুযোগে অপরিপক্ব আম বাজারজাত রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে কঠোর নজরদারির হুঁশিয়ারি দেয় প্রশাসন। এমনকি আম সংক্রান্ত অভিযোগের জন্য উপজেলা পর্যায়ে থাকবে কন্ট্রোল রুম।