মাঠের পর মাঠজুড়ে ঘাসের বাগান। এক থেকে তিন ফুট লম্বা এসব সবুজ ঘাস দেখলে চোখ আটকে যাবে। পরিত্যক্ত জমি থেকে শুরু করে চাষযোগ্য তিন ফসলি জমিতেও শোভা পাচ্ছে সবুজ ঘাস। দৃশ্যটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে চারটি ইউনিয়নেই চাষ হচ্ছে ঘাসের। গবাদিপশুর খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস বিক্রি হচ্ছে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে। কম খরচে ঘাস চাষে আয়ও হচ্ছে বেশি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, কর্ণফুলী উপজেলায় ১ হাজার ৫৩৫টি পশু খামার আছে। এতে গবাদিপশু আছে ৩০ হাজারের মতো। এসব পশুর জন্য কাঁচা ঘাসের বিপুল চাহিদা রয়েছে উপজেলায়। এসব পশুর চাহিদা মেটাতেই উপজেলার প্রায় ১২০০ একর জমিতে চাষ হচ্ছে ঘাসের।
উপজেলার চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের খামারি আলাউদ্দিন বলেন, দিন দিন ছোলা, ভুট্টা, ভুসি, ফিড ও খড়জাতীয় গোখাদ্যের দাম বাড়ছে। গবাদিপশু লালন-পালন করতে হিমশিম খাচ্ছেন খামারিরা। তাই গোখাদ্যের পরিমাণ কমিয়ে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন উপজেলার খামারিরা। অনেক খামারি এসব ঘাস কম দামে কিনতে পারছেন। এতে খরচ কমে আসছে। গবাদিপশুও বেশি খাবার খেতে পারছে।
কয়েকজন ঘাসচাষি জানান, অধিকাংশ জমিতে জলাবদ্ধতা থাকায় এবং উৎপাদন বেশি হওয়ায় উপজেলার ৯০ ভাগ খামারি জার্মান ঘাস চাষ করেন। এর বাইরে অন্যরা নেপিয়ার পাকচং ঘাসের চাষ করেন। নেপিয়ার পাকচং ঘাসের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। তবে, লাভের জন্য জার্মান ঘাসের দিকে ঝুঁকছেন চাষিরা। প্রতি কেজি জার্মান ঘাসের দাম পাঁচ থেকে সাত টাকা। একটি গরুর জন্য দৈনিক ২০-২৮ কেজি ঘাস লাগে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার শিকলবাহা, চরলক্ষ্যা, চর পাথরঘাটা এবং জুলধা ইউনিয়নের পতিত জমি, বাড়ির উঠান, পুকুরপাড় এমনকি সড়কের দুই পাশে ঘাসের চাষ করা হয়েছে। এর বাইরে বড়উঠান ইউনিয়নেও কিছু জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে ঘাসের
আনছার উদ্দিন নামের এক খামারি বলেন, ‘আমি পাঁচ কানি জমিতে ঘাস চাষ করেছি। প্রতি কানি ১০ হাজার টাকায় লিজ নেওয়ার পর ঘাস বিক্রি হয় ৭০ হাজার টাকার। খরচ বাদ দিয়ে ৪০ হাজার টাকার ওপর আয় হয়। একবার চাষে ছয়বার ঘাস কাটতে পারা যায়। নিজের খামারে চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রিও করি। অল্প খরচে আয় বেশি বলে অনেকেই এখন ঘাস চাষ করছেন।’
এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা রুমন তালুকদার বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ডেইরি জোন কর্ণফুলী উপজেলা। এ উপজেলার খামারিরা ঘাসের চাষ করে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিক্রিও করছেন। অনেকে ঘাস বিক্রি করে লাভবানও হচ্ছেন। পশুর প্রধান খাদ্য ঘাস। পুষ্টিকর ঘাসে দেহ গঠনকারী আমিষসহ নানা ধরনের উপাদান রয়েছে। স্থানীয় খামারিরা বাজারের গোখাদ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ঘাসের দিকে ঝুঁকছেন। এতে খামারি ও চাষি উভয়ের লাভ।