আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন আসাদুজ্জামান মুক্তা। কিন্তু ভালো আয় করতে না পেরে ফিরে আসেন দেশে। ২০০১ সালে মুরগী ব্যবসা, ডিম, ফিডসহ বিভিন্ন ব্যবসা করে লোকসান হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অবশেষে ২০১৪ সালে হতাশাকে জয় করার প্রবল ইচ্ছা আর অদম্য আশা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজ বাড়িতেই ১০ লাখ টাকায় ৪টি হলিস্টিয়ান ফ্রিজিয়াম জাতের গাভী কিনে শুরু করেন খামার।
এতেই ভাগ্যবদল হয় তার। তার খামারে পর্যায়ক্রমে আয়ের পরও এখন খামারে ২৮ গরু রয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৬০-৬২ লাখ টাকা।
তার বছরে গড়ে ১০-১১ লাখ টাকা লাভ হয় গরু বিক্রি করে।
দুধ বিক্রি করে গরুর খাবার খরচ চালানোর পরও কিছু বাড়তি আয় হয়। এছাড়াও গরুর খামারের বজ্র দিয়ে বায়োগ্যাস উৎপাদন করে নিজ বাড়ির জ্বালানি চাহিদা মেটানো হয়। নিজের একাগ্রতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে তোলা খামারে এখন ১৭টি গাভী ও ১১টি বকনা রয়েছে।
একজন সফল খামারী আসাদুজ্জামান মুক্তার ইচ্ছা এই খামারকে আরও বড় করে শতাধিক বেকারের কর্মসংস্থান করার।
নিজের একাগ্রতা ও অক্লান্ত পরিশ্রম করলে যে কেউ প্রথমে ছোট আকারে এধরনের খামার গড়তে পারেন এবং সফলতা পাবেন।
সফল ও স্বাবলম্বী এই খামারী আসাদুজ্জামান মুক্তার বাড়ি দিনাজপুরের বিরামপুর পৌরশহরের টাটকপুর মহল্লায়। বাড়ির পাশে এক বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন মন্ডল ডেইরি নামের এই খামার। এই খামার পরিদর্শনে এলাকাসহ জেলার অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে ডেইরী খামার গড়ে তোলার প্রয়াস করছেন। মন্ডল ডেইরী খামারটি নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য হয়ে উঠতে পারে একটি আদর্শ।
খামারী আসাদুজ্জামান মুক্তা বলেন, মাত্র ৪টি বকনা বাছুর ক্রয় করে তাদের বড় করে বাড়িতে এই খামার গড়ে তুলেছি। বর্তমানে এই খামার থেকে প্রতিদিন ১১০-১২০ লিটার দুধ পাই। সেই দুধ স্থানীয় মিষ্টির দোকান ও ব্যবসায়ীরা বাড়ি থেকেই ক্রয় করে নিয়ে যায়। প্রায় ৬ একর জমিতে উন্নতমানের নেপিয়ার ঘাস ও ভূট্টার আবাদ করেছি। ঘাস ও ভূট্টা থেকে আধুনিক প্রযুক্তিতে সাইলেজ উৎপাদন করে খামারের গরুর খাবারের ব্যবস্থা করি। আধুনিক প্রযুক্তিতে উন্নতমানের হওয়ায় গরুর অসুখ-বিসুখ হয় না বললেই চলে। বর্তমানে ৪/৫ জন কর্মচারীর বেতন দিয়েও প্রতি মাসে ৮০ হাজার টাকা লাভ থাকে।
তিনি আরও জানান, খামারে ডাবল শেডে উন্মুক্তভাবে গাভী চলাচল করে। রয়েছে সার্বক্ষণিক পানি ও বাতাসের সরবরাহ। বাছুরের জন্য রয়েছে আলাদা শেড। এই খামারের বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন করে নিজ বাড়ির জ্বালানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিরামপুর উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন, আসাদুজ্জামান মুক্তা ভাইয়ের খামার উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ইতোমধ্যে মুক্তা ভাই একজন ডেমো খামারী হিসাবে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের নির্বাচিত হয়েছেন। সরকারিভাবে তার খামারে প্রণোদনা হিসাবে একটি শেড তৈরী করে দেয়া হবে। নতুন উদ্যোক্তারা তার খামার পরিদর্শন করলে লাভবান হবেন।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন।