পাবনার বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম মহল্লার বাসিন্দা মাহফুজা মীনা। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে চাকরি করলেও এলাকার সবার কাছে তাঁর পরিচিতি খামারি হিসেবে। প্রায় ১৫ বছর আগে মাত্র দুটি গরু দিয়ে তাঁর বাড়িতে একটি খামারের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখন সেই খামারে গাভি-ষাঁড় মিলিয়ে রয়েছে মোট ৮০টি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মীনা নারী হয়েও অদম্য ইচ্ছেশক্তি ও পরিশ্রমের জোরে সফল খামারি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
মীনার খামারে ৮০টি গরুর মধ্যে বাছুরসহ গাভি রয়েছে ২২টি। এসব গাভি থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩২০ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। খামারে দুধ ও ষাঁড়-গাভি বিক্রি করে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১২ লাখ টাকার আয় হয়। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গরু উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত জেলার সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার অনেক খামারির আদর্শ এখন মীনা। প্রায়ই তাঁর কাছে গিয়ে খামারসংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকেন তাঁরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, খামারটিতে উৎপাদিত দুধের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বেড়া পৌর এলাকার বিভিন্ন মহল্লায়। খামারে দুধ সংগ্রহ করা হয় সকালে ও বিকেলে। দুধ দোহানোর আগেই খামারের সামনে দুধ কেনার জন্য ভিড় করেন পৌর এলাকার বাসিন্দারা। মীনা নিজের বাড়ির ওই খামার থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াই শ লিটার দুধ বিক্রি হয়। বাকিটুকু বেড়া বাজারে বিক্রি করা হয়। খামারটির দুধের মান ভালো হওয়ায় বাজারেও লোকজন খামারটিতে উৎপাদিত দুধের জন্য অপেক্ষায় থাকেন।
পাঁচ-ছয় বছর ধরে ওই খামার থেকে নিয়মিত দুধ কেনে বেড়ার মনজুর কাদের মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানান, ‘বেড়া উপজেলার গরুর দুধের মান এমনিতেই ভালো। তবে ওই খামারের দুধ সর্বোচ্চ মানের। প্রতিদিনই তাঁর বাড়ির কেউ না কেউ খামারটিতে গিয়ে দুধ কিনে আনে। তবে সেখানে দেরি করে গেলে দুধ পাওয়া যায় না।’
মীনা ২০০০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ২০০৯ সালে মাত্র দুটি গরু নিয়ে খামারটির কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। পরিকল্পিত উপায়ে খামার পরিচালনা করায় এতে বেশ সফল হোন মীনা। তাঁর খামারে এখন ৮০টি গরুর সঙ্গে কয়েকটি ভেড়া ও ছাগলও রয়েছে।
মীনা ২০০০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ২০০৯ সালে মাত্র দুটি গরু নিয়ে খামারটির কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। পরিকল্পিত উপায়ে খামার পরিচালনা করায় এতে বেশ সফল হোন মীনা। তাঁর খামারে এখন ৮০টি গরুর সঙ্গে কয়েকটি ভেড়া ও ছাগলও রয়েছে।
মীনা সাড়ে তিন বিঘা আয়তনের একটি পুকুরে মৎস্য খামার গড়ে তুলেছেন। সেখানে মাছ চাষ করে বছরে প্রায় ছয় লাখ টাকা আয় হয় তাঁর। পুকুরসহ এর পাশের ১০ বিঘা জমি নিয়ে মাছ, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর একটি সমন্বিত খামার তৈরির কাজও শুরু করেছেন বলে জানান তিনি। প্রকৌশলী স্বামী, দুই সন্তান নিয়ে মীনার এখন সুখের সংসার।
এ বিষয়ে মাহফুজা মীনা বলেন, ‘আমার বাবা গরু পালন খুব পছন্দ করতেন। তিনি মনে করতেন আধুনিক ও পরিকল্পিত উপায়ে খামার গড়া হলে সফলতা আসবেই। বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর উপদেশ অনুযায়ী মাত্র দুটি গাভি দিয়ে খামার শুরু করি। এখন এই খামারে প্রতিদিন ৩০০ লিটারেরও বেশি দুধ উৎপাদিত হয়। আমারের খামারে উৎপাদিত দুধের প্রশংসা করেন সবাই। এটি খুব ভালো লাগে।’
মীনা জানান, বর্তমানে সব খরচ বাদে শুধু গরুর খামার থেকে বছরে ১২ লাখেরও বেশি টাকা আয় হয়। গরু, মাছ, পোলট্রি ও কৃষি খামারে ১৫ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে।
মীনার খামারের প্রধান কর্মী মনজেল হোসেন বলেন, ‘সাত-আট বছর ধইর্যা এই খামারে কাজ করি। অন্য যেকোনো খামারের তুলনায় এই খামারে শ্রমিকের বেতন বেশি। এখানে কাজ কইর্যা ভালোভাবেই সংসার চালাইতেছি।’
বাবা মারা যাওয়ার পর তাঁর উপদেশ অনুযায়ী মাত্র দুটি গাভি দিয়ে খামার শুরু করি। এখন এই খামারে প্রতিদিন ৩০০ লিটারেরও বেশি দুধ উৎপাদিত হয়। আমারের খামারে উৎপাদিত দুধের প্রশংসা করেন সবাই। এটি খুব ভালো লাগে।
মাহফুজা মীনা, নারী উদ্যোক্তা
মীনার খামারটিকে একটি আদর্শ খামার বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। বেড়া পৌর এলাকার দক্ষিণপাড়া মহল্লার খামারি আব্দুল আউয়াল বলেন, তিনি নিজেও ওই খামারে গিয়ে নানা পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আসেন।
অন্যদিকে বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, `মাহফুজা মীনা নিঃসন্দেহে একজন সফল খামারি ও নারী উদ্যোক্তা। আমি তাঁর খামারটি কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। সফল খামারি হিসেবে জাতীয় পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম আমরা ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব আকারে পাঠিয়েছি।’
সূত্র. প্রথম আলো