এবার চাহিদার চেয়েও বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত করেছেন নেত্রকোণার খামারিরা। জেলার সাড়ে ছয় হাজারের বেশি খামারে লালনপালন হচ্ছে এসব পশু। প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করা এসব পশুর চাহিদাও বাজারে বেশি। এবারের ঈদুল আজহায় পশু বিক্রি করে ভালো লাভের প্রত্যাশা করছেন খামারিরা।
নেত্রকোণায় এবার কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার। এর বিপরীতে জেলায় ছোট-বড় ছয় হাজার ৬০০ খামারে প্রস্তুত করা হয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার গরু।
খামার মালিকেরা বলছেন, গরু লালনপালনে খাবার হিসেবে ঘাস, ভুসি ও খড় জাতীয় প্রাকৃতিক খাবারের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন তারা। কেননা এভাবে লালনপালন করলে বাজারে গরুর চাহিদা বাড়ে।
তারা জানান, এরই মধ্যে অনলাইনের মাধ্যমে ও খামার থেকে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। ওজন প্রতি সাড়ে ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি ধরে গুরু বিক্রির আশা করে বলছেন, এতে করে লাভবান হবেন তারা।
রৌহা অ্যাগ্রো পার্কের ম্যানেজার কৃষিবিদ মামুনুর রহমান বলেন, আমাদের এখানে ৮২টি গরু আছে। যে ফিড আমরা দিয়ে থাকি, সেটি নিজেরাই তৈরি করি। আমাদের বেশিরভাগ গরুর ওজন ২০০ থেকে ৩৫০ কেজি পর্যন্ত। দাম পড়বে এক লাখ থেকে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এগুলো মূলত আমরা অনলাইনে বিক্রি করছি লাইভ ওয়েট হিসেবে। কোরবানি পর্যন্ত আরও ১০ থেকে ২০ কেজি বাড়বে। তখন দামটা ওজন অনুযায়ী সমন্বয় করা হবে। দেশি গরুর ক্ষেত্রে ৫৫০ টাকা এবং অন্যান্য জাতের গরুর জন্য ৫০০ টাকা কেজি দরে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আমরা লাভবান হব। আমরা যেহেতু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিড খাওয়াই না, সেক্ষেত্রে আমরা দামের ক্ষেত্রে বেস্ট একটা প্রাইস দিতে পারব। এটাই বাজারে অন্যদের চেয়ে দামের ক্ষেত্রে একটা পার্থক্য তৈরি করবে।
নেত্রকোণা সদরের চল্লিশাকান্দা গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি মো. মজিবুর রহমান বলেন, আমরা গরুকে শুকনো খড়, ভুসি ও হালকা ক্যাটল ফিড খাওয়াই। এর বাইরে কিছু খাওয়াই না। গরুগুলো আমার নিজের গোয়ালের ছিল তাই সব সময় ওদের যত্নে রেখেছি। আমাদের এদিকে ঘাস চাষের জমি কম, যে কারণে আমরা এগুলো খাওয়াই। আশা করছি এগুলো বিক্রি করে লাভবান হবো। আমার টার্গেট হলো এক লাখ পঞ্চাশ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রতিটি গরুর দাম হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যসব জেলাতেও সরবরাহ হবে নেত্রকোণার খামারের গরু। লাইভ ওয়েটে ৫০০-৫৫০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হতে পারে। এতে করে জেলার খামারিরা লাভবান হবেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম বলেন, নেত্রকোণা জেলায় এবারে কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১০ হাজার পশু। কোরবানিযোগ্য রয়েছে এক লাখ ২০ হাজার পশু। যে পরিমাণ পশু প্রস্তুত রয়েছে, তা দিয়ে আমাদের জেলার কোরবানির চাহিদা পূরণ হয়ে পার্শ্ববর্তী জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে। প্রায় ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিসহ আমাদের মোট সাড়ে ছয় হাজার খামারির মাধ্যমে পশুগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সবসময় খামারিদের খোঁজখবর রেখে তাদের সঙ্গে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে ধারাবাহিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। জেলায় প্রায় ১৩৫টি স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট রয়েছে। এ বছর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে খামারিদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আমাদের ৩৫টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে।
এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের একটি ওয়েবসাইট আছে ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খামারিরা তাদের গরুর ছবি এবং তথ্য আপলোড করে বিক্রি করতে পারবেন।
জেলার বিভিন্ন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ খামারে এক লাখ টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা মূল্যের গুরু প্রস্তুত করা হয়েছে। কারণ কোরবানিতে এ রকম দামের গরুর চাহিদা বেশি থাকে।
সূত্র. ঢাকা পোস্ট নিউজ