রাসেলস ভাইপার প্রজাতির সাপ নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে জনসাধারণকে সাধান ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। গতকাল এক বিবৃতিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বলেছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া, বোড়া বা উলুবোড়া) দেখা যাওয়ার জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। তবে রাসেলস ভাইপারের উপস্থিতি উদ্বেগজনক হলেও এটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, মানুষের সঙ্গে এ সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই সাপ সাধারণত নিচুভূমির ঘাসবন, ঝোপজঙ্গল, উন্মুক্ত বন, কৃষি এলাকায় বাস করে এবং মানুষের বসতি এড়িয়ে চলে। সাপটি মেটে রঙের হওয়ায় মাটির সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারে। মানুষ খেয়াল না করে সাপের খুব কাছে গেলে সাপটি বিপদ দেখে ভয়ে আক্রমণ করে। রাসেলস ভাইপার দক্ষ সাঁতারু হওয়ায় নদীর স্রোতে ও বন্যার পানিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত হয়েছে। তাই সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
সাপের কামড় এড়াতে হলে, যেসব এলাকায় দেখা গিয়েছে, সেসব এলাকায় চলাচলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। লম্বা ঘাস, ঝোপঝাড়, কৃষি এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক থাকতে হবে। গর্তের মধ্যে হাত-পা ঢোকাবেন না। সংশ্লিষ্ট এলাকায় কাজ করার সময় বুট এবং লম্বা প্যান্ট পরতে হবে। রাতে চলাচলের সময় অবশ্যই টর্চলাইট ব্যবহার করতে হবে। বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার ও আবর্জনামুক্ত রাখতে হবে। পতিত গাছ, জ্বালানির লাকড়ি, খড় সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সাপ দেখলে তা ধরা বা মারার চেষ্টা করবেন না। প্রয়োজনে জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ নম্বরে কল করুন বা নিকটস্থ বন বিভাগের অফিসকে অবহিত করতে হবে।
রাসেলস ভাইপারের প্রাদুর্ভাব কমাতে হলে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করতে হবে। বেজি, গুঁইসাপ, বাগডাশ, গন্ধগোকুল, বন বিড়াল, মেছো বিড়াল, তিলা নাগ ঈগল, সারস, মদন টাক এবং কিছু প্রজাতির সাপ রাসেলস ভাইপার খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এসব বন্যপ্রাণীকে মানুষের নির্বিচারে হত্যার কারণে প্রকৃতিতে রাসেল’স ভাইপার বেড়ে যাচ্ছে। তাই বন্যপ্রাণী দেখলেই অকারণে তা হত্যা, এদের আবাসস্থল ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকুন।
স্মরণ রাখা প্রয়োজন, রাসেলস ভাইপার বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ এর ৬ (১) ধারা অনুযায়ী সংরক্ষিত প্রাণী। রাসেলস ভাইপার ইঁদুর খেয়ে যেমন ফসল রক্ষা করে, তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ সাপের বিষ থেকে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ তৈরি হয়। সাপ মারা দ-নীয় অপরাধ, সাপ মারা থেকে বিরত থাকুন।
সূত্র :দৈনিক ইনকিলাব