ময়মনসিংহের এক মাছ চাষী পাঁচ মাসে ৩২ শতাংশের পুকুর থেকে খরচ বাদে মোট আয় করেন ১১ লাখ টাকা। মাঠ পর্যায়ে মাছ চাষে এ অভূতপূর্ব সাফল্য সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের (বিএফআরআই) গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে উদ্ভাবিত শিং মাছের নিবিড় চাষ প্রযুক্তি সফল বাস্তবায়নের ফলে। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মাঝিহাটিপাড়া গ্রামের চাষী দুলাল বেপারী। ২০১৯ সালের জুন মাসে তার ৩২ শতাংশের পুকুরে শতাংশপ্রতি চার গ্রাম ওজনের শিং মাছের ৫০০০টি পোনা মজুদ করেন। চাষকালীন সময় (পাঁচ মাস) পর আহরণকৃত মাছের গড় ওজন হয় ৬০-৭০ গ্রাম। শতাংশপ্রতি ২৮০ কেজি করে মোট উৎপাদন হয় প্রায় ৯০০০ কেজি। দুলাল বেপারী প্রতি কেজি শিং মাছ ২৮০ টাকায় বিক্রি করে মোট আয় করেন প্রায় ২৫ লাখ টাকা। এতে তার নিট মুনাফা হয় প্রায় ১১ লাখ টাকা। এ প্রসঙ্গে ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, বাংলাদেশে শিং অত্যন্ত জনপ্রিয় মাছ। এই মাছে ফ্যাটের পরিমাণ কম এবং প্রচুর পরিমাণে আমিষ থাকায় সবার কাছে এ মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। বিএফআরআইয়ের গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে নিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করা হলে মৎস্য খাতে এক নতুন মাত্রা সংযোজন হবে। এ বিষয়ে মাছ চাষী দুলাল বেপারীর সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, শুরু থেকেই বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের নিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছের চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। তিনি বলেন, আমি মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ও পরামর্শ গ্রহণ করেছি। পুকুরের ও মাছের নিয়মিত পরিচর্যা নেয়ার পাশাপাশি সুষম খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছি। এ ছাড়াও যে বিষয়গুলো খেয়াল রেখেছি তা হল- পুকুরে একই আকারের শিং মাছের পোনা মজুদ করা, বিশেষ করে স্ত্রী পোনা মজুদ করা, অধিক ঘনত্বে পোনা মজুদ করা, নিয়মিত চুন ও লবণ প্রয়োগ করা। মাঝিহাটিপাড়া গ্রাম ছাড়াও ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, মুক্তাগাছা, নান্দাইল, হালুয়াঘাট, ভালুকা, শেরপুরের নকলা এবং নোয়াখালীর চাটখিলের মৎস্য চাষীরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিং মাছের নিবিড় চাষাবাদ শুরু করেছেন। দুলাল বেপারীর এই সফলতা দেখে পার্শ্ববর্তী সুহিলা গ্রামের আবু রায়হান ২০ শতাংশ পুকুরে একই পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করেন। এতে তিনি সাড়ে পাঁচ মাসে ২০ শতাংশ পুকুর থেকে চার টন ২০০ কেজি শিং মাছ উৎপাদন করেন। এই মাছ বিক্রি করে তিনি আয় করেন ১৫ লাখ ১২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ব্যয় হয় ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়ার তোতা মিয়া, বেকিরচরের লিটন, বাড়েরার হানড়বান মিয়া, লিটন মিয়া, মাঝিহাটি গ্রামের মোহাম্মদ আলী, বাচ্চু মিয়া। সাধারণত মৎস্য চাষীরা আধানিবিড় পদ্ধতিতে শিং মাছ চাষ করে থাকেন। বিএফআরআইয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, পুকুরে সহজেই শিং মাছের নিবিড় চাষ করা সম্ভব। মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএইচএম কোহিনুর বলেন, এ ধরনের চাষবাদে পুকুর নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে যাতে পুকুরের পানি কোনোভাবেই নষ্ট না হয়।