- কাওসার আজম
- ০৭ জুলাই ২০২৪, ০২:৩১
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো: আলমগীর গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, এই শোর মূল ফোকাস হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজার (অ্যাকুয়াকালচার ও সিফুড) বাড়ানোর জন্য বিদেশী বিনিয়োগ আনা। বিশে^র প্রায় ২৫টি দেশের প্রতিনিধি, উদ্যোক্তা/বিনিয়োগকারী, ক্রেতা বিক্রেতা অংশ নেবে। এতে অংশ নিতে ১৩টি দেশকে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। অন্য দেশগুলোর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করা। সে ক্ষেত্রে আমরা বিদেশী বিনিয়োগটা চাচ্ছি এ খাতে।
প্রায় এক দশক আগে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অর্জন সম্ভব হয়। এই সমুদ্রকে ঘীরে সুনীল অর্থনীতির মহাপরিকল্পনা নেয় সরকার। বিশেষ করে মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্যকে ঘিরে আলাদা পরিকল্পনা নেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। সমুদ্র বিজয়ের অনেক দিন হয়ে গেলেও এখনো তা দৃশ্যমান নয়। অপার সম্ভাবনাময় সমুদ্র সম্পদ আহরণ করে বিদেশে রফতানির সুযোগ রয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশই এই সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতি চাঙ্গা। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বিনিয়োগ বোর্ডকে (বিডা) সাথে নিয়ে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার সহায়তায় ২০৩০ সালকে টার্গেট করে বড় এক পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই খুবই বড় পরিসরে তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড সিফুড শো ২০২৪ (বিআইএসএসএস-২০২৪)’-এর আয়োজন করেছে।
সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার স্ট্র্যাটিজিক এনগেজমেন্ট লিড মঈন উদ্দিন আহমেদ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, এর আগেও এ ধরনে আয়োজন হয়েছে। তবে এবার যেটা হচ্ছে তা অনেক বড়, আন্তর্জাতিকমানের। উদ্দেশ্য হলো আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সিফুড এক্সপোর্ট মার্কেট বর্তমানে যেটা আছে হাফ বিলিয়ন (০.৫ বিলিয়ন) বছরে, সেটা ৫ বিলিয়ন ইউএস ডলারে রূপান্তর করা। এই শোতে দেশী বিদেশী টেকনোলজি সার্ভিস প্রোভাইড করে, ফুড এক্সপোর্ট করে, যারা ইউরোপ-আমেরিকায় ইমপোর্ট করে, তারা সবাই অংশগ্রহণ করবে। শোতে ৫টি টেকনিক্যাল সেশন আছে। একটা প্ল্যানারি সেশন এবং ৪টি টেকনিক্যাল সেশন থাকবে। এই সেশনগুলোতে ফরেন গেস্ট থাকবে, ফরেন ও বাংলাদেশী স্পিকার থাকবে। তারা তাদের প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে একটা রোডম্যাপ তৈরি করবে। রোডম্যাপের মাধ্যমে যাতে আমরা ৫ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্টে যেতে পারি (মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি) সেটা একটা গাইডলাইন হিসেবে কাজ করবে। এই শো প্রতি দুই বছর পরপর আমরা অর্গানাইজড করব। মাঝখানের বছরগুলো দেশের বাইরে এ ধরনের শো হবে।
তিনি জানান, টার্গেট ছিল এই শোতে ৩০-৩৫টি দেশ অংশগ্রহণ করবে। এখন পর্যন্ত ইন্ডিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, আমেরিকা, মিয়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম, কাতারসহ এখন পর্যন্ত ১২টি দেশ কনফার্ম করেছে বলে জানি। আশা করছি দেশের সংখ্যা আরো বাড়বে।
মঈন উদ্দিন আহমেদ জানান, সিফুড বলতে মোটা দাগে মৎস্য মৎস্যজাতপণ্য সবগুলোকেই ধরা হয়।
সামুদ্রিক মাছ ধরার ক্ষেত্রে আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব বিষয়গুলো আমাদের টেকনিক্যাল সেশনে আসবে। সেখানে আলোচনায় আসবে, ইনভেস্টমেন্ট কিভাবে বাড়ানো যায়, সামুদ্রিক মাছ আহরণ কিভাবে আরো সাসটেইনেবল করা যায়।
৫ বিলিয়ন ডলার বছরে রফতানির জন্য কী পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, গার্মেন্টসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে ইকোনমিক জোন আছে। সিফুড প্রডাকশনের জন্য ১০ হাজার হেক্টর জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়, পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলেই সেখান থেকে আমরা বছরে ৫ বিলিয়ন ডলারে (রফতানি) চলে যেতে পারব। টোটাল বিনিয়োগটাই চাচ্ছি বিদেশী। তাহলে টোটালি এক্সপোর্টাবল হবে। এ ছাড়া দেশীয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার প্রাইভেট সেক্টরকে ইনভাইট করতে পারে। সরকার যদি ফ্যাসিলিটিজ দেয়, তাহলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হয়ে আসবে।
সম্প্রতি সিফুড শো বাস্তবায়ন নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান বলেন, এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ক্রেতা বিক্রেতা বাংলাদেশের সিফুডের প্রতি আকৃষ্ট হবে। যার ফলশ্রুতিতে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে বছরে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বিডার নির্বাহী সদস্য মোহসিনা ইয়াসমিন বলেন, যেহেতু এখানে বিভিন্ন দেশের সম্পৃক্ততা রয়েছে সেহেতু এই আয়োজনের সফলতার ওপর দেশের ভাবমূর্তি অনেকাংশে জড়িত। তাই বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। সাইড ইভেন্ট এবং প্ল্যানারি সেশনসহ বিডা কর্তৃক যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
সভার সভাপতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, আগামী ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের মৎস্য সেক্টরের কাক্সিক্ষত অগ্রগতি সাধনের জন্য এ সেক্টরের বৈদেশিক বিনিয়োগের বিকল্প নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আসন্ন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকুয়াকালচার অ্যান্ড সিফুড শো-২০২৪ একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। তিনি এও জানান, প্রায় ৩৫টি দেশের উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ক্রেতা-বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানসহ ডেলিগেটসরা এই শোতে উপস্থিত থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমানকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।