প্রতিনিধি
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ভরা বর্ষায় পদ্মা ও যমুনা নদীতে ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির বড়সড় সুস্বাদু মাছ। এসব মাছ নিয়ে বিপাকে পড়ার কথা জানিয়েছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। তাঁরা বলছেন, গত কয়েক দিনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে এসব মাছ ঢাকায় তাঁদের নিয়মিত ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারেননি। একপর্যায়ে কেটে ভাগা করে কম দামে বিক্রি করেছেন তাঁরা।
মানিকগঞ্জের জাফরগঞ্জ এলাকার জেলে দয়াল মালো ও তাঁর সঙ্গীরা গত সোমবার রাতে নৌকা নিয়ে পদ্মা নদীতে মাছ শিকারে বের হয়েছিলেন। তাঁরা ছোট-বড় মিলে ১৭টি পাঙাশ মাছ শিকার করেন। এসব পাঙাশ প্রায় দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেন। তাঁর মতে, স্বাভাবিক সময়ে এসব মাছ অন্তত দুই লাখ টাকায় বিক্রি হতো। দাম কম হওয়ায় অনেকে মাছ কেটে ভাগা হিসেবে নিচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার দৌলতদিয়া ঘাটে দেখা যায়, মাছ শিকার শেষে জেলেরা ঝুড়িতে পাঙাশ, ইলিশ, রিঠা মাছ বিক্রি করতে আনছেন। স্থানীয় দু-চারজন ব্যবসায়ী ছাড়া তেমন কোনো ক্রেতা নেই। অন্যান্য সময় দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ক্রেতার আনাগোনা দেখা যেত।
সেখানে আরেক জেলের জালে সাতটি বড় ইলিশ ও একটি পাঙাশ ধরা পড়ে। ১২ কেজি ওজনের পাঙাশটি ৯০০ টাকা এবং ইলিশ ১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়। অন্য সময় এ ধরনের পাঙাশ ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা এবং ইলিশ ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো।
৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লার ঘরে গত মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয়দের বেশ ভিড় দেখা যায়। একটু এগোতেই দেখা গেল, সেখানে মাছ কাটা হচ্ছে। পাঙাশ-ইলিশ মাছ কিনে সেখান থেকে কেটে নিয়ে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা।
দৌলতদিয়া ক্যানালঘাট এলাকার সোহেল রানা বলেন, ‘পদ্মার মাছের দাম অনেক বেশি বলে ইচ্ছা জাগলেও কিনতে পারি না। তবে এখন দাম কম। তাই তিনজনে মিলে ১১ কেজির একটি পাঙাশ ৮৫০ টাকা কেজি দরে কিনে ভাগ করে নিচ্ছি। অন্য সময়ে এই মাছ ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকা কেজি দরে কিনতে হতো।’
সারা বছর নিলামে মাছ বিক্রি করি। অনেক দাম হওয়ায় নিজেরা সচরাচর খেতে পারি না। তবে কারফিউয়ের কারণে গাড়ি বন্ধ আছে। সেই সঙ্গে এসব মাছের ক্রেতা না থাকায় দাম অনেক কম যাচ্ছে।
স্থানীয় আড়তদার আনু খাঁ
স্থানীয় আড়তদার আনু খাঁ বলেন, ‘সারা বছর নিলামে মাছ বিক্রি করি। অনেক দাম হওয়ায় নিজেরা সচরাচর খেতে পারি না। তবে কারফিউয়ের কারণে গাড়ি বন্ধ আছে। সেই সঙ্গে এসব মাছের ক্রেতা না থাকায় দাম অনেক কম যাচ্ছে।’
এসব বিষয়ে দৌলতদিয়া ঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ইছহাক সরদার বলেন, কারফিউ চললেও জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ রাখেননি। পদ্মা নদীর মাছ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়মিত বিক্রি হয়। বর্তমানে দূরে পাঠাতে পারছেন না বলে জেলেরা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁর প্রত্যাশা, কারফিউ শিথিল হতে শুরু করায় শিগগিরই এ অবস্থার উন্নতি হবে।