চায়না দুয়ারি নামে ভয়ংকর জাল ছড়িয়ে পড়েছে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায়। এই হালকা ও মিহি বুননের ছোট ফাঁসের এই জালে সহজেই ধরা পড়ে দেশি মাছসহ জলজ প্রজাতির সব জীব। একবার জালে আটকালে বের হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। স্বল্প ব্যয়ে এবং কম পরিশ্রমে বেশি মাছ ধরতে বিপজ্জনক এই জাল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে উপজেলায়।
মাছের জন্য হুমকি বিবেচনায় মৎস্য অধিদপ্তর এ জাল নিষিদ্ধ করে। এরপরও উপজেলার ঘুঘুদহ বিল, চরমাছখালি তেলখলিশার বিল ডেমরা, গৌরীগ্রাম সাতানিরচর, হারিয়া, পাটগারি, সোনাতলা, ধুলাউড়ি, গ্যারকার বিল, কাকেশ্বরী নদী, আফড়া, কাটিয়াদহ, গজারিয়া, মুক্তাহার, ঝিনাই বিল, গাঙভাঙ্গার বিল, ধলাই বিল, সোনাই বিল, পুন্ডুরিয়াসহ বিভিন্ন বিলে এ জাল দিয়ে অবাধে চলছে মাছ শিকার। হাটবাজারে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ এ জাল। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও অসাধু ব্যবসায়ীরা থেমে নেই। বিধ্বংসী এ জালের কারণে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ ও জলজ প্রাণী। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
বোয়াইলমারী হাটে মাছের পোনা বিক্রি করতে আসা দিগুলিয়া গ্রামের শরিফুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন বিলে শত শত চায়না দুয়ারি জাল পেতে রাখা আছে। প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। তারা বিল থেকে মাছ কিনে এনে বিক্রি করছেন।
উপজেলার ডেমরা বিল থেকে সাঁথিয়া বাজারে দুই থেকে ছয় ইঞ্চির ১৫ থেকে ২০ কেজি বোয়াল মাছের পোনা এনেছেন বিলচান্দো গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী সবুজ হোসেন। তিনি বলেন, চায়না দুয়ারি জালে প্রচুর বোয়ালের পোনা ধরা পড়ছে। মাছ শিকারিদের কাছ থেকে কিনে এনে প্রতি কেজি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করছি।
মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাঁথিয়াসহ সারাদেশে চায়না দুয়ারির ব্যবহার শুরু হয় প্রায় ছয় বছর আগে। চীন থেকে আমদানি করার কারণে এর নাম দেওয়া হয় ‘চায়না দুয়ারি’। এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে ভয়ঙ্কর এ জাল। লোহার রডের তৈরি ছোট গোলাকার ও চতুর্ভুজ কাঠামো। এগুলো যুক্ত করে ১০০ থেকে ২০০ ফুট লম্বা কাঠামো তৈরি করা হয়। একে ঘিরে দেওয়া হয় জাল দিয়ে। মিহি বুননের কারণে অল্প বা গভীর পানিতে এ ফাঁদ পাতলেই ছোট-বড় সব ধরনের মাছ আটকে পড়ে জালে। বাদ যায়না পোনা মাছ এমনকি ডিম পর্যন্ত। অবাধে এ জাল ব্যবহারের কারণে দেশি মাছের দেখা মিলছে না। এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি দেশি মাছ ধ্বংসে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। জলাশয় হচ্ছে মাছ শূন্য। চিংড়ি, পুঁটি, শোল, টাকি, বাইন, শিং, কৈ, টেংরার দেখা মেলে না। বাজার দখল করে আছে চাষের পাঙাশ, মাগুর বা তেলাপিয়া।
সাঁথিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নাসির উদ্দিন বলেন, এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চায়না দুয়ারি দিয়ে দেশি প্রজাতির মাছ শিকার করছে। অবৈধ জালের কারখানা বন্ধে এবং পোনা মাছ রক্ষার্থে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। জনগণকে সচেতন করতে মাইকিংসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার বন্ধে অভিযান চলছে। তবে জেলেদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
সূত্র: সমকাল