মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের প্রতিবন্ধকতা, সম্ভাবনা ও উত্তরণের নানা বিষয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপ করেছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইদ শাহীন
ফরিদা আখতার : কয়েক দশক ধরে শুধু এসব পণ্যের উৎপাদন বাড়ানোয় নজর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু মানসম্পন্ন উৎপাদনে ততটা নজর দেওয়া হয়নি। উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে আমরা কী হারিয়েছি—সেটিরও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে কি না সেটি দেখা প্রয়োজন।
ফরিদা আখতার : চাষের মাছ উৎপাদনে আমরা শীর্ষে কিংবা অমুক চাষের মাছ ভালো করছে, এসব তথ্যে আমি মুগ্ধ না। আমাদের দেশি মাছ হাওর, বাঁওড় ও মুক্ত জলাশয়ের মাছ উৎপাদনের দিকে বেশি নজর দিতে চাই।
ফরিদা আখতার : একসময় নদী থেকেই আসত বেশির ভাগ মাছ। কিন্তু এখন মোট উৎপাদিত মাছে নদীর অংশ একেবারেই অপ্রতুল। বাংলাদেশে নদীকেন্দ্রিক জলাধার থাকলেও তা মাছ উৎপাদনে সফলভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না।
ফরিদা আখতার : পোলট্রি খাতে এক দিনের বাচ্চার যে দাম, সেটি কয়েকটি কম্পানির হাতে সীমাবদ্ধ। বড় কম্পানিগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় ছোট ও ক্ষুদ্র খামারিদের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকে না। খামারিদের স্বার্থ রক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এসব খাতে নারীরা জড়িত রয়েছেন বেশি। ফলে তাঁদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারলে দেশের নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
কালের কণ্ঠ : চলমান বন্যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, খামারিদের পুনর্বাসনে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
ফরিদা আখতার : সাম্প্রতিক আকস্মিক বন্যায় মৎস্য খাতে এক হাজার ৫৯০ কোটি টাকা এবং প্রাণিসম্পদ খাতে ৪১১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পর পশুপাখির নানা ধরনের রোগ হয়। তাই প্রয়োজনীয় ওষুধ ও আর্থিক সুবিধা দিতে না পারলে খামারিরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বেশ কিছু কার্যক্রম ঘোষণা করেছি।
পশুখাদ্য সরবরাহ ও বিতরণ, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির রোগ প্রতিরোধে টিকা প্রদান এবং ঘাসের কাটিং বিতরণ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অধিদপ্তর। একইভাবে মৎস্য খাতেও চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, মৎস্য খামারগুলোকে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা এবং চাষিদের মধ্যে পোনা বিতরণ করা হবে।
কালের কণ্ঠ : দাম বেশি হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে ইলিশ। এর দাম সহনীয় করা ও উৎপাদন বাড়ানোয় কী পরিকল্পনা রয়েছে আপনাদের?
ফরিদা আখতার : ইলিশ আমাদের দেশের জাতীয় মাছ। তাহলে সেই মাছ খাওয়ার অধিকার দেশের সব মানুষের রয়েছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেই ইলিশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশ্বের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ ইলিশ বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। ইলিশ নিয়ে গর্বের পাশাপাশি আমাদের এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ অবস্থায় ইলিশের প্রজননস্থল ও অভয়াশ্রমগুলোর নিরাপত্তা ও সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হবে।
প্রজনন মৌসুমে মা মাছ ও জাটকা ইলিশের সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগ হিসেবে আমরা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। সেখানে আমরা দেখছি, প্রচুর মাছ অবৈধভাবে পাচার হচ্ছে। বেশির ভাগই যাচ্ছে ভারতে। সেটি বন্ধে আমরা আরো কঠোর হচ্ছি। স্বল্প সময়ের মধ্যে ইলিশের দাম মানুষের সাধ্যের মধ্যে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করব।