বগুড়ার কৃষক রবি মৌসুমে সাড়ে ১০ কোটি টাকার আগাম জাতের সবজির চারা বিক্রি করেন। ‘চারানগর’ খ্যাত জেলার শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর গ্রামে গড়ে উঠেছে দেশের সর্ববৃহৎ সবজি নার্সারি পল্লী। এখানে সবজির চারা উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, শাহনগরে সবজি নার্সারি পল্লী কৃষকের পদচারণে মুখর। এ গ্রামের নার্সারিতে সবজি চারার মান ভালো হওয়ায় মরিচ, বেগুন, টম্যাটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পালংশাকের চারা কিনতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার কৃষক এসেছেন। জানা যায়, ১৯৮৫ সালের দিকে প্রথমে শাহনগর বড়পাথার এলাকায় সবজি নার্সারি ব্যবসা শুরু হয়। তখন স্বল্পপরিসরে সবজি চারা উৎপাদন হতো। এ গ্রামের কৃষকের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে উপজেলার কামারপাড়া, মোস্তাইল, চুপিনগর, দুরুলিয়া, বৃ-কুষ্টিয়া, খোট্টাপাড়াসহ অঞ্চলজুড়ে এখন সবজি চারার চাষ করছেন নার্সারি মালিকরা। এসব গ্রামে গড়ে উঠেছে ৩০০-এর বেশি ছোটবড় নার্সারি। এখানে ফুলকপি, বাঁধাকপি, টম্যাটো, বেগুন, পেঁপেসহ হাইব্রিড জাতের আট থেকে নয় রকমের মরিচের চারা উৎপাদন হয়। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে বিভিন্ন বয়সী হাজারো নারী-পুরুষের। শাহনগরের নার্সারিপল্লীতে দেশের ৪০ জেলার কৃষক চারা নিতে ভিড় করছেন। নার্সারিগুলো ঘুরে ঘুরে পছন্দের চারা সংগ্রহ করছেন তারা। বছরের আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি চারা নিতে আসা ক্রেতায় মুখরিত থাকে এ অঞ্চল। কৃষক জানান, বৃষ্টি থেকে রক্ষায় বাঁশের তৈরি ‘বেতি’ রিংয়ের মতো বসিয়ে ওপরে সাদা, কালো পলিথিনে পুরো বীজতলা মুড়িয়ে দেওয়া হয়। বীজ বপনের পর ঝুরঝুরে মাটি সেখানে ছড়িয়ে দিতে হয়। বীজতলা প্রস্তুতে জমির মাঝবরাবর নির্দিষ্ট দূরত্বে ছোট ছোট আইল ও পানি নিষ্কাশনের নালা তৈরি করা হয়। শাজাহানপুরের চাষি আশরাফুল ইসলাম জানান, প্রতি হাজার মরিচের চারা ৮০০, কপির চারা ৮০০ থেকে ৯০০, বেগুনের চারা ৪০০ ও টম্যাটোর চারা ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এখান থেকে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল, নাটোর, রংপুর, নওগাঁসহ ৪০ জেলার কৃষক চারা নিয়ে যান। রবি মৌসুমে সাড়ে ১০ কোটি টাকার চারা বিক্রি হয় এ অঞ্চল থেকে। ১ বিঘা জমিতে চারা উৎপাদনে খরচ হয় ২ লাখ টাকা। এ চারা বিক্রি হয় ৪ লাখ টাকায়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মুহা. মশিদুল হক জানান, শাহনগর চারানগর হিসেবে খ্যাত। এ এলাকায় প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে কৃষক আগাম জাতের সবজি চারা উৎপাদন করছেন। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। আগামীতে আধুনিক পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনে কাজ করা হবে। প্রয়োজন হলে কৃষি বিভাগ থেকে তাদের প্রণোদনা দিয়ে চারা উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখা হবে।
সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন