বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রতিনিয়ত ট্রলারভর্তি আসছে রুপালি ইলিশ। সেখান থেকে পাইকার কিনছেন শত শত মণ। তাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে খুচরা বিক্রেতারা দাম হাঁকাচ্ছেন ইচ্ছামতো। এভাবে চার থেকে পাঁচ হাত বদলে পাল্টে প্রতি কেজিতে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। রপ্তানি বন্ধ হলেও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে সাধারণ ক্রেতা ইলিশ কিনছেন ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, থরে থরে সাজানো ইলিশ। রুপালি ইলিশের গায়ে সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। চলছে সঙ্গে দরকষাকষি। প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়লেও দাম কেন নাগালের বাইরে– এমন প্রশ্নের উত্তরে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা থেকে আসা এক ব্যবসায়ী জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ইলিশের দাম। এক কেজির একটি ইলিশ জেলেদের কাছ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় কিনে পাইকাররা বিক্রি করছেন ১ হাজার ৫৭৫ টাকায়। তারা আবার আরও ৭৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীর কাছে। এভাবে অন্তত ৪ থেকে ৫ হাত ঘুরে ইলিশ পৌঁছায় ক্রেতার হাতে।
এদিকে ক্রেতারা বাজারে এসেই ক্ষোভ ঝাড়েন বিক্রেতার ওপর। মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করে তারা বলেন, জাতীয় মাছের অভয়ারণ্য যে দেশে, সেখানে মাছটির দাম এত হবে কেন? বিক্রেতাদের দাবি, ইলিশ মৎস্য ঘাট থেকে ঢাকা অথবা অন্য কোনো জেলায় নিতে বরফ, প্যাকেটিং খরচ, পরিবহনসহ নানা খরচ রয়েছে।
জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, যে পরিমাণ ইলিশের চাহিদা, তার থেকে অনেক কম ধরা পড়ছে। এ ছাড়া তেল, মাছ ধরার সরঞ্জামাদির মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব কারণে দাম কমছে না।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের (বিএফডিসি) হিসাব অনুযায়ী, গত ২৪ জুলাই থেকে ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ কেনাবেচা হয়েছে ৪৪৩ দশমিক ৬৮ টন। গত বছরে একই সময়ে ইলিশ কেনাবেচা হয়েছে ৪৯৩ দশমিক ১৫ টন, যা গত বছরের তুলনায় ৪৯ দশমিক ৪৭ টন কম। একই সময়ে এ বছর অন্যান্য মাছ কেনাবেচা হয়েছে ১৭৩ দশমিক ৩৩ টন। ২০২৩ সালের একই সময়ে অন্যান্য মাছ কেনাবেচা হয়েছে ২৫৮ দশমিক ৬২ টন।
রোববার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৬৫ হাজার টাকা, মাঝারি সাইজের ইলিশ ৫৪ থেকে ৫৫
হাজার টাকা এবং জাটকা ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। তবে সমুদ্রের (গভীর সাগরের) ইলিশ প্রতি মণ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা কমে বিক্রি হয়েছে।
ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম না কমার বিষয়ে এ কেন্দ্রের আড়তদার মারুফ দফাদার বলেন, একদিকে চাহিদার তুলনায় ইলিশের সরবরাহ কম, অন্যদিকে ইলিশ বাজারে এলে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কেনাবেচা হয়। যার ফলে ইলিশের দাম কমছে না।
বরগুনার এফবি রাসেল কোম্পানির স্বত্বাধিকারী রাসেল বলেন, দুই বছর আগে গভীর সমুদ্রে একটি ট্রলার ঘুরে আসতে খরচ হতো ১ লাখ ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা। বর্তমানে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর পর পর্যাপ্ত ইলিশও ধরা পড়ে না। এর পর ইলিশ মৎস্যঘাট থেকে ঢাকা অথবা অন্য কোনো জেলায় নিতে বরফ, প্যাকেটিং খরচ, পরিবহনসহ নানা খরচ রয়েছে। এসব কারণে বাড়ছে ইলিশের দাম।
পাথরঘাটা বিএফডিসির সহকারী মার্কেটিং অফিসার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ইলিশ দিয়ে মানুষ নানা উৎসব পালন করেন। ফলে সারাদেশেই ইলিশের চাহিদা রয়েছে। অন্যদিকে সাগর এবং নদীতে নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে ইলিশ বড় হওয়ার আগেই নিধন করা হচ্ছে। শিকারিরা যতটা তৎপর, ততটাই নির্বিকার প্রশাসন। তাই রপ্তানি বন্ধ হলেও ইলিশের দাম কমার সম্ভাবনা খুবই কম।
সূত্র: সমকাল