কক্সবাজার: ৬৫ দিনের বন্ধ শেষেও বন্যাসহ বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেদের নিয়মিত সাগরে মাছ ধরতে যেতে দেরিই হয়েছে এবার। তবে এই সাগরযাত্রা নিয়মিত হতেই কেটেছে শঙ্কা। জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। দেরিতে মাছ আহরণ শুরু হলেও এরই মধ্যে আগস্ট মাসে মাছের পরিমাণ গত বছরকে ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে মাছের আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়লেও মাছের দাম নিয়ে হতাশ খুচরা বাজারের ক্রেতারা। কেননা গত বছরের তুলনায় মাছের দাম বরং বেড়েছে অনেকটা। মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহণ ও শ্রমিকসহ নানা খাতে খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে মাছের দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না।
৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরতে যাওয়ার ব্যাপক প্রস্তুতি থাকলেও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলের পাশাপাশি টানা অব্যাহত প্রবল বর্ষণসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে জেলেদের সেই অপেক্ষা দীর্ঘায়িত হয়। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হতেই আর দেরি করেননি জেলেরা। এখন পূর্ণোদ্যমে চলছে মাছ আহরণ। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ভরে গেছে ইলিশ-রূপচাঁদাসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছে। মাছ আহরণ ছাড়িয়েছে গত বছরের রেকর্ড।
জেলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ২০২৩ সালের আগস্টে মাছ আহরণ হয়েছিল ৬৫৯ টন। এ বছর একই নিষেধাজ্ঞা শেষে আগস্টে আহরণ হয়েছে ৭০৮ টনের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ আগস্টেই গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ টন মাছ বেশি ধরেছেন জেলেরা। মাছ আহরণ নিয়ে মৎস্য ব্যবসায়ীরা নানা প্রতিবন্ধকতার কথা বললেও পরিস্থিত স্বাভাবিক থাকলে মাছ আহরণে স্মরণকালের সব রেকর্ড এ বছর ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছে মৎস্য অধিদফতর।
এদিকে জেলেদের জালের সুবাদে বাজর মাছে সয়লাব হয়ে গেলেও স্থানীয় বাজারে মাছের দাম কমার নাম নেই। উলটো বাড়তি দাম নিয়ে হতাশ ক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি দামে জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনতে হচ্ছে বলে তাদের বিক্রিও করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। আর মাছ আহরণে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিবহণ ও শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়া ছাড়াও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে মাছের দাম বাড়তি।
ট্রলার মালিক শাহাব উদ্দিন জানান, সাগরে ট্রলার পাঠাতে অনেক টাকার রসদ লাগে। তেলের দাম আগের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া চোরাই পথে ইলিশ পাচার হয়ে যায়। আরও নানা অব্যবস্থাপনার কারণেই মাছের দাম বাড়তি।
স্থানীয় বাজারে দাম বেশি হলেও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র তথা ফিশারি ঘাটে ইলিশ বাদে রূপচাঁদা ও অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের দাম তুলনামূলকভাবে কম। ফিশারি ঘাটেও ইলিশের দাম গত বছরের তুলনায় বেশিই রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেটের কারণে এমনটা হচ্ছে। তারা ইলিশের দাম কোথাওই কমতে দিচ্ছে না। অন্যদিকে তাদের কারণে এই ভরা মৌসুমেও স্থানীয় বাজারে সামুদ্রিক মাছের জন্য বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাজার মনিটরিংয়ে জোর দিতে আহ্বান জানাচ্ছেন তারা।
জেলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী জিএম রাব্বানী বলেন, মাছ ধরার নিষেজ্ঞা ৬৫ দিন বন্ধ শেষে বৈরী আবহাওয়াসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও গত বছরের তুলনায় এ বছর আগস্টে প্রায় ৫০ টন বেশি মাছ অবতরণ হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
সূত্র: সারাবাংলা