২১
বায়েজীদ মুন্সী
Published : Saturday, 7 September, 2024 at 12:03 PM
জেলিফিশকে বাংলাদেশে একপ্রকার অখাদ্য বা ব্যবহার অনুপযোগী সামুদ্রিক প্রাণী হিসাবেই বিবেচনা করা হয়। তবে তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড এবং চীনসহ বিভিন্ন দেশে খাদ্য হিসাবে এর চাহিদা রয়েছে। এটি রপ্তানি করে আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশের গবেষকরা। তারা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে আহরণ করা হলে রপ্তানি আয়ের একটি নতুন উৎস হয়ে উঠতে পারে এই জেলিফিশ। সেই সঙ্গে ওষুধ শিল্প এবং কসমেটিকস শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে।
ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস এর তথ্যমতে, পৃথিবীতে জ্ঞাত প্রায় ২ হাজার প্রজাতির জেলিফিশ রয়েছে। এছাড়াও অগণিত অজ্ঞাত প্রজাতির জেলিফিশ সাগরে বিদ্যমান। এর মধ্যে ১২ প্রজাতির জেলিফিশ খাওয়ার উপযোগী। তাছাড়া বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের মতে, ২২ প্রজাতির জেলিফিশ বাংলাদেশে পাওয়া যায়, যার বেশিরভাগই মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। বাংলাদেশে প্রাপ্ত জেলিফিশের মধ্যে ৩ প্রজাতির জেলিফিশ খাওয়ার উপযোগী- তা হলো: লোবোনেমোইডিস রোবাস্টাস, ক্র্যামবিওনেলা এ্যানানডালেই এবং আউরেলিয়া অরিতা। এছাড়া বাংলাদেশে পাওয়া অন্য একটি প্রজাতি কিছুটা বিষাক্ত হলেও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর নয়।
বাংলাদেশের ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউটসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশানোগ্রাফি এবং ফিশারিজ বিভাগের গবেষকরা মিলে জেলিফিশের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষকরা বলছেন, জেলিফিশ হচ্ছে মেডুসোজোয়া সাবফাইলামের কিছু জিলাটিনাস সদস্যের মেডুসা-ফেজ (ডিম ও স্পার্ম তৈরিতে সক্ষম অবস্থা) যা ফাইলাম নিডারিয়ার একটি প্রধান অংশ। জেলিফিশ সামুদ্রিক জেলি নামেও পরিচিত। জেলিফিশ নামে ‘ফিশ’ হলেও এটি মাছ নয়। ৯০ শতাংশ পানি দিয়ে গঠিত জেলিফিশের একটি জটিল জীবনচক্র রয়েছে। যৌন ও অযৌন উভয় পদ্ধতিতে জেলিফিশ বংশবিস্তার করে থাকে। যৌন পরিপক্বতায় পৌঁছানোর আগে এরা অযৌন পদ্ধতিতে সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। পৃথিবীর প্রায় সকল উপসাগর, সাগর কিংবা মহাসাগরের ন্যায় অনেক যুগ আগে থেকেই বঙ্গোপসাগরেও জেলিফিশের উপস্থিতি ছিল। বিজ্ঞানীদের ধারণা ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে এরা পৃথিবীতে টিকে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষত এ বছরের জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় জেলিফিশের প্রাদুর্ভাব অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণ ও ব্যবস্থাপনায় এটি অশনি সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে এর সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব ফিশারিজের অধ্যাপক মো. রাশেদ-ঊন-নবী বলছেন, জেলিফিশ কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে বিশ্বের অনেক দেশই গবেষণা করছে, আমরাও গবেষণা শুরু করেছি। তাতে দেখা গেছে, এটির বাণিজ্যিক বেশকিছু সম্ভাবনা রয়েছে।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলছেন, বাংলাদেশের সমুদ্রে ৩ ক্যাটাগরির জেলিফিশ পাওয়া যায়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে খাওয়ার উপযোগী। আমাদের দেশে এটা খাওয়া হয় না। কিন্তু তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড বা চীনে খাদ্য হিসাবে এর চাহিদা রয়েছে। ফলে বাণিজ্যিকভাবে আহরণ করা হলে সেখানে রপ্তানি করা সম্ভব। সেই সঙ্গে এসব জেলিফিশ ওষুধ শিল্পের এবং কসমেটিকস শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। তিনি বলেন, জেলিফিসের অরেকটি ধরন রয়েছে, সেটি খুব ছোট আকারের হয়ে থাকে। এসব জেলিফিশ বিশ্বের অনেক দেশে অ্যাকুরিয়ামে বা সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। এটাকে রিক্রিয়েশন পারপাস ব্যবহার বলা যায়। থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশে এরকম অ্যাকুরিয়াম রয়েছে, যেখানে হাতের তালু আকৃতির স্বচ্ছ জেলিফিশ রাখা হয়। আপনি যে রঙের আলো ফেলবেন, সেটার রঙ সেরকম হয়ে যায়। পর্যটকদের কাছে এটা বেশ আকর্ষণীয় একটা ব্যাপার।