দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে চলে আসা ফরিদপুরের মাছ বাজারের ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে তৎপর প্রশাসন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সম্প্রতি ইলিশ বাজারে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর অভিযানে নামে। এ সময় তারা বাজারে নানা অনিয়ম ও অসংগতি দেখতে পায়। অর্থদণ্ড করা হয় দুই বাজারের দুই ইলিশ ব্যবসায়ীকে।
এ ব্যাপারে ফরিদপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ইয়াসিন কবির বলেন, ‘বাজারে সিন্ডিকেট ধরতে আমরা নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছি, চলছে তদন্ত। আশা করছি দ্রুতই আমরা এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবো।’
এর পরিপেক্ষিতেই হাজি শরীয়তুল্লাহ বাজারের লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীদের টোলমুক্ত ঘোষণা করেন পৌর প্রশাসক চৌধুরী রওশন ইসলাম। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে পৌর প্রশাসক। সেখানে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র খোলা দোকান (শাটারবিহীন) টোল বা খাজনা প্রদান করবে।
পৌর কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন হাজি শরীয়তুল্লাহ মাছ বাজারের ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, পৌর প্রশাসকের এ সিদ্ধান্ত দীর্ঘদিনের ইজারাদার কর্তৃক টোল আদায়ের নামে ব্যবসায়ীদের ওপর চাঁদাবাজি বন্ধে এটি কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। সেই সঙ্গে ইজারাদার যেন আর তাদের কোনও প্রকার চাপ সৃষ্টি না করে, সে বিষয়ে নজর দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আহ্বান জানান। এ ছাড়া লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা এখন থেকে আর কোনও টোল বা খাজনা প্রদান না করলে বাজারের মাছ, মাংস, সবজিসহ সকল পণ্যের দাম কমে আসবে বলে মনে করেন তারা।
হাজি শরীয়তুল্লাহ মাছ বাজারের ব্যবসায়ী ও আড়তদার মনোজ কুমার সাহা, এস এম মুছা, হারান সরকার, তপন দত্ত, শ্যামল কুমার দাস, অজিত কুমার সরকার ও মনিরুল ইসলাম মনা জানান, ইজারাদারের অতিরিক্ত টোল আদায়ের ফলে বাজারে কোনও ব্যবসায়ী স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রয় করতে পারতো না। দীর্ঘদিন তারা বৈষম্যের শিকার ছিল। তাদের শতকরা ৩ টাকা হারে চাঁদা প্রদান করতে হতো। এতে এক কেজি ইলিশের দাম ১৫০০ টাকা হলে তার খাজনা আসতো ৪৫ টাকা। এক লাখ টাকার পণ্যে খাজনা দিতে হতো ৩ হাজার টাকা। যা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ইজারাদার আদায় করতো। দেশের কোথাও লাইসেন্স নিয়ে বা খোলা মাছ বিক্রির জন্য খাজনা আদায় করা হয় না। শুধুমাত্র ফরিদপুরে ব্যতিক্রম।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, অবৈধভাবে ইজারাদারের এই টোল আদায় বন্ধ হওয়াতে এখন বাজারে মাছ, মাংসসহ সকল পণ্যেরই দাম কমবে। এতে করে ভোক্তা সাধারণ উপকৃত হবে। তারা বলেন, ‘আগামীতে ইজাদাররা যেন আমাদের ওপর আর কোনও হয়রানি না করে, সে বিষয়ে পৌর প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
ফরিদপুর ভোক্তা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সোহেল শেখ বলেন, ‘আমরা চাই ক্রেতা সাধারণ নিত্যপণ্য প্রকৃত মূল্যেই ক্রয় করার সুযোগ পাক। অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা কোনও ভোক্তা যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে আমাদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।’
ফরিদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও পৌর প্রশাসক চৌধুরী রওশন ইসলাম জানান, ভোক্তারা প্রতারিত হোক এমন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।