বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। মাছের রাজা ইলিশ মাছ বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। যে কোনো অনুষ্ঠানে ভোজনরসিক বাঙালির পাতে ইলিশ মাছ থাকবেই। ইলিশ মাছ স্বাদে যেমন অতুলনীয়, তেমনি পুষ্টিতে ভরপুর। সরিষা ইলিশ, ভাপা, ইলিশ পাতুরি, দই ইলিশ, ইলিশের টক, ভাজা, ইলিশের ডিম আর কত কী বাঙালির পাতে থাকবেই। সরষে ইলিশ, ভাপা ইলিশ, ইলিশ পাতুরি, দই ইলিশ, ইলিশের টক, ভাজা, ইলিশের ডিম আরো কতভাবে ইলিশ খাওয়া যায়।
ইলিশ মাছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি রয়েছে। এছাড়া পটাশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, জিংক, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি পাওয়া যায় এই মাছ থেকে। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় সবটুকু ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমরা এই মাছটি থেকেই পেতে পারি। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যসিড আলসার, কোলাইটিসের হাত থেকে রক্ষা করে। ব্রেন- মস্তিষ্কের ৬০% তৈরি ফ্যাট দিয়ে, যার অধিকাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যারা নিয়মিত মাছ খান তাদের মধ্যে বয়স কালে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অনেক কম দেখা যায়। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনেও সাহায্য করে ডিএইচএ। স্মৃতিশক্তি, পড়াশোনায় মনযোগ বাড়ায় ইলিশ মাছ ।
১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে আনুমানিক ৩১০ ক্যালরি, ২২ গ্রাম প্রোটিন ও ১৯ দশমিক ৫ গ্রাম ফ্যাট থাকে। একইসঙ্গে মাছের তেলে থাকে পলিআনস্যাচুরেটেড ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ইপিএ ও ডিএইচএ, যেগুলো হৃদরোগ, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যারিথেমিয়া, ডায়াবেটিস, আথ্রাইটিসসহ ব্রেন ডেভেলপমেন্ট ও ক্যানসার প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকরী বলে বিভিন্ন গবেষণা নিবন্ধে দেখা গেছে। এ ছাড়াও, মানবদেহের জন্য প্রতিদিনের দরকারি ২৭ ভাগ ভিটামিন সি, ২ ভাগ আয়রন ও ২০৪ ভাগ ক্যালসিয়াম ইলিশ মাছ থেকে পাওয়া যায়। তবে ইলিশ এত প্রিয় হওয়ার পরও অনেকই চিন্তা থাকে যে এই মাছ শরীরের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর ? জেনে নিন ইলিশ মাছে স্বাস্থ্য উপকারিতা-
ক্যানসার প্রতিরোধ করে
ক্যানসার একটি প্রাণঘাতী রোগ। বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারে প্রতি বছর অনেক মানুষ মারা যায়। নিয়ম না মেনে খাবার খাওয়ার কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হই। তবে ইলিশ মাছ খেলে আপনি সুস্থ থাকবেন ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমবে। ইলিশ মাছে আরজিনিন থাকায় তা ডিপ্রেশনের জন্যও খুব ভালো৷ আবার সর্দি-কাশি প্রতিরোধেও দারুণ কার্যকরী৷ ইলিশে আয়োডিন, সোডিয়াম, জিংক ও পটাশিয়ামের মতো প্রচুর পরিমাণ মিনারেল রয়েছে। আয়োডিন থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে সুরক্ষিত রাখে ও বিভিন্ন এনজাইম নির্গত হতে সহায়তা করে, যা ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
ফুসফুসের নানা রোগকে প্রতিরোধ
স্বাদের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যেরও খেয়াল রাখে ইলিশ। ফুসফুসের নানা রোগকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে ইলিশ। এছাড়া আর্থরাইটিসের সমস্যায় খুব কার্যকরী এই ইলিশ মাছ। তাছাড়া দেহের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতে সাহায্য করে এই রূপালি ইলিশ মাছ।
হার্ট ভাল রাখে
ইলিশ মাছে প্রচুর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় হার্ট সুস্থ রাখতে কার্যকরী। সেই সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ইলিশ। এতে সম্পৃক্ত চর্বি কম থাকে ফলে সুস্থ থাকে হার্ট।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব ভালো
ইলিশ মাছ প্রোটিন, জিঙ্ক, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়ামের মতো খনিজ রয়েছে৷ ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে রয়েছে ২২.৩ শতাংশ প্রোটিন৷ এ ছাড়া জিঙ্ক ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব ভালো৷ সেলেনিয়াম আবার অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করে৷
খনিজ উপাদানে ভরপুর
ইলিশ মাছে রয়েছে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক,সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়ামের মতো একাধিক খনিজ উপাদান। ফসফরাস দাঁত এবং ক্যালসিয়াম হাড়ের পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয়। অন্যদিকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লৌহ শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
ভিটামিনে ভরপুর
ইলিশে ভিটামিন এ, ডি এবং ই আছে। ভিটামিন এ রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং ডি, শিশুদের রিকেট রোগ থেকে রক্ষা করে। তাই এই মাছ শিশুদের জন্যেও উপকারী।
রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়
ইলিশ মাছে ইপিএ ও ডিএইচএ নামক ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, সেই কারণেই ইলিশ মাছ খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়।
দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখে
ইলিশে রয়েছে ভিটামিন এ এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যা চোখ ভাল রাখতে সাহায্য করে। যাদের দৃষ্টিশক্তি কমে আসার সমস্যা থাকে, তারা ইলিশ খেয়ে উপকার পাবেন।
পেটের যত্নে
আলসার, কোলাইটিসের মতো রোগের হাত থেকে রক্ষা করে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যসিড। ডায়েটে তেলযুক্ত মাছ থাকলে পেটের সমস্যা অনেক কম হয়। তাই ইলিশ খাওয়া উপকারী।
ত্বক ভাল রাখে
ইলিশে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাট ত্বক ভাল রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক নমনীয় রাখতে সাহায্য করে এবং বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না।
মস্তিষ্কের জন্য ভাল
অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার রোধ করতে পারে ইলিশ মাছ। সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি, পড়াশোনায় মনযোগ ইত্যাদিও বাড়ায়। মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই তৈরি ফ্যাট দিয়ে। যার অধিকাংশই ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। শিশুদের মস্তিষ্কের গঠনে সাহায্য করে ডিএইচএ।
অবসাদ থেকে রক্ষা মেলে
ইলিশে মজুত ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, অবসাদের মোকাবিলা করতে পারে। সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার, পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশনের মতো মানসিক সমস্যাগুলি কাটাতে পারে ইলিশ মাছ।
রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে
সামুদ্রিক মাছে থাকা ইপিএ ও ডিএইচএ ওমেগা-থ্রি- শরীরে ইকসিনয়েড হরমোন তৈরি রুখতে পারে। এই হরমোনের প্রভাবে রক্ত জমাট বেঁধে শিরা ফুলে যায়। ইলিশ মাছ খেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়।
বাতের ব্যথা দূর করে
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিডের সঙ্গে অস্টিও আর্থ্রাইটিসের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিদিনের ডায়েটে সামুদ্রিক মাছ থাকলে বাতের ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
পেটের যত্নে
খাবারতালিকায় ইলিশ মাছ রাখলে পেটের সমস্যা অনেক কম হয়। আলসার, কোলাইটিসের হাত থেকে রক্ষা করে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড
ত্বকের যত্ন
ইলিশ মাছে থাকা প্রোটিন কোলাজেনের অন্যতম উপাদান। এই কোলাজেন ত্বক টাইট ও নমনীয় রাখতে সাহায্য করে।
সূত্র: ঢাকাটাইমস