অদ্য-১০.১১.২০২৪ খ্রি.
দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া মো. মনতাজুরের জীবনটা ছিল কঠোর পরিশ্রম আর সীমাবদ্ধতার। পড়াশোনার সুযোগ তিনি পাননি পরিবারের আর্থিক দুরবস্থার জন্য। কিন্তু জীবনের সাথে লড়াই করতে করতে তিনি আজ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন একজন সফল গরু ও মাছ চাষী হিসেবে।
সংগ্রাম আর দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করতে করতে মো. মনতাজুর রহমানের শৈশব কেটেছে প্রতিকূল পরিবেশে। তার বাবা ছিলেন কৃষক, আর যেটুকু আবাদি জমি ছিল তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। ছোট থেকেই জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সংগ্রহ করার জন্য তিনি পরিবারের সাথে কাজ করতেন।
শিক্ষার আলো তার কাছে পৌঁছাতে পারেনি অভাবের করণে। কিন্তু তিনি ছোটবেলা থেকেই পরিশ্রমের মর্ম বুঝতে শিখেছেন।
দশ বছর আগে তিনি নতুন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, যা তাকে ও তার পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে সাহায্য করবে। প্রথমে গরুর খামার শুরু করার কথা ভাবেন তিনি। স্থানীয় খামারীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে শুরু হয় তার খামার গড়ে তোলার যাত্রা। প্রথমে গরুর সংখ্যা ছিল মাত্র তিনটি যা তিনি গরু মোটাতাজা করণ করে ৩-৫ মাস পালনের পর তা বিক্রয় করেন। ধীরে ধীরে তিনি আরও গরু কিনে নিজের খামার বড় করতে থাকেন। বর্তমানে তার খামারে ১১টি গরু রয়েছে।
তিনি নিজেই প্রতিটি গরুর দেখাশোনা করেন। প্রতিটি গরু প্রতিদিন উন্মুক্ত মাঠে ছেড়ে দেন যাতে তারা পর্যাপ্ত ঘাস খেতে পারে। ঘাসের পাশাপাশি গরুদের খাবারের জন্য তিনি কুমিল্লা ইপিজেড বাজারের ফেলে দেওয়া সবজি গরুর খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন এবং খড়, ভুষি, সয়াবিন, এবং চালের কুড়া খাওয়ান ।
গরুর খামারের পাশাপাশি মো. মনতাজুর রহমান মাছ চাষেও সফল হয়েছেন। তার বর্তমানে ৭টি পুকুর রয়েছে, যেগুলোতে তিনি বিশেষ করে পাঙ্গাস মাছ চাষ করেন। পাঙ্গাস মাছের চাষে তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা এতটাই বেড়েছে যে এখন এলাকার অনেকেই তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়।
মাছের খাবারের জন্য তিনি সাধারণ খাবারের পাশাপাশি কুমিল্লা ইপিজড থেকে ফেলে দেওয়া ভাত সংগ্রহ করে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেন, যা মাছের জন্য পুষ্টিকর। এতে খাবারের জন্য আলাদা অর্থ ব্যয় করতে হয় না তার। এছাড়া অল্প পরিমাণে কার্প জাতীয় মাছও তিনি চাষ করেন।
মো. মনতাজুর রহমানের সাফল্যের পেছনে আছে তার কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, এবং সঠিক পরিকল্পনা। প্রতিদিন ভোরবেলা থেকে শুরু করে দিনশেষ পর্যন্ত তিনি খামারের কাজে ব্যস্ত থাকেন। নিজের শ্রম দিয়ে তিনি খামারের প্রতিটি কাজ করেন।
মো. মনতাজুর রহমান বলেন, “নিজের হাতে কাজ করি বলে শ্রমিককে আলাদা অর্থ দিতে হয়না এতে করে লাভ বেশি হয়। নিজে কাজ করি বলে তা যত্নসহকারে করা হয় এবং তা সফলতার চাবিকাঠি হয়ে ওঠে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সর্ম্পকে মো. মনতাজুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে খামারের পরিধি আরও বৃদ্ধি করার। তিনি আরও পুকুর লিজ চান এবং আরও উন্নত মাছের প্রজাতি চাষ করতে চান।
সবশেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর থেকে তাকে প্রাণিসম্পদ বিষয়ক বিভিন্ন লিফলেট প্রদান করা হয় এসাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের পরিচিতি দেয়া হয় । পাশাপাশি “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য ভান্ডার”“এ্যাপস” “নিউজ পোর্টাল”ও “পেইজ ” সম্পর্কে ও অবহিত করা হয়।
প্রতিবেদনকারী :
সুরাইয়া আক্তার
কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
আঞ্চলিক অফিস, কুমিল্লা