মোস্তাফিজ নোমান, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ
খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি, জমিভাড়া, গুণগত মানের সমস্যা এবং পোনাকে মাছে পরিণত করার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ বছরের এপ্রিলে কানিহারী ইউনিয়নের সরকারি এক পরিত্যক্ত পুকুরের ৫৮ শতাংশ জমিতে ৬৫ হাজার পাঙ্গাশের পোনা দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এআই অ্যাপটি ব্যবহার করা হয়। মাছের খাবার চাহিদা পূরণ ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহে অ্যাপটির সঙ্গে ১২টি যন্ত্রের সংযোগ আছে।
এই পদ্ধতি ব্যবহারে গত সাত মাসে ৫৫ গ্রামের পোনার ওজন হয়েছে এক হাজার ২০০ গ্রাম। প্রতিটি মাছে খরচ হয়েছে ১০৫ টাকা।
মৎস্য চাষি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘আমরা সাধারণত ৫৮ শতাংশ জমিতে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১১ হাজার মাছ উৎপাদন করে থাকি। ৫০ থেকে ৬০ গ্রামের একটি পোনাকে এক কেজির মাছে পরিণত করতে আমাদের খরচ হয় ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। আর যদি খাদ্য ও পানির গুণগত মান, স্বাভাবিক অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে, তবে মাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। তখন ব্যয় দাঁড়ায় ১২০ টাকা। এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা গেলে প্রতি কেজি মাছে উৎপাদন খরচ কমবে ১০ থেকে ১৫ টাকা। আর একই পরিমাণ জমিতে ছয় গুণ বেশি মাছ উৎপাদন সম্ভব।’
এআই প্রযুক্তিতে মাছ চাষ প্রকল্পের কারিগরি পরামর্শক রনি সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অত্যাধুনিক অ্যাকোয়া কালচার ৪.০ প্রযুক্তি ও বিদ্যমান পুকুরে ভার্টিক্যাল এক্সপানশন পদ্ধতির সমন্বিত ব্যবহারে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে একজন চাষি প্রতিনিয়ত তার পুকুরের অক্সিজেন লেভেল, কাদার পরিমাণ, পানির দূষণ সম্পর্কে সার্বক্ষণিক তথ্য পাবে। প্রতিষেধক যন্ত্র ব্যবহার করে এআই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমস্যার সমাধান দেবে।
তা ছাড়া মাছের যতটুকু খাবারের চাহিদা, শুধু তা গ্রহণের পরই স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাবার দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। সময় ও চাহিদা অনুযায়ী মাছ আবার তার খাবার গ্রহণ করবে। আর এই প্রযুক্তি ব্যবহারে একজন চাষির অতিরিক্ত তিন থেকে চার লাখ টাকা ব্যয় হবে। তবে সঠিকভাবে ব্যবহার করে আমাদের পাইলট প্রকল্পের অংশটুকু থেকে সাশ্রয় হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। এতে মাছের দাম কম বা খাদ্যের দাম স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকলেও একজন চাষিকে লোকসান গুনতে হবে না। এআইয়ের ভেতরে এত বেশি তথ্য সরবরাহ করা আছে, যা দিয়ে একজন চাষি প্রতি মিনিটের অক্সিজেন লেভেল, টেম্পারেচার, সম্ভাব্য টেম্পারেচার, খাবারের চাহিদা, পানিতে কী সমস্যা হচ্ছে—সব কিছু জানতে পারবে।’
এই পদ্ধতি ব্যবহারের উদ্ভাবক ও ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সাত মাসের একটি পরীক্ষামূলক ব্যবহারে আমরা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সফলতা পেয়েছি। এখন চাষিরা এই পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের আগ্রহ দেখাচ্ছে। আধুনিক এই প্রযুক্তি ব্যবহারে একদিকে যেমন জমির সাশ্রয় হবে, অন্যদিকে চাষিদের উৎপাদন খরচ কমায় তারা অধিক মুনাফা পাবে।’