ব্রাহ্মণবাড়িয়া: রবিবার,
২ অগ্রহায়ণ (১৭ নভেম্বর)
আজকের শিক্ষার্থীদের আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জুলাই- আগস্টের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরাই আমাদের নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে। রক্ত দিয়ে যারা নতুন স্বাধীনতা উপহার দিয়েছে সেই স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে আমাদের কাজ করতে হবে।
রবিবার, সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্ত্বরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষার উন্নয়ন (পিএসই) প্রকল্প আন্ত:স্কুল বিজ্ঞান উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেছেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেছেন, খুদে বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞান স্টলে যেভাবে যুদ্ধ বিমান, কৃষি, মৎস্য, বিদ্যুৎ, এমনকি সৌর বিদ্যুতের আধুনিক প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় যেভাবে উপস্হাপন করছে এ বিজ্ঞানীরাই একসময় বড় বিজ্ঞানীরূপে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিবে। শিক্ষার্থীদের ছোট বেলায় থেকেই বিজ্ঞানী হওয়ার বাসনা থাকতে হবে। উপদেষ্টা প্রতিটি জেলাতে এধরনের বিজ্ঞান উৎসব করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে পরামর্শ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
উপদেষ্টা আরও বলেছেন, ইতোপূর্বে শিক্ষাতে দুর্নীতি ও রাজনীতি মিশে যাওয়ার ফলে প্রকৃত শিক্ষা থেকে আমরা বঞ্চিত হয়েছি।অন্তর্বতীকালীন সরকার তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে অত্যন্ত আন্তরিক।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেছেন, এ সরকারের প্রয়োজনীয় সময়টাকে কেউ যদি বিলম্ব মনে করে সেটা অন্য বিষয়। প্রয়োজনের চেয়ে একদিনও বেশি থাকতে চাই না। সেটা সময় নির্ধারণ করবে। ডিসেম্বর মাস পার হতে দিন। কারণ অনেকগুলো সংস্কারের রিপোর্ট আসবে। তার প্রেক্ষিতে পরবর্তী ধাপ বুঝা যাবে। যে সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে এর প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ধাপ বোঝা যাবে।
ফরিদা আখতার বলেছেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে যে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে এটা যেন পূর্বের অবস্থায় ফিরে না যায়। পূর্বের যে অনাচার ছিল, অত্যাচার ছিল ও দুর্নীতি ছিল সেগুলো যেন কিছুটা হলেও আমরা ঠিক করে যেতে পারি। আমরা নিশ্চিত পুরোটা ঠিক করতে পারবো না কিন্তু সঠিকভাবে নির্বাচিত একটা সরকার আসতে পারে জন আখাঙ্খা পূর্ণ করার মতো তাহলে অবশ্যই হবে।
তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকার ছাত্রজনতার রক্তের ওপর দিয়ে গঠিত। এটা নিয়ে আমরা হেলাফেলা করতে পারি না। আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। যে দায়িত্বগুলো একটা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ভাল সরকার গঠিত হতে পারে পরিবেশ তৈরি করতে সংস্কার করা। নিজেদের ইচ্ছেমতো কিছু করছি না।
এসোসিয়েশন ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট (এআরডি)’র প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান রেজভীর সভাপতিত্বে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: তৌফিকুল ইসলাম। এতে শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেছেন এআরডি’র নির্বাহী পরিচালক ইয়াসমিন জাহান, মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তৃতা করেছেন বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
এর আগে উপদেষ্টা জাতীয় পতাকা পতাকা উত্তোলন এবং বিভিন্ন বিজ্ঞান স্টল পরিদর্শন করেছেন।
পরে আজ বিকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর আয়োজিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ( পোল্ট্রি, ডেইরি ও গবাদিপশু) প্রান্তিক খামারীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ভারতের বিষাক্ত পানি তিতাস নদীর পানিকে দূষিত করছে , এবিষয়ে বন,পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
খামারীরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদখাতে অত্যাধিক বিদ্যুৎ বিলের কথা বললে উপদেষ্টা বলেছেন কৃষির মত ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুৎ বিল দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে।
বক্তারা বলেছেন, নদী-বিলগুলো রাজস্বভিত্তিক ইজারা না দিয়ে উৎপাদন ভিত্তিক ইজারা দেয়া হলে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। উপদেষ্টা বলেছেন নদী-বিলগুলো যেন মৎস্যজীবীরা ইজারা পেতে পারে সেজন্য মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। জলাশয়গুলো যেহেতু ভূমি মন্ত্রণালয়ের এবিষয়ে ভূমি উপদেষ্টার সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগের মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপপরিচালক মো: আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা: মো: আতিয়ার রহামানসহ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের প্রান্তিক খামারীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।