ফাতেমা আক্তার পেশায় একজন গৃহিণী, কিন্তু তার পরিচয় এখানেই শেষ নয়। তিনি একজন স্বপ্নবাজ নারী, যিনি নিজ উদ্যোগে নিজের সংসারের টানাপোড়নের দিন বদলের চেষ্টা করে চলেছেন। পাঁচ সদস্যের এই পরিবারে ফাতেমার স্বামী স্থানীয় বাজারে ব্যাগ বিক্রি করেন। আয়ের পথ সংকীর্ণ, আর পরিবারের চাহিদা বেশি। কিন্তু জীবনের প্রতি তার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাকে ভিন্ন এক পথের সন্ধান দিয়েছে।
আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে, কুরবানির ঈদের কিছু দিন আগে স্থানীয় বাজারে গরু কেনার সময় ফাতেমার চোখে একটি আলাদা ধারণার জন্ম হলো। বাজারে দেখলেন, কুরবানির জন্য গরু বিক্রেতারা ভালো লাভ করছেন। অথচ এই লাভের পথ কি শুধুই তাদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে? না, একজন নারী হিসেবে তিনিও এমন কিছু করতে পারেন যা পরিবারে স্থিতি আনতে সক্ষম।
সেই ভাবনা থেকেই ফাতেমা একটি সিদ্ধান্ত নিলেন, পরিবারের সঞ্চয়ের অল্প কিছু টাকা থেকে শুরু করলেন তার উদ্যোগ। প্রথমবার ঈদের ছয় মাস আগে তিনি গড় দাম ৬০-৭০ হাজার টাকায় ছয়টি গরু কিনে আনলেন। লক্ষ্য একটাই—ঈদের সময় এই গরুগুলো বিক্রি করে লাভবান হওয়া।
খাদ্যের যত্নে বিশেষ পরিকল্পনা ফাতেমা জানেন, গরু মোটাতাজা করার জন্য ভালো খাবার প্রয়োজন। তবে খরচ যেন হাতের নাগালের বাইরে চলে না যায়, সে বিষয়েও তাকে সচেতন হতে হবে। তাই তিনি একটি সাশ্রয়ী খাদ্য তালিকা তৈরি করলেন। তার গরুগুলোর প্রতিদিনের খাদ্যে থাকে— চাউলের কুঁড়া, ভূষি, খৈল, সয়াবিন, খড় ও সবুজ ঘাস। খাবারের এই মিশ্রণ তার গরুগুলোকে শুধু স্বাস্থ্যবানই করেনি, বরং ঈদের বাজারে নিয়ে যাওয়ার সময় এগুলো দেখতে একেবারে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
পরিশ্রম আর পরিবারের সহযোগিতা খামারের দায়িত্ব একা ফাতেমার নয়। তার ছেলে, যার বয়স এখন তেরো বছর, প্রতিদিন মায়ের সঙ্গে খামারের কাজকর্মে হাত লাগায়। ভোরে উঠে গরুগুলোর খাবার দেয়া থেকে শুরু করে তাদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব দু’জনেই ভাগাভাগি করে নেন। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ফাতেমা বাড়তি কোনো লোক কাজে রাখেন না। কাজের ভার কিছুটা বেশি হলেও তাদের প্রচেষ্টা এতটাই আন্তরিক যে, গরুগুলো খুব দ্রুত বড় হয়ে ওঠে।
গরু পালনের কাজ শুরু করার আগে ফাতেমা কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ নেননি। তবে তিনি প্রতিনিয়ত শিখেছেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে। যখনই কোনো গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে, তিনি দিশেহারা না হয়ে সরাসরি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে তিনি প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ওষুধ সংগ্রহ করেন। এইভাবে প্রতিটি সমস্যাকে তিনি একটি শেখার সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান।
এই পাঁচ বছরের যাত্রায় ফাতেমা আক্তারের জন্য সবচেয়ে বড় অর্জন হলো তার আত্মবিশ্বাস। কুরবানির ঈদের সময়ে তিনি তার গরুগুলো বিক্রি করে যে আয় করেন, তা শুধু তার সংসারের টানাপোড়ন কমিয়ে দেয় না, বরং তাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখার শক্তি জোগায়।
প্রথম বছর যেখানে তার লাভ ছিল অল্প, এখন তার আয় প্রায় দ্বিগুণ। পরিবার ও সমাজের প্রভাব ফাতেমার এই উদ্যোগ শুধু তার নিজের পরিবারের জন্য নয়, বরং আশপাশের নারীদের জন্যও একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে। তার প্রতিবেশীরা এখন তাকে দেখে উৎসাহিত হন।
ফাতেমার স্বপ্ন এখানেই থেমে নেই। ভবিষ্যতে তিনি একটি বড় খামার তৈরি করতে চান, যেখানে একসঙ্গে বেশি সংখ্যক গরু পালন করা সম্ভব হবে। তার লক্ষ্য হলো এই খামারকে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দেয়া, যা শুধু তার পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নতিই করবে না, বরং আশপাশের মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করবে।
সবশেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর থেকে তাকে প্রাণিসম্পদ বিষয়ক বিভিন্ন লিফলেট প্রদান করা হয় এসাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের পরিচিতি দেয়া হয় । পাশাপাশি “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য ভান্ডার”“এ্যাপস” “নিউজ পোর্টাল”ও “পেইজ ” সম্পর্কে ও অবহিত করা হয়।
প্রতিবেদনকারী :
সুরাইয়া আক্তার
কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
আঞ্চলিক অফিস, কুমিল্লা