০৮.১২.২০২৪ খ্রি.
আক্কাস আলীর জন্ম গাজীপুর জেলার নবীনগর উপজেলার এক সাধারণ কৃষক পরিবারে। পাঁচ সদস্যের পরিবারে, দুই ছেলে,এক মেয়ে, স্ত্রী, আর তিনি। এভাবেই কাটছিল তাদের দিন। কিন্তু জীবনের চাহিদা আর দায়িত্ববোধ তাকে একসময় তার শিকড় ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করল। জীবিকার তাগিদে তিনি চলে এলেন কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলায়। এখানে এসে তিনি শুরু করলেন তার নতুন জীবনের যাত্রা। নতুন শহরে নতুন সংগ্রাম কুমিল্লায় এসে প্রথমে তিনি মাছের ব্যবসা শুরু করলেন। স্থানীয় বাজার থেকে মাছ সংগ্রহ করে গ্রামে বিক্রি করতেন। এই কাজটি প্রথমে ভালো চলছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়তে থাকে।
আয় কমতে শুরু করায় আক্কাস আলী নতুন কিছু করার পরিকল্পনা করেন। এরই মধ্যে তিনি খেয়াল করলেন যে স্থানীয় বাজারে মুরগির বাচ্চার চাহিদা অনেক। তার মাথায় এল একটি নতুন উদ্যোগ মুরগির খামারের কথ।
মুরগির খামারের যাত্রা আক্কাস আলী প্রথমে বগুড়া থেকে ১ দিনের মুরগির বাচ্চা সংগ্রহ করা শুরু করেন। এই বাচ্চাগুলো তিনি তার খামারে ১৫ দিন পর্যন্ত পালন করতেন।বর্তমানে তার খামারে রয়েছে দেড়শ মুরগির বাচ্চা। এই সময়ের মধ্যে বাচ্চাগুলোকে সঠিকভাবে যত্ন নেওয়া, খাবার সরবরাহ করা, আর তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে খেয়াল রাখা ছিল তার প্রধান কাজ।
প্রথমে কাজটি কঠিন মনে হলেও ধীরে ধীরে তিনি এতে দক্ষ হয়ে ওঠেন। বাচ্চাগুলোর দেখাশোনার জন্য তিনি একজন শ্রমিক নিয়োগ করেন, যিনি সারাদিন তাদের যত্ন করেন। মুরগির বাচ্চার ব্রুডিং এর জন্য আক্কাস আলী কাঠের গুঁড়ো ব্যবহার করে মেঝে তৈরি করেন। এটি বাচ্চাদের আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করে এবং রোগবালাই কমাতে সাহায্য করে।
খামারে পালন করা বাচ্চাগুলো তিনি স্থানীয় বাজারে খুচরা ও পাইকারি দামে বিক্রি করতে শুরু করেন। কখনো সরাসরি গ্রাহকদের কাছে, কখনো বা অন্যান্য খামারির কাছে বিক্রি করেন। এভাবে তার ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে।
সময়ের সাথে সাথে তিনি শুধু মুরগির বাচ্চাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। মুরগির পাশাপাশি আক্কাস আলী তার খামারে টার্কি, কোয়েল এবং তিতির পালন শুরু করেন। এসব পাখির চাহিদা স্থানীয় বাজারে ধীরে ধীরে বাড়ছিল। বিশেষ করে টার্কি ও কোয়েলের মাংসের জন্য ভালো বাজার তৈরি হয়েছিল। এটি তার আয় আরও বাড়িয়ে দেয়।
পাখি ও মুরগির বাচ্চাগুলো কোনো কারণে অসুস্থ হলে তিনি সাথে সাথে সদর দক্ষিণ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করেন। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা তাকে সঠিক পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করেন। মো.আক্কাস আলী কখনো প্রশিক্ষণ অংশগ্রহণ করেননি কিন্তু সুযোগ পেলে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করবেন যাতে তিনি তার খামারের উন্নতি করতে পারেন।
পরিবারের সহায়তা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তার এই সাফল্যের পেছনে পরিবারের অবদান ছিল অসীম। স্ত্রী ও সন্তানরা তাকে মানসিক সমর্থন দিতেন এবং প্রয়োজনে খামারের কাজে সাহায্য করতেন। ভবিষ্যতে তিনি তার খামারের পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। একটি বড় পরিসরে টার্কি ও কোয়েলের ব্যবসা শুরু করার ইচ্ছা তার।
সবশেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর থেকে তাকে প্রাণিসম্পদ বিষয়ক বিভিন্ন লিফলেট প্রদান করা হয় । পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের পরিচিতি দেয়া হয় । পাশাপাশি “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য ভান্ডার”“এ্যাপস” “নিউজ পোর্টাল”ও “পেইজ ” সম্পর্কে ও অবহিত করা হয়।
প্রতিবেদনকারী :
সুরাইয়া আক্তার
কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
আঞ্চলিক অফিস, কুমিল্লা