কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো.ফরিদ। ফরিদ তার গ্রাম্য পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এক ছোট্ট সুখী সংসার গড়ে তুলেছেন। তিনি পেশায় একজন কৃষক হলেও, তার জীবন ছিল পরিপূর্ণ এবং সার্থক। একটি শান্তিপূর্ণ কৃষক জীবনে ফরিদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জন—স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। ধানের জমি চাষ এবং বিভিন্ন শাক-সবজি আবাদ করেই তার পরিবারের দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটে যেত। বছরজুড়ে কৃষি কাজের ব্যস্ততা এবং পরিবারের সদস্যদের যত্ন নেওয়ার মাঝেই কেটে যেত দিন। তবুও তিনি সবসময় পরিশ্রমী এবং হাসিখুশি থাকতেন।
কৃষকের জীবন সহজ নয়, তবে তিনি তার জীবনের প্রত্যেকটি মুহূর্তের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন। ফরিদের পূর্বপুরুষরা গরু পালন করতেন। পৈত্রিক সূত্রে তার পিতা থেকে পাওয়া দুটি গরু দিয়েই তার খামারের যাত্রা । প্রথমদিকে, গরু পালনে খুব বেশি অভিজ্ঞতা না থাকলেও, নিজের আগ্রহ ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তিনি খামারটিকে সফলভাবে পরিচালনা করতে শিখেছেন। গরু পালন থেকে আয় বৃদ্ধি পেতে থাকায় তিনি আরও বেশি মনোযোগী হন এবং ধীরে ধীরে গরুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। বর্তমানে ফরিদের খামারে ১২টি দেশীয় জাতের গরু রয়েছে। এর মধ্যে কিছু দুগ্ধবতী গাভী, কিছু ষাঁড় এবং কয়েকটি বাছুর। প্রতিদিন গরুর খাবারের জন্য তিনি নির্দিষ্ট একটি খাদ্য তালিকা তৈরি করেছেন। তার খাদ্য তালিকায় রয়েছে ভাতের মাড়, চালের ভাঙা, ভুট্টার গুঁড়া, খৈল, সয়াবিন, খড়, এবং সবুজ ঘাস। সবুজ ঘাসের চাহিদা পূরণ করতে তিনি ১২ শতক জমিতে নেপিয়ার ঘাস চাষ করেছেন। এই ঘাস খামারের গরুগুলোর প্রধান খাদ্য।ঘাসের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত হওয়ায় তার খামারের গরুগুলো সবসময় সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।
প্রতিবছর কুরবানির ঈদে মো.ফরিদ ৩-৪টি ষাঁড় গরু বিক্রি করেন। এ থেকে তিনি ভালো আয় করেন, যা তার পরিবারের বাড়তি চাহিদা মেটাতে সাহায্য করে। সাধারণত তিনি তার গাভী থেকে প্রাপ্ত ষাঁড় গরুগুলো দুই বছর পালন করেন এবং তারপর বিক্রি করেন। গাভী থেকে প্রাপ্ত বকনা বাছুর তিনি খামারে রেখে দেন, যা খামারের সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মো.ফরিদ তার খামারে একজন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন, যিনি গরুগুলোর খাবার সরবরাহ এবং দেখাশোনার দায়িত্বে আছেন। তবে তিনি নিজেও প্রতিদিন খামারে সময় দেন। তিনি বিশ্বাস করেন, গরুর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যত্নই তাদের সুস্থ এবং উৎপাদনশীল রাখার চাবিকাঠি। প্রতিটি গরুর খাদ্যতালিকা, বিশ্রাম এবং চিকিৎসার বিষয়টি তিনি খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখেন।
মো.ফরিদ বলেন,খামারের গরুগুলোর সুস্থতা বজায় রাখতে অত্যন্ত যত্নবান হওয়া দরকার। যদি কোনো গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে, তবে তিনি দেরি না করে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেন এবং গরুর যথাযথ চিকিৎসা করেন। এছাড়া, অনেক সময় তিনি স্থানীয় প্রাণি চিকিৎসকের সহায়তা নেন। তিনি নিয়মিত তার গরুগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। এটি তার খামারের পশুগুলোর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনকি, নতুন বাছুর জন্মানোর সময় তিনি সবসময় একজন চিকিৎসককে উপস্থিত রাখেন, যাতে যে কোনো ধরনের জটিলতা এড়ানো যায়।
মো.ফরিদের খামারের যাত্রা কখনোই মসৃণ ছিল না। গরুর খাবারের মূল্যবৃদ্ধি, রোগব্যাধি, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবসময়ই তার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসেছে। তবে তিনি তার নিজের পরিশ্রম এবং সাহসের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করেছেন। তার সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো, তিনি গরু পালনের মাধ্যমে তার পরিবারের জন্য একটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরি করতে পেরেছেন। গরুর দুধ ও গরু বিক্রি থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তিনি তার সন্তানদের শিক্ষার ব্যয় বহন করছেন। এছাড়া, তার খামার থেকে এলাকার মানুষও উপকৃত হচ্ছে। অনেকেই তার খামার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে গরু পালনের দিকে ঝুঁকছেন
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর থেকে তাকে প্রাণিসম্পদ বিষয়ক বিভিন্ন লিফলেট প্রদান করা হয় । পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের পরিচিতি দেয়া হয় । এছড়া “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য ভান্ডার”“এ্যাপস” “নিউজ পোর্টাল”ও “পেইজ ” সম্পর্কে ও অবহিত করা হয়। যেখানে তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য জানতে পারবেন। পাশাপাশি নিজের সফলতা দিয়ে আরো অনেক নতুন উদ্যোক্তাদের মনে অনুপ্রেরণা জাগাবেন। সর্বশেষে তাকে প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত যে কোন তাৎক্ষনিক সেবা পেতে ১৬৩৫৮ কল সেন্টারে যোগাযেগ করতে বলা হয়।
প্রতিবেদনকারী :
সুরাইয়া আক্তার
কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
আঞ্চলিক অফিস, কুমিল্লা