অনলাইন ডেস্ক
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্র এবং চিলির গবেষকরা সাগরের এমনই এক বিস্ময়কর প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত আতাকামা ট্রেঞ্চে পাওয়া গেছে ‘ডুলসিবেলা কামানচাকা’ নামের এক নতুন প্রজাতির অ্যামফিপড। চারটি নমুনা পাওয়া গেছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭,৯০০ মিটার গভীরতায়। এই প্রজাতি শুধুমাত্র এর শিকারি আচরণের জন্য নয়, বরং নতুন একটি গণের (genus) প্রতিনিধি হিসেবে আবিষ্কৃত হওয়ায় এটি বিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অ্যামফিপড সাধারণত পচা জৈব পদার্থ বা মৃত প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু ‘ডুলসিবেলা কামানচাকা’ ব্যতিক্রম। এটি সক্রিয়ভাবে শিকার করে। ৬,০০০ মিটারের নিচে থাকা মহাসাগরের হাডাল জোনে এই প্রজাতি শিকারি অ্যামফিপড হিসেবে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই অঞ্চলের রহস্য উন্মোচন শুধু মহাসাগর নিয়ে নয়, বরং পৃথিবীর বাইরের গ্রহ বা উপগ্রহেও সম্ভাব্য প্রাণের অস্তিত্ব বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
‘ডুলসিবেলা’ নামটি স্প্যানিশ উপন্যাস ডন কিহোতের চরিত্র ডুলসিনিয়ার নামে রাখা হয়েছে। তবে আগেই একটি পোকাকে ‘ডুলসিনিয়া’ নাম দেওয়া হয়েছিল, তাই স্থানীয় ভাষা থেকে ‘কামানচাকা’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে, যার অর্থ ‘অন্ধকার’। নামটি এর বসবাসের গভীর অন্ধকার পরিবেশের প্রতি ইঙ্গিত করে।
প্রায় ৪ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের ফ্যাকাশে সাদা রঙের এই অ্যামফিপডটি অন্ধকার আর ঠান্ডা পরিবেশের সঙ্গে দারুণভাবে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। এর বিশেষায়িত র্যাপটোরিয়াল অ্যাপেন্ডেজ (gnathopods) প্রজাতিটিকে শিকার ধরতে এবং খেতে সহায়তা করে।
২০২৩ সালে চিলির ইন্টিগ্রেটেড ডিপ-ওশান অবজারভিং সিস্টেমের এক অভিযানে এই নতুন প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়। গবেষকরা ল্যান্ডার যান ব্যবহার করে প্রলুব্ধ করার ফাঁদে (baited trap) ফেলে এই বিরল প্রজাতি সংগ্রহ করেন। এটি কেবল গভীর সমুদ্রজীবনের বিষয়ে নতুন ধারণা দেয়নি, বরং পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন পরিবেশেও প্রাণের অভিযোজন এবং জীববৈচিত্র্যের এক নতুন মাত্রা তুলে ধরেছে।
এই আবিষ্কার সমুদ্র গবেষণায় একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক হয়ে থাকবে, যা ভবিষ্যতে আরও অজানা রহস্য উন্মোচনে সহায়তা করবে।