প্রতিনিধ
গোয়ালন্দ, রাজবাড়ী
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে এবার প্রকাশ্যে বিক্রি হলো ৫২ কেজি ওজনের মহাবিপন্ন বাগাড় মাছ। পদ্মা নদী থেকে বাগাড়টি শিকার করেন পাবনা অঞ্চলের জেলেরা। গতকাল রোববার বিকেলে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাঙ্গাইলের আরেক ব্যবসায়ী ৭৩ হাজার টাকায় মাছটি কিনে নেন। মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে বাগাড় শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও প্রকাশ্যে নিলামে এটি বিক্রি হয়েছে।
দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখ বলেন, সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বাগাড়টি কিনতে লেগেছে ৬৭ হাজার ৮০০ টাকা। পরে তিনি এটি বিক্রির জন্য তাঁর ফেসবুক পেজে ভিডিও ছাড়েন। পরিচিত লোকজনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। বিকেলের দিকে টাঙ্গাইলের একজন ব্যবসায়ী কেজিপ্রতি ১০০ টাকা করে লাভে ৭৩ হাজার টাকায় মাছটি কিনে নেন। সন্ধ্যার আগেই বাগাড়টি তাঁদের লোকজন দিয়ে টাঙ্গাইলে পৌঁছে দেন তিনি।
মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে বাগাড় শিকার ও বিক্রি নিষিদ্ধ বিষয়ে জানতে চাইলে
শাহজাহান শেখ বলেন, ‘পদ্মা ও যমুনা নদীতে জেলেরা অন্যান্য মাছের সঙ্গে বাগাড় মাছও প্রকাশ্যে শিকার করছেন। বাজারে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে নিলামে বিক্রি হচ্ছে। প্রকাশ্যে শিকার করা হয়, বিক্রি হলে আমাদের কিনতে দোষ কিসের? এখানে কখনোই দেখিনি বাগাড় মাছ বিক্রি বন্ধে সরকারিভাবে কোনো অভিযান চালাতে।’
আইইউসিএনের তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, বাগাড় শিকার করা, ধরা ও বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন না থাকায় বাগাড় শিকার ও প্রকাশ্যে বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন মৎস্যজীবী জানান, এই মৌসুমে অর্ধশতাধিক বাগাড় মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়েছে। রাজবাড়ী ছাড়াও পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ অঞ্চলের জেলেরা ফাসন জালে পাঙাশ, রুই, কাতলা মাছের পাশাপাশি বাগাড় শিকার করছেন।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, বাগাড় শিকার করা, ধরা ও বিক্রি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন না থাকায় বাগাড় শিকার ও প্রকাশ্যে বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। ইলিশ, পাঙাশ, রুই, কাতলা মাছের সঙ্গে পদ্মা ও যমুনা নদীতে কোনো বাধা ছাড়াই জেলেরা শিকার করছেন মহাবিপন্ন প্রাণী এই বাগাড়।
বাগাড় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২–এর আওতাভুক্ত হওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে বন বিভাগের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজবাড়ী সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাগাড় বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন ২০১২–এর আওতাভুক্ত হওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারি না। মৎস্য সংরক্ষণ আইনের আওতায় আনতে বিভিন্ন মহলে বিষয়টি উত্থাপিত হচ্ছে। তবে বন বিভাগের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা ব্যবস্থা নিতে পারে।’