ঢাকা, ২৪-১২-২৪ খ্রি.
মাছের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক একটি আধুনিক ধারণা। জিন ব্যাংক মূলত কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদের জেনেটিক উপাদানের সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা। কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ যখন হুমকির সম্মুখীন হয় তখন জিন ব্যাংকের প্রয়োজন পড়ে। প্রাকৃতিক উৎসে কোনো দেশি মাছ হারিয়ে গেলে সেসব মাছকে পুনরুদ্ধারের জন্য লাইভ জিন ব্যাংক থেকে ব্যবহার করা হয়।সে ক্ষেত্রে লাইভ জিন ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট মাছকে হ্যাচারিতে কৃত্রিম উপায়ে পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে আনা হয়।
জলজ সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের এই দেশ। অতীতে দেশের নদ নদী খাল-বিল এবং প্লাবনভূমিসহ সকল জলাশয়ে নানা প্রজাতির প্রচুর মাছ ছিল। পরবর্তীতে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি কাজে কীটনাশকের অপরিমিত ব্যবহার,অতি আহরণ, পানি দূষণ এবং এর অবক্ষয়সহ পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছের উৎপাদন ও জীববৈচিত্র হ্রাস পাচ্ছে। নানা প্রতিকুলতায় জীববৈচিত্র্যের এ হুমকির জন্য হারিয়ে যাওয়া দেশি মাছ সংরক্ষণে দেশে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএফআরআই) দেশীয় মাছের লাইভ জীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গত ০৫ সেপ্টেম্বের ২০২০ সালে দেশের প্রথম দেশীয় মাছের এ লাইভ জীন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয়।
দেশের জলাশয়ে ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও ২৬০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৩ প্রজাতির ছোট মাছ রয়েছে এবং (আইইউসিএন-২০১৫) এর তথ্য মতে দেশের সাধু পানির ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তপ্রায়। দেশি ২৬০ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও এর উৎপাদন বাড়িয়ে বাণিজ্যিকভাবে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করাই এ উদ্যোগের লক্ষ্য। এখন পর্যন্ত ১১০ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে এ লাইভ জিন ব্যাংকে। সারা দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা এসব মাছ সংরক্ষণ করে উৎপাদন বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।
প্রতিষ্ঠিত এ লাইভ জীন ব্যাংকে দেশের বিলুপ্তপ্রায় ভাগনা, দেশি কই, নাপিত কই, গুলশা, খলিশা, লাল খলিশা, মাগুর, বোয়ালি পাবদা, সরপুঁটি, পুঁটি, শিং, মহাশোল, রুই, বুজুরি টেংরা, ভিটা টেংরা, গুলশা, বাটা, রিটা, মলা, পুইয়া গুতুম, পাহাড়ী গুতুম, ঠোঁট পুইয়া, শাল বাইম, টাকি, ফলি, ঢেলা, চেলা, লম্বা চান্দা, রাঙা চান্দা, লাল চান্দা, পিয়ালি, বৈরালি, দারকিনা, ইংলা, কেপ চেলা, রাণী, লোহা চাটা রাণী, কাকিলা, কাজলী, বাচা, বাতাসি, আঙ্গুস, কানপোনা, ঘাউরা, ভেদা, একঠুটি কাকিলা, বাসপাতা, জারুয়া, কেলে টেংরাসহ মোট ১১০ প্রজাতির মাছ স্বাদুপানি কেন্দ্রের তিনটি অলাদা পুকুরে খাদ্যাভ্যাস অনুযায়ী সংরক্ষণ করা হয়েছে। অপরদিকে নীলফামারী, সৈয়দপুরে অবস্থিত স্বাদুপানি উপকেন্দ্রে অপর একটি লাইভ জীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ; যেখানে ইতোমধ্যে ৬২টি প্রজাতি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকার মাছের প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য লোনা পানি কেন্দ্র, পাইকগাছা, খুলনায় আরো লাইভ জীন ব্যাংক স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
পর্যায়ক্রমে দেশি সব মাছ এসব ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হবে। মাছের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে হ্যাচারিতে দেশি মাছের পোনা ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। বিলুপ্তপ্রায় দেশি মাছের প্রাকৃতিক উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার হাওর-বাঁওড়, বিল ও নদ-নদীতে অধিকসংখ্যক অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা ও বিলুপ্তপ্রায় মাছের পোনা অবমুক্ত করছে। দেশি প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে এ লাইভ জিন ব্যাংক অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। ফলে দেশে বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রাপ্যতা সাম্প্রতিককালে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এইসব মাছের মূল্য সাধারণ ভোক্তাদের সক্ষমতার মধ্যে এসেছে। খাবারের পাতে বৃদ্ধি পেয়েছে দেশী মাছের স্বাদ। দেশীয় মাছ সংরক্ষণসহ গবেষণায় অসামান্য অবধানের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ২০২০ সালে সম্মানজনক একুশে পদক অর্জন করে।
মো. সামছুল আলম
গণযোগাযোগ কর্মকর্তা
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
মাছের লাইভ জিন ব্যাংক ফিরিয়ে আনছে খাবারের পাতে দেশী মাছের স্বাদ
৫