অদ্য- ০৫.০১.২০২৫খ্রি.
গরু পালন বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পেশা। এই পেশার মধ্য দিয়েই একদিন নিজের ও পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার স্বপ্ন দেখেছিলেন মো. জসিম উদ্দিন। কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার ধনেশ্বর গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণকারী এই সংগ্রামী মানুষটি আজ তার দৃঢ় মনোবল ও পরিশ্রমের মাধ্যমে হয়ে উঠেছেন সফল উদ্যোক্তা।
মো. জসিম উদ্দিনের জন্ম হয়েছিল কৃষকের ঘরে। ছোটবেলা থেকেই তিনি কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রাথমিক থেকে শুরু করে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে তার উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি। তবে তিনি থেমে যাননি। কৃষি কাজের পাশাপাশি গরু পালন শুরু করেন। প্রথম দিকে পারিবারিক প্রয়োজনে শুরু করা এই গরু পালনের কাজটি ধীরে ধীরে তার জন্য একটি স্বপ্নে পরিণত হয়।
তিন ছেলে সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি সংসার চালানোর জন্য জসিম উদ্দিন তার গরুর খামারকে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপ দেওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রথম ধাপ ছিল তার ছেলেদের শিক্ষিত করে তোলা। তার এক ছেলে বর্তমানে একটি ব্যাংকে চাকরি করেন, যা তার পরিবারের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করেছে এবং তাকে খামারের প্রসারে সহায়তা করেছে।
চার বছর আগে জসিম উদ্দিন তার ছেলেদের সহায়তায় ১০টি গরু নিয়ে আর হেরা এগ্রোটেক ফার্মের যাত্রা শুরু করেন। তার লক্ষ্য ছিল খামারকে একটি আধুনিক ও মডেল খামারে রূপান্তরিত করা। বর্তমানে তার খামারে ছোট-বড় মিলে ৭০টিরও বেশি দেশি, জার্সি এবং হলেস্ট্রাইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু রয়েছে।
খাদ্য ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা খামারের গরুগুলোর সুস্থতা এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে তিনি অত্যন্ত যত্নশীল। খাদ্য হিসেবে তিনি গরুলোকে ভূষি, খৈল, চালের কুঁড়া, সয়াবিন, সবুজ ঘাস এবং খড় খাওয়ান। খামারের ৮ শতক জমিতে তিনি নিজেই সবুজ ঘাস চাষ করেন।
গরু স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার জন্য খামারে একটি কোয়ারান্টাইন সেন্টার স্থাপন করেছেন। নতুন গরু খামারে আনার আগে এক সপ্তাহ ধরে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। অসুস্থ গরুগুলোকে দ্রুত আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবং পশু চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি গরুদের সুস্থ রাখতে সক্ষম হয়েছেন।
খামার পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতি সপ্তাহে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে মেঝে পরিষ্কার করা হয়। এছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পাইপলাইন সিস্টেম তৈরি করেছেন। এসব ব্যবস্থার ফলে তার খামারটি সবসময় পরিচ্ছন্ন এবং স্বাস্থ্যকর থাকে।
বর্তমানে খামারের ৩৫টি গাভী থেকে দৈনিক ১৬০ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। দুধ স্থানীয় বেপারিদের কাছে এবং মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করেন। প্রতিলিটার দুধের মূল্য ৬৫ টাকা, যা থেকে তার মাসিক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আয় হয়।
মো. জসিম উদ্দিনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও দূরদর্শী। আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে তিনি খামারে ৫০টি ষাঁড় যোগ করার পরিকল্পনা করছেন। এই ষাঁড়গুলো কোরবানির পশু হিসেবে বিক্রি করবেন। এছাড়া, উৎপাদিত দুধ এবং মাংস ব্যবহার করে তিনি একটি রেস্টুরেন্ট খোলার পরিকল্পনা করেছেন। এখানেই শেষ নয়, জসিম উদ্দিন গোবর দিয়ে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনেরও পরিকল্পনা করছেন। এই বায়োগ্যাস তিনি নিজের খামারে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করবেন এবং এর অতিরিক্ত অংশ স্থানীয়দের জন্য সরবরাহ করার উদ্যোগ নেবেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর থেকে তাকে প্রাণিসম্পদ বিষয়ক বিভিন্ন লিফলেট প্রদান করা হয় এসাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের পরিচিতি দেয়া হয় । এছড়া “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য ভান্ডার”“এ্যাপস” “নিউজ পোর্টাল”ও “পেইজ ” সম্পর্কে ও অবহিত করা হয়। যেখানে তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত যে কোনো তথ্য জানতে পারবেন। পাশাপাশি নিজের সফলতা দিয়ে আরো অনেক নতুন উদ্যোক্তাদের মনে অনুপ্রেরণা জাগাবেন। সর্বশেষে তাকে প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত যে কোন তাৎক্ষনিক সেবা পেতে ১৬৩৫৮ কল সেন্টারে যোগাযেগ করতে বলা হয়।
প্রতিবেদনকারী :
সুরাইয়া আক্তার
কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর
আঞ্চলিক অফিস, কুমিল্লা