১৬.০১.২০২৫ খ্রি. নূরে আলম, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার কাজী পাড়া এলাকার বাসিন্দা, একজন সফল উদ্যোক্তা যিনি ২০১৮ সালে মাছ ও গবাদিপশু খামার পরিচালনা শুরু করেন। বিদেশ থেকে ফিরে এসে নিজের স্বাবলম্বিতা অর্জন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি এই খামারটি শুরু করেন। তার খামারের মুনাফা ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে তিনি অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থান তৈরির চেষ্টা করছেন।
প্রথমে তিনি সিঙ্গাপুরে কাজ করতেন, কিন্তু দেশে ফিরে ২০১৮ সালে মাছ ও গবাদিপশু খামার প্রতিষ্ঠা করেন। তার খামারের মৎস্য চাষের পদ্ধতি রই জাতীয় মিশ্র চাষ। তিনি ৩ একর পুকুরে মাছ চাষ করছেন, যেখানে বাহির থেকে ভাসমান ফিড, খৈল ও ভুসি খাবারের উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়। এর ফলে মাছের বৃদ্ধি ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং খামারে আরও ভাল ফলাফল দেখা যাচ্ছে।
গবাদিপশুর ক্ষেত্রে, নূরে আলম অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী, ষাড় এবং বাছুর পালন করছেন। তার খামারে বর্তমানে ৪টি গাভী, ৫টি ষাড় এবং ৪টি বাছুর রয়েছে। তার খামারের গাভীগুলি দিনে ৩০ লিটার দুধ উৎপন্ন করে, যা তিনি স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। এই দুধ উৎপাদনের মাধ্যমে তার ব্যবসা বেশ লাভজনক হয়ে উঠেছে এবং দেশের মধ্যে তার খামারের পণ্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
এছাড়াও, তার খামারে ৫৬ শতাংশ জমিতে কাঁচা ঘাস চাষ করা হচ্ছে, যা গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি, বাহির থেকে ভুট্টা, সয়াবিন, খৈল, ভুসি আমদানি করে পশুর খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এই উপাদানগুলো গবাদিপশুর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, যার ফলে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে, নূরে আলমের খামারে গবাদিপশুর মধ্যে ক্ষুরা রোগের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে, তবে প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য অফিসের সঙ্গে তার কোন যোগাযোগ নেই। তিনি নিজের উদ্যোগে এসব সমস্যার সমাধান করতে চেষ্টা করছেন, এবং ভবিষ্যতে খামারের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে সাহায্য পেতে চান।
নূরে আলম তার খামারে ২ জন কর্মচারী নিয়োগ করেছেন, যারা প্রতিজন মাসে ১৬,০০০ টাকা বেতন পান। এই কর্মচারীরা তার খামারের কাজকর্ম পরিচালনায় সাহায্য করেন এবং খামারটি বড় করার পথে অবদান রাখছেন। তার খামারটি স্থানীয় জনগণের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করছে, এবং আশেপাশের এলাকার মানুষও তার খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
নূরে আলমের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। তার মাসিক আয় ২,০০,০০০ – ২,৫০,০০০ টাকা, যা তার খামারের আয় থেকে আসে। তার মাসিক ব্যয় ১,২০,০০০ টাকা, যা খামারের ব্যবস্থাপনা, কর্মচারীদের বেতন, খাদ্য উপাদান ও অন্যান্য খরচে ব্যয় হয়।
ভবিষ্যতে, নূরে আলম তার খামার আরও সম্প্রসারণ করতে চান এবং একটি ডেইরি ফার্ম স্থাপন করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি খামারের আকার আরও বড় করার পাশাপাশি, শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে চান। তার লক্ষ্য হলো, তার খামারের দুধ, মিষ্টি, রসমালাই ও ঘি দেশে এবং বিদেশে বিক্রি করে একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
নূরে আলমের উদ্যোগ এবং পরিশ্রমের ফলে তার খামারটি একটি সফল ব্যবসায় পরিণত হয়েছে এবং তার এই দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই খামার করতে এগিয়ে আসছেন। তার খামার শুধু তার নিজের জন্য নয়, বরং আশেপাশের জনগণের জন্যও একটি বড় অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করেছে।
সবশেষে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর কর্তৃক প্রকাশিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক বিভিন্ন মুদ্রণ সামগ্রী বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। এবং তথ্য দপ্তরের পরিচিতি দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের মোবাইল অ্যাপস “মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য ভাণ্ডার” সম্পর্কেও অবগত করা হয়।
প্রতিবেদনকারী।
খালেক হাসান, কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, কুমিল্লা