প্রতিনিধি

পাবনার বেড়া উপজেলার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে হুরাসাগর নদে খাঁচায় করে মাছ চাষের বিষয়টি প্রথমবার দেখেন আমির আলী। তখন থেকেই তাঁর আগ্রহ জন্মায়। পরে খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর কিছুদিনের মধ্যেই উপজেলার বৃশালিখা মহল্লার পাশে হুরাসাগর নদে নিজের ৪০টি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন। এখন সেই খাঁচার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০-এ।
আমির আলীর বাড়ি সুজানগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে। আগে লুঙ্গি-গামছার ব্যবসা করতেন। এতে লাভের বদলে তাঁকে লোকসান গুনতে হচ্ছিল। নদের পানিতে খাঁচায় মাছ চাষের নতুন পদ্ধতি দেখে তাঁর মনে হয়, এটিই হতে পারে জীবনের মোড় পরিবর্তনের পথ। তাই পাশের বেড়া উপজেলার হুরাসাগর নদে বছরখানেক আগে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেন।
আমির একা নন, একই রকম অভিজ্ঞতা আরও কয়েকজনের। ২০২৩ সালে বেড়া পৌর এলাকার বৃশালিখা মহল্লায় হতদরিদ্র ২০ জন সদস্য নিয়ে ‘মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’ গড়েন স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মুন্নাফ। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা এবং স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা পিপিডির (প্রোগ্রামস ফর পিপলস ডেভেলপমেন্ট) কারিগরি সহযোগিতায় তাঁরা নদীর পানিতে খাঁচায় করে ‘মনোসেক্স তেলাপিয়া’ মাছের চাষ শুরু করেন।
মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির উদ্যোগে প্রথমে ২০টি খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করা হয়। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে এগুলো বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৬০-এ। শিগগিরই তাঁরা খাঁচার সংখ্যা ১০০-তে বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন। তাঁদের সফলতা দেখেই আমিরসহ আরও অনেক উদ্যোক্তা এ পদ্ধতির মাছ চাষে যুক্ত হন এবং হচ্ছেন।
রফিকুল ইসলাম নামের এক উদ্যোক্তা বলেন, নদীর মাছের প্রতি মানুষের চাহিদা ও আগ্রহ বেশি। নদীর প্রবহমান পানিতে খাঁচায় মাছ চাষ কিন্তু পুকুরে চাষের মতো নয়। নদীর পানিতে মাছ প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। তাই স্বাদও ভালো, চাহিদাও বেশি।

শুরুর দিকে বাইরে থেকে মাছের পোনা আনতে হতো। এতে ঝুঁকি আর খরচ দুটোই বেশি। তাই এখন সমবায়ের সদস্যরাই খাঁচায় পোনা তৈরি করছেন। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে এসব পোনা ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। কেউ কেউ নিজেরাই খাঁচায় চাষের জন্য পোনা উৎপাদন করেন। এতে উৎপাদন খরচ কমেছে এবং বাড়ছে লাভের পরিমাণও।
এ বিষয়ে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আবদুল মুন্নাফ বলেন, ‘প্রথমে ভাবিনি এত দ্রুত সফল হব। এখন নিজেরাই পোনা তৈরি করছি, বিক্রিও করছি। লাভের পরিমাণ অনেক বেড়েছে।’

হুরাসাগর নদের পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, জিআই পাইপ, প্লাস্টিকের ড্রাম, নেট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দেড় শতাধিক খাঁচা। এসব খাঁচা নদের পানিতে ভাসিয়ে রাখা হয়েছে। প্রতিটি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয়েছে ১০–১২ হাজার টাকা। একেকটি খাঁচায় সর্বোচ্চ ৫০০-এর মতো মাছ চাষ করা যায়।
এ পদ্ধতিতে মাছ চাষে শুধু মানুষের আয় বাড়ছে না, নদেরও উপকার হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বেড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, খাঁচার আশপাশে নদের দেশি মাছ আশ্রয় নেয়, খাবার পায়, বড় হয়, এমনকি প্রজননও ঘটায়। নদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার দারুণ একটি উপায় এটি। এ পদ্ধতিতে যাঁরা চাষ করছেন, তাঁদের ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
Source: Daily Prothom Alo