ওমর ফারুক
দিনমজুরি করে পাঁচজনের সংসার চালাতেন মতিউর রহমান (৪৮)। অর্থাভাবে কোনো রকম দিন পার করতেন। সেই অবস্থায় সাত বছর আগে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে ৩০০ মুরগির বাচ্চা কিনে খামার করেন। সেই খামারের মাধ্যমেই তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। মুরগির পাশাপাশি দুই বছর ধরে মতিউর হাঁসও পালন করছেন। এখন তাঁর সুখের সংসার।
মতিউর রহমান (৪৮) নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বাগডোব গ্রামের বাসিন্দা। সেখানে তাঁর খামারে বর্তমানে ২ হাজার ২০০টি সোনালি মুরগি এবং ১ হাজার ৩০০টি ব্রয়লার মুরগি রয়েছে। এ ছাড়া ডিম উৎপাদনকারী ক্যাম্বেল জাতের ১ হাজার ২২০টি হাঁস ও মাংস উৎপাদনকারী পেকিং জাতের ৭৬৫টি হাঁস রয়েছে।
খামার শুরুর আগের কষ্টের জীবনের কথাও জানালেন মতিউর। বলেন, ‘আমি গরিব ঘরের সন্তান। একসময় মানুষের জমিতে কামলা দিতাম। মাঝেমধ্যে ঢাকায় গিয়ে রিকশাও চালিয়েছি। কিন্তু একার উপার্জন দিয়ে পাঁচজনের সংসার চালাতে টানাটানি হতো। দিনমজুরি কাজের পাশাপাশি সংসারের আয় বাড়ানোর জন্য মুরগির বাচ্চা কিনে লালন-পালন করা শুরু করি।’
হাঁস-মুরগি তাঁকে নতুন জীবন দান করেছে উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে আমার মুরগি পালন শুরু। সামান্য কিছু পুঁজি নিয়ে শুরু করি। এরপর মূলধন বাড়তে থাকলে খামারের আকারও বাড়তে থাকে। একসময় ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি সোনালি জাতের মুরগিও লালন-পালন করা শুরু করি।’
মতিউরের দেখাদেখি প্রতিবেশী রমজান আলীও হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘হাঁস-মুরগির খামার করে মতিউর ভাইয়ের ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেছে। তাঁর থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ২০ হাজার টাকায় ৫০০ ক্যাম্বেল জাতের হাঁসের বাচ্চা কিনে লালন-পালন করা শুরু করেছি। অধিকাংশ হাঁস ডিম দিচ্ছে। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০টি করে ডিম পাওয়া যাচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার টাকার ডিম বিক্রি করেছি। আশা করছি, প্রথম বছরেই খরচ বাদ দিয়ে লাখখানেক টাকা আয় থাকবে।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, মহাদেবপুর উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ৮০০টি হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মাহবুব হাসান চৌধুরী বলেন, খামারি মতিউর রহমান সফলতার একটি দৃষ্টান্ত। তাঁর মতো অন্যদেরও এ ধরনের খামার করতে এগিয়ে আসা উচিত। খামারিদের সহযোগিতা করতে প্রাণিসম্পদ দপ্তর সদা প্রস্তুত।