কুমিল্লা জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার উত্তর রামপুর গ্রামের মো. নরুল ইসলাম রনি। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা এক সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান রনি আজ নিজের পরিশ্রম আর আত্মবিশ্বাসে গড়ে তুলেছেন একটি সফল গরুর খামার।
ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে গরু পালনের অভিজ্ঞতা ছিল রনির। সেই আগ্রহ থেকেই ২০১৫ সালে পারিবারিকভাবে পাওয়া একটি গাভী দিয়ে শুরু হয় তার খামার জীবন। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ বা বড় পুঁজি ছাড়াই তিনি ধীরে ধীরে নিজ অভিজ্ঞতা ও শ্রম দিয়ে গড়ে তোলেন তার গরুর খামার। আজ তার খামারে রয়েছে ১৫টি গরু।
রনির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো, তিনি কখনোই বাজার থেকে গরু কিনে আনেননি। নিজের খামারের গাভী থেকে পাওয়া বাছুর লালন-পালন করেই তিনি খামারটির বিস্তার ঘটিয়েছেন। এতে যেমন খরচ কমেছে, তেমনি স্থানীয়ভাবে মানসম্মত গরু উৎপাদন নিশ্চিত হয়েছে।
খামারের প্রতিদিনের কাজ তিনিই এবং তার স্ত্রী মিলে পরিচালনা করেন। গরুর খাবার সংগ্রহ, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, চিকিৎসা ইত্যাদি সব কিছুই তাদের হাতে। আলাদা কোনো কর্মচারীর প্রয়োজন না হওয়ায় খামার পরিচালনায় খরচ অনেকটাই কম থাকে, যা আয় বাড়াতে সাহায্য করেছে।
রনি গরুর জন্য স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করেন। তার খাবারের তালিকায় রয়েছে সবুজ ঘাস, খড়, চালের কুঁড়া, খৈল ও ভুষি। তিনি জানেন, সঠিক পুষ্টি গরুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং উৎপাদনশীলতাও বাড়ে। তাই তিনি স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য খাদ্য দিয়েই গরুগুলোর যত্ন নেন।
যদি কোনো গরু অসুস্থ হয়, তিনি দেরি না করে সরাসরি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগের এই সহায়তা রনির খামারের জন্য অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে।
বর্তমানে রনির খামার তার পরিবারের প্রধান আয়ের উৎস। তিনি স্বপ্ন দেখেন ভবিষ্যতে খামারকে আরও বড় করবেন-দুধ উৎপাদনের পাশাপাশি গোশত উৎপাদনেও দক্ষতা অর্জন করবেন। তার পরিকল্পনায় রয়েছে আধুনিক পদ্ধতিতে খামার পরিচালনা এবং অন্যান্য খামারিদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়।
রনির এই সাফল্য তার এলাকার তরুণদের মধ্যেও আগ্রহ জাগিয়েছে। অনেকেই তার খামার দেখতে আসে, পরামর্শ নেয় এবং নিজেরাও খামার শুরু করার কথা ভাবছে। তিনি বলেন, “মন দিয়ে কাজ করলে খামার শুধু পেশা নয়, একটি সম্মানজনক পথ হতে পারে জীবনের।”
সবশেষে,মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তরের মুদ্রণসামগ্রী প্রদান করা হয় এসাথে দপ্তরের বিভিন্ন কাজের ও পরিচিতি দেয়া হয়।