পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় গবাদিপশু পালনে সফল হয়েছেন নারী উদ্যোক্তা নাসরিন জাহান। স্বচ্ছল পরিবারে বিয়ে হলেও বাড়ির অন্যান্য কাজের পর অলস সময় কাজে লাগাতে খামার শুরু করে তিনি এই সফলতা অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি গবাদিপশু ও বিক্রি দুধ বিক্রি করে মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করেন।
জানা যায়, নারী উদ্যোক্তা নাসরিন জাহান পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা। বিয়ের পরবর্তী সময়ে পরিবারের কাজ সম্পন্ন করার পর অলস সময় কাটাতেন। তিনিচাইলেই শুয়েবসে আয়েশি জীবন কাটাতে পারতেন। তা না করে স্বামীর সাথে পরামর্শ করে ২০০৮ সালে ভালো জাতের ৩টি গরু কিনে খামার শুরু করেন। তার খামারের নাম ‘নাসরিন ডেইরি ফার্ম’ রাখেন। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫টি গরু আছে। মূলধন দেড় কোটি টাকা। গবাদিপশু পালন করে বিক্রি করেন পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে পাইকারি দরে দুধও বিক্রি করেন।
নারী উদ্যোক্তা নাসরিন বলেন, সংসারের কাজ কাজ শেষ করার পর অলস সময় কাটাতাম। সেই অলস সময়কে কাজে লাগানোর জন্য কিছু করার কথা ভাবছিলাম। বাড়ির ভেতরে প্রচুর জায়গা থাকায় সেখানে ডেইরি ফার্ম করার চিন্তা মাথায় আসে। তারপর স্বামীর সাথে পরামর্শ করে ভালো জাতের ৩টি গরু কিনে বাড়ির এক পাশে গবাদিপশু পালনের জন্য একটা খামার গড়ে তুলি।
তিনি আরো বলেন, সেই ৩টি থেকে শুরু করে বর্তমানে আমার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫টি গরু আছে। আর আমার মূলধন প্রায় দেড় কোটি টাকা। গবাদিপশুর পাশাপাশি স্থানীয় বাজারে পাইকারি দরে দুধও বিক্রি করি। আমার ফার্মে প্রতিদিন প্রায় ২০০ লিটার দুখ উৎপাদিত হয়। মাঝে মাঝে সেটা ৩০০-৪০০ লিটারে পৌছায়। দুধ সংগ্রহ থেকে বিক্রি পর্যন্ত পুরোটাই আমি তদারকি করি। আর আমার খামারে মাসে প্রায় ৭-৮ টন গোবর পাওয়া যায়। এইগুলা স্থানীয় কৃষকদের বিনামূল্যে বিতরন করি পাশাপাশি আমাদের জমিতেও প্রয়োগ করে বিষমূক্ত ফসল উৎপাদন করি।
নাসরিন আরো বলেন, খামার পরিচালনায় আমার দুইজন কর্মচারী রয়েছে। তারা সব সময় খামারের দেখাশোনা করেন। তাঁদের বেতনসহ সব মিলিয়ে প্রতি মাসে তাঁর খরচ প্রায় আড়াই লাখ টাকা।
নাসরিন জাহানের ফার্মে উৎপাদিত ২০০-৪০০ লিটার দুধ সম্পূর্নটা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা কঠিন। তিনি কাছের মানুষদের বিনা মূল্যে দেওয়ার পরেও অনেক দুধ নষ্ট হয়ে যেত। তখন একটি মিষ্টির দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। কলাপাড়া শহরে মিষ্টির দোকান খোলেন। যেখানে রসগোল্লা, কাঁচাগোল্লা, কালোজাম, রসমালাই, ক্ষীরমালাই, বেবি সুইট, লাল চমচম, সাদা চমচম, তাসনি চপ, পাটিসাপটা ও ছানা পাওয়া যায়। এ ছাড়া মেলে দই আর ঘি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ইউএলও) গাজী মো. শাহআলম বলেন, খামার করে দারুন সফলতা অর্জন করেছেন নারী উদ্যোক্তা নাসরিন জাহান। তার এই অদম্য সাহসিকতা ও সফলতায় অনেকেই অনুপ্রাণীত হয়েছেন। আশে পাশের অনেকেই খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বরগুনা, পটুয়াখালী, কলাপাড়া ও মহিপুর এলাকার ১০-২০টি ডেইরি ফার্ম তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা ও পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছে।