২০
হাটহাজারীর বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী মিঠাপানির মেজরকার্প জাতীয় মাছের একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র।
এই জলজ বাস্তুতন্ত্রে রয়েছে ৯৩ প্রজাতির মাছ, চিংড়ি ও গাঙেয় ডলফিন। দেশের অন্যতম এই প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্রে প্রজনন মৌসুমে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন মাসের অমাবস্যা ও পূর্ণিমার তিথিতে বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে পাহাড়ী ঢল নেমে পানিতে তীব্র স্রোত সৃষ্টি করে এবং পানির তাপমাত্রা কমে (২৭-২৯) ডিগ্রী সেলসিয়াস ও বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (পানির তাপমাত্রা, পানির স্রোত, পানির স্তর, তড়িৎ পরিবাহিতা, টারবিডিটি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচ ইত্যাদি) মিত্রস্ক্রিয়তায় হালদা নদীতে কার্পজাতীয় মাছের ডিম ছাড়ার প্রাকৃতিক অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি হলেই কেবল মা মাছ ডিম ছাড়ে। গড়ে ৫০০-৬০০ জন স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী এসব ডিম সংগ্রহ করে মাটির তৈরি কূয়া বা হ্যাচারীতে ফুটিয়ে উন্নত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পোনা উৎপাদন করে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে হালদার মৎস্য সম্পদের উপর। এর প্রভাবে বিগত কয়েক বছর হালদা থেকে সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ ব্যাপকহারে কমেছে। বর্তমানে হালদা নদীতে চলছে মেজর কার্পজাতীয় মাছের ভরা প্রজনন মৌসুম। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের (এল নিনোর প্রভাব) ফলে সৃষ্ট উচ্চ তাপমাত্রা (৫০ বছরের মধ্যে অধিক) ও ব্রজসহ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় হালদা নদীতে ডিম ছাড়ার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় বিগত এপ্রিল মাসের দুটি তিথীতে/জো’তে (অমাবস্যার ও পূর্ণিমার) ডিম ছাড়েনি কার্পজাতীয় মা মাছ। হালদার জলজ বাস্তুতন্ত্র মা মাছের ডিম ছাড়ার উপযোগী কিনা জানতে গত ১লা মে বুধবার হালদা নদীর স্পনিং গ্রাউন্ড সাত্তারঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন অংশ থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে সরাসরি হালদা নদীতে ও হালদা ল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা যায় পানির বিভিন্ন ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারের (দ্রবীভুত অক্সিজেন, পিএইচ, কার্বনডাই-অক্সাইড, ক্যালসিয়াম, ট্র্যান্সপারেন্সি, টিডিএস, ইলেকট্রিক্যাল কনডাকটিভিটি, লবণাক্ততা, খরতা, ও ক্ষারকত্ব ইত্যাদি) আদর্শ মানের মধ্যে রয়েছে। তবে কার্পজাতীয় মাছের প্রজননের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার পানির তাপমাত্রা আদর্শ মান: ২০-৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩ ডিগ্রী বেড়ে ৩৩ ডিগ্রীতে উন্নীত হয়েছে। মেজর কার্প জাতীয় মাছের প্রজনন আচরণ পানির তাপমাত্রার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। মেজর কার্পজাতীয় মাছের জন্য অত্যানুকুল পানির তাপমাত্রা হচ্ছে (২২-৩০) ডিগ্রী সেলসিয়াস তবে এরা অল্প সময়ের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। বৃষ্টিপাত হলে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট এই তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে৷ আর তখনি নদীতে ডিম ছাড়বে মা মাছ।
এদিকে ডিম সংগ্রহকারীরা তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ডিম সংগ্রহ করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন বলেও জানা গেছে।
হালদা গবেষক চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড.মো. শফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, যদি পরিবেশ অনুকুলে থাকে অর্থাৎ বজ্রপাতসহ পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢল নেমে আসে তাহলে চলতি মাসের অমাবস্যার জোঁ (০৬মে – ১০মে) অথবা পূর্ণিমার জোঁ’তে (২০ মে- ২৫মে) হালদা নদীতে মেজর কার্পজাতীয় মা মাছের ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান জানান, নদীতে মাছের অবাধ বিচরণ ও মাছের মজুদ বৃদ্ধি জীববৈচিত্র্য ও ডলফিন রক্ষা করতে সার্বক্ষণিকভাবে নদীর দুই পাড়ের জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশ, আনসার- ভিডিপি কাজ করে যাচ্ছে । এবার যদি পরিবেশ অনুকূলে থাকে, হালদায় আশানুরূপ ডিম পাওয়া যাবে। এদিকে নদী থেকে আহরিত ডিম থেকে রেণু ফোটানোর জন্য সরকারি হ্যাচারিগুলো ইতিমধ্যে সংস্কার ও প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
সূত্র: ভোরের পাতা।