বিএলএস এর পতাকা তলে, আসবে সবাই দলে দলে, থাকবে না কেউ বেকার” এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি আয়োজন করতে যাচ্ছে ৫ম লাইভস্টক অ্যাওয়ার্ড, সেমিনার এবং লাইভস্টক ও পোল্ট্রি মেলা। আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মেলাটি। এই আয়োজনের মাধ্যমে দেশের লাইভস্টক সেক্টরের উন্নয়নে সকল স্টকহোল্ডাররা আগামীর পথে পরিচালিত হওয়ার দিক নির্দেশনা পাওয়ার পাশাপাশি দেশের প্রান্তিক খামারিদের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করার প্রয়াস পাবে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি এর সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ হেমায়েতুল ইসলাম।
বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি কি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি এর সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ হেমায়েতুল ইসলাম দেশের অন্যতম জনপ্রিয় কৃষি বিষয়ক অনলাইন পোর্টাল akkbd.com কে জানান, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি বিশেষ করে প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন, বিকাশ এবং তা প্রচারের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদের বিভিন্ন সেক্টর যেমন শিক্ষা, রিসার্চ, DLS কমুনিটি সার্ভিস, প্রাইভেট সেক্টর, NGO, বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানি, মুরগির বাচ্চা ও ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, গবাদিপশুর খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন ফার্মের সাথে যোগসূত্র তৈরি করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে কাজের স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমেই এই সেক্টরের ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখছে।
আপনারা কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ৫ম লাইভস্টক অ্যাওয়ার্ড, সেমিনার এবং লাইভস্টক ও পোল্ট্রি মেলা আয়োজন করছেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ড. মোঃ হেমায়েতুল ইসলাম বলেন, সরকারের সহযোগী হিসেবে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে সকল পর্যায়ের স্টেকহোল্ডারদের মাঝে সেতুবন্ধন, তথ্যের বিনিময়, সেবার পরিমাণ ও গুণগত মানের উৎকর্ষতার নিমিত্তে ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুর দিকে এই সেক্টরের অনেকেই আমাদের কাছে বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ চাইতো এবং আমরা পরামর্শ দিতাম। কিন্তু পরবর্তীতে তারা আমাদের কোন প্রকার ফিডব্যাক দিত না। ঠিক তখন থেকেই আমরা এই সংগঠনের কথা চিন্তা করি এবং যারা ভালো কাজ করছে তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবি। যার মাধ্যমে সকলেই কাজ করতে উদ্বুদ্ধ হবে। পাশাপাশি লাইভস্টক অ্যাওয়ার্ড, সেমিনার এবং লাইভস্টক ও পোল্ট্রি মেলা আয়োজন করার পরিকল্পনা করি। যার মাধ্যমে এই সেক্টরের সকল স্টেকহোল্ডারই একে অপরে সাথে বিভিন্ন তথ্য আদান প্রদান ও সেক্টরের উন্নয়নে বিভিন্ন পরামর্শ ও কনসেপ্ট শেয়ার করতে পারে। এছাড়াও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের বিভিন্ন প্রশিক্ষন প্রদানের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষিত হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই এই লাইভস্টক ও পোল্ট্রি মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
আপনাদের এ ধরনের আয়োজনে কারা কারা অংশগ্রহণ করে থাকে এ বিষয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি মূলত লাইভস্টক, পোলট্রি ও পরিবেশসহ মোট ১৪টি ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করছে। এখানে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক- শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি ডাক্তার, ভেটেরিনারি নার্স, বিভিন্ন পেশাজীবী, এই সেক্টরের বিভিন্ন ফিড, বাচ্চা, এনিমেল নিউট্রিশন, ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ অংশগ্রহণ করে থাকে। যার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম এই সেক্টর সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণা লাভ করার পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগসূত্র তৈরিতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি দেশের প্রান্তিক খামারি থেকে শুরু করে এই সেক্টরের নীতিনির্ধারকদের সাথে নিয়ে কাজ করে। খামারিদেরকে উদ্বুদ্ধকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে হেল্থ ক্যাম্পসহ বিভিন্ন ধরণের ট্রেইনিং এর আয়োজন করা হয়। এই সেক্টরের কার্যকরী উন্নয়নের প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের আরও প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। সেজন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এছাড়াও আমাদের ভেটেরিনারি নার্স ও স্বেচ্ছাসেবী দরকার। এদের ছাড়া সেক্টরকে পুরোপুরি ডেভেলপ করা যাবে না। সেজন্য তাদের ডেভেলপমেন্টের জন্য বিভিন্ন সেমিনার আয়োজন করা হয়। যেখান থেকে তারা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো অবগত হবার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে বলে জানান ড. মোঃ হেমায়েতুল ইসলাম।
আপনাদের এই আয়োজন রাজশাহীতেই কেন করা হচ্ছে ? অন্য কোথাও কেন নয়? এ বিষয়ে বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি এর সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ হেমায়েতুল ইসলাম akkbd.com কে জানান, আমাদের দেশের বড় বড় অনুষ্ঠানগুলো ঢাকা কেন্দ্রিক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি বরাবরই ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা করে। সেই ভাবনা থেকেই রাজশাহীকে বেছে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি একটি ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন পরিচালনা করে দেখাতে চায় যে ইচ্ছা থাকলে ঢাকার বাহিরেও জমজমাট অনুষ্ঠান করা সম্ভব। আমাদের পরিকল্পনা অনেক সুদূরপ্রসারী। শুধুমাত্র রাজশাহীতেই নয় আগামীতে দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ জেলাশহরসহ দেশব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। সেজন্য সবার সহযোগীতা কামনা করছি।
ড. মোঃ হেমায়েতুল ইসলাম বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির পথচলা প্রায় ১০ বছর হয়ে গেল। সময়ের পরিক্রমায় আজ আমরা বেশ পরিণত হয়ে উঠছি। এখনো আমাদের অনেক কাজ করা বাকি যেগুলো ধীরে ধীরে সম্পন্ন করছি। এই মুহুর্তে বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির একটি অন্যতম লক্ষ্য হল এই সংগঠনটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। যেখানে এই সংগঠনের মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। যারফলে এই সেক্টরের যুগপযোগী টেকসই উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি শক্তিশালী করতে এই সংগঠনটি জোরালো ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও আমাদের সাথে যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করবে তাদেরকে নিয়েও আমাদের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে এই সেক্টরে যারা অবদান রাখবে তাদের যথাযথ মূল্যায়নে বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি কর্তৃক অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে। যার মাধ্যমে নতুনরা আরও উদ্বুদ্ধ হয়ে উঠবে।
সূত্র:আধুনিক কৃষি খামার