খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন করার সহজ পদ্ধতি
হাঁস চাষে বা পালনে নিঃশব্দ বিপ্লব নিয়ে এসেছে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস। কেউ আগে কল্পনা ও করেনি হাঁস মুরগির চেয়ে বেশি ডিম দেয় বা দিতে পারে। হাঁস থেকে রীতীমত ব্যবসা করা যায়। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস এই বিপ্লব নিয়ে এসেছে। গ্রামের মানুষরা যদি সুযোগ পায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পুষবার- তাহলে আমাদের গ্রামীন অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি ঘটতো। ঘরে ঘরে এতো অভাব আর থাকতো না।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ব্যবসা তথা পালনে সুবিধার জন্যে আমাদের বর্তমানে সরকার ও বেশ আগ্রহী। এই কারণে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে যে কেউ ঘরোয়া বা বৃহৎ আকারে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য সরকার থেকে অর্থ ঋণ নিয়ে খামারকে আরও বৃহৎ আকারে সাজতে পারে। এতে তেমনই দেশের প্রোটিন যুক্ত খাবারের অভাব ও মিটবে।
শুধু সরকারই নয়, বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক দারিদ্র্য সীমার নিচের মানুষদের ওপরে তোলার জন্য খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস চাষের জন্য অনুদান এবং ঋণ প্রদান করছে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস বনাম অন্য পাঁচটা মুরগি
আগেই বলেছি, মুরগির থেকে হাঁস পালনে সুবিধা অনেক বেশি। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস বছরে ২৮০-৩০০ ডিম দেয়। মুরগি দেয় এর কিছু কম। হাঁস ব্যবসায়ের উপযোগী একনাগাড়ে ২/৩ বছর ডিম দিয়ে যাবে কিন্তু উন্নত জাতের দো-আঁশলা মুরগি লাভের খাতিরে ডিম দেবে মোটে দেড় বছর। খাঁকি ক্যাম্পবের বাচ্চা মাদি ১৭ থেকে ১৮ সপ্তাহে ডিম দেয়। কিন্তু উন্নত জাতের মুরগি ২১ সপ্তাহের আগে লাভজনক ভাবে ডিম দেয় না।এই কারণে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পোষায় পরিশ্রম কম।
খাঁকি ক্যাম্পবেল বাচ্চার প্রতিপালন
বাচ্চা তোলার আগে আপনার প্রথম কাজ হবে বাচ্চা যেখানে থাকবে সেটা ঠিক করা। বাচ্চা হাঁস রাখতে হবে তারের জালের ওপর। এতে বাচ্চারা কম রোগ-ব্যাধিতে ভোগে। তারের জাল মেঝে থেকে দেড়ফুট মতো উঁচুতে থাকবে। ফলে মল মুত্র সহজে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া যাবে।
বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় উত্তাপ
প্রথম অবস্থার জন্য ক্যাম্পবেল হাঁস বাচ্চার জন্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়। জীবনের প্রথম কয়েক দিন ওদের তাপ দিতে হবে ৩০০ সেঃ (৮৫০ ফাঃ) থেকে ৩২০ সেঃ (৯০০ ফাঃ) তারপর প্রতিদিন ২.৮০ সেঃ। (৫০ ফাঃ) করে তাপ কমিয়ে আনতে হবে যতদিন না ২৪০ সেঃ (৭৫০ ফাঃ) তাপমাত্রা হাচ্ছে। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে হাঁসকে মেঝেতে ছাড়া যেতে পারে। মেঝেতে ছাড়ার আগে হাঁসের জন্য পুরু স্তরের বিছানা পেতে দিতে হবে (Deep litter) বিছানা তৈরি করা যাবে ৫” গভীর তুষ আর কাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে।
ঘেরার মধ্যে হাঁস পালতে হলে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পিছু ৩(তিন) বর্গফুট জায়গা দিতে হবে। যদি ওদের চরে বেড়াবার জন্য ফাঁকা জায়গায় ব্যবস্থা থাকে তবে হাঁস পিছু রাতের আস্তানা হবে ২ (দুই) বঃ ফুঃ। চরে বেড়াবার জন্যে ফাঁকা জায়গাটির আয়তন হবে হাঁস পিছু ১০(দশ) বঃ ফুঃ। হাঁস পিছু জায়গা নিচের মতো হবে।
বয়স (সপ্তাহ) মেঝেতে জায়গার পরিমাণ
০-১ ৪ ভাগের ১ বর্গফুট
১-২ ৩ ভাগের ১ বর্গফুট
২-৩ ২ ভাগের ১ বর্গফুট
৩-৭ দেড় বর্গফুট
- হাঁসের খাবার
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পুকুর/জলাশয়ে ছেড়ে পুষলে খাবারের অনেক সাশ্রয় হয়। কারণ হাঁস তখন জলজ উদ্ভিদ কীট- পতঙ্গ, মাছের ডিমপোনা, গুগলি, শামুক, গেড়ি খেয়ে বেড়ায়। কিন্তু ঘেরার মাঝে হাঁস পালন করলে তখন তাকে পুরো খাবারই খাওয়াতে হবে। পুরো ৮ সপ্তাহের জন্য হাঁস পিছু লাগবে ৪/৫ কেজি সুষম খাদ্য এবং ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত সেটা দাঁড়বে সাড়ে বরো কেজি।
পুর্ণবয়ষ্ক হাঁস হড়ে দিনে ১৩০ থেকে ১৫০ গ্রাম সুষম খাদ্য খায়। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসকে সর্বদা সুষম খাদ্য ভিজিয়ে খাওয়াতে হবে। এই ব্যবস্থায় খাবারের অপচয় কম হয় এবং হাঁস চট করে গিলে নেয়।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের দৈনিক খাবার দেওয়ার হার নিচে দেয়া হলো।
০-৪ সপ্তাহ – দৈনিক ৪ বার।
৪-৮ সপ্তাহ – দৈনিক ৩ বার।
৮ সপ্তাহের উপর – দৈনিক ২ বার।
খাবার জায়গার পরিমাণ
০-২ সপ্তাহ আধা ইঞ্চি বাচ্চা প্রতি।
২-৪ সপ্তাহ ১ ইঞ্চির ৪ ভাগের ৩ ভাগ বাচ্চা প্রতি।
৪-৭ সপ্তাহ দেড় ইঞ্চি বাচ্চা প্রতি।
হাঁসের সুষম খাবারের তালিকা
ঠিক সময়ে ডিম পাওয়ার জন্য ক্যাম্পবেল হাঁসের সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। খামারকারী নিজেও এই সুষম খাদ্য নিজে তৈরি করে নিতে পারে। এতে দামে যেমন সস্তা হয়, এবং নিজেও প্রচন্ড বল পেতে পারেন যে তিনি তাঁর হাঁসকে ভাল খাবার খাইয়াছেন।
সুষম খাদ্য তৈরির নিয়ম নিচে দেয়া হলো-
প্রতি ১০০ ভাগ খাবারের মধ্যে-
গম – ৩০ ভাগ;
ধান ভাঙ্গা – ৪০ ভাগ;
কালো তিল খোল – ১০ ভাগ;
সয়াবিন খোল – ১০ ভাগ;
শুঁটকি মাছের গুঁড়ো – ৮ ভাগ;
ঝিনুক ভাঙ্গা – ২ ভাগ।
ভিটামিন এ, বি২, ডি৩, ই, কে প্রতি ১০০ কেজি খাবারের ১০ গ্রাম মেশাতে হবে।এবং প্রতি কু্যইন্টাল হিসেবে কোলিন ক্লোরাইড দিতে হবে ৫০ গ্রাম। হাঁস ৬_৮ সপ্তাহ হলে গমের পরিমান কমিয়ে ছত্রাক মুক্ত মেশানো যেতে পারে। কোলিন ক্লোরাইড যেমন দিতে হবে বৃদ্ধির জন্য তেমনি ককসিডিয়া রোড় বন্ধ করার জন্য দিতে হবে ককসিডিওস্ট্যাট।
ককসিডিওস্ট্যাট দিতে হবে হাঁসের ১২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত। মেশাবার হার প্রতি ১০০ কেজি খাবারের জন্য ৫০ গ্রাম। হাঁসকে গুগলি দিলে শুঁটকি মাছের পারিমান কমিয়ে দিতে হবে। এতে খাবারের দাম ও কমে যাবে।
মাংস ও ডিম বিপণন
হাঁসের ডিম বিক্রির জন্য খুব একটা কাঠ-খড় পোড়াতে হয় না।কারন, হাঁসের ডিমের বাজার অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে।
তবে মাংস বিক্রির জন্য উদ্যেগ নিতে হবে। ডিম কীভাবে বাজারজাত করা যাবে এই সম্পর্কে ইতি পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার
এই জাতের হাঁসের খুব একটা রোগ-ব্যাধি হয় না। তবে একেবারেই যে রোগ-ব্যাধিতে হাঁস আক্রান্ত হয় না। সেটা বলা ভূল। এই রোগ-ব্যাধি নির্ভর করে খামারকারীর পরিচর্যার ওপর।
যদি খামারী স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাঁস পালন করেন এবং উপযোগী খাবার খাওয়ান তাহলে এই রোগ-ব্যাধির পরিমান একেবারেই থাকবেনা।
তবে খামারকারীকে হাঁসের মারাত্নক দুটি রোগ ডাক-প্লেগ ও ডাক-কলেরার ব্যাপারে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। দুটি টিকার জন্যই খামারকারী খোঁজ নিতে পারেন নিকটস্থ পশু চিকিৎসা কেন্দ্র। তারা সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পেতে পারেন।
কপি
এগ্রোবার্তা