আর মাত্র কয়েকদিন পর পবিত্র ঈদুল আযহা। ইতোমধ্যেই রংপুরসহ বিভাগের বিভিন্ন জেলার হাটগুলোতে রাজধানী ঢাকা বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গরু ছাগল কেনার জন্য পাইকাররা আসছেন। তারা মূলত খামারিদের কাছে গিয়ে সরাসরি দরদাম করে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এবার রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় রেকর্ড পরিমান পশু রয়েছে খামারীদের কাছে যা রংপুর বিভাগের চাহিদা মিটিয়ে রেকর্ড পরিমান ৮ লাখ ৩৪ হাজারেও বেশি পশু বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন খামারিরা। তবে পশু খাদ্যের মূল্য ৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভালো দাম না পেলে লোকসান গুণতে হবে বলে আশঙ্কা খামারিদের।
এদিকে ভারত থেকে গরু চোরাই পথে বা বিদেশ থেকেও গরু আমদানি করার কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞরা। কারণ রংপুর বিভাগসহ অন্যন্য জেলায় যে পরিমান পশু রয়েছে তা কোরবানির জন্য যথেষ্ঠ বরং উদ্বৃত্ত থাকবে বলে আশাবাদ তাদের।
রংপুর প্রাণিসম্পদ বিভাগ রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে চলতি বছর কোরবানি ঈদের জন্য পশু কোরবানির জন্য রংপুর বিভাগে শুধু মাত্র খামারীদের কাছে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২১ লাখ ৫২ হাজার ৩১৯টি।
গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ রয়েছে। অন্যদিকে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার চাহিদা রয়েছে ১৩ লাখ ১৮ হাজার ১১৭টি পশু। এ ছাড়াও ব্যাক্তি পর্যায়ে বাড়িতে লালন-পালন করা পশুর পরিমান প্রায় দেড় লাখের বেশি। ফলে উদ্বৃত্ত থাকবে ৯ লাখেরও বেশি পশু। ফলে কোরবানির পশুর জন্য ভারতীয় গরুর কোনো প্রয়োজন নেই। বরং এখন রংপুর বিভাগ কোরবানির পশুর সংখ্যার দিক থেকে পুরোপুরি স্বাবলম্বি। পুরো বিভাগের চাহিদা মিটিয়ে ৯ লাখেরও বেশি পশু দেশের অন্য জেলার চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
প্রাণিসম্পদ বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে এবার গাইবান্ধা জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৫১টি পশু এর বিপরীতে প্রস্তত রাখা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৪২১টি, কুড়িগ্রাম জেলায় ২ লাখ ১৬ হাজার ৫৩৩টি পশুর বিপরীতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫১টি. নীলফামারী জেলার চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ১০৯টি, প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজারেও বেশি পশু। পঞ্চগড় জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৭৮টি পশুর চাহিদা থাকলেও পশু রয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৩১৭টি, অন্যদিকে রংপুর জেলার চাহিদা রয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৩৪৪টি প্রস্তুত রয়েছে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৪৮৫টি। এ সংখ্যা শুধু খামারীদের কাছে থাকা পশু। এর বাইরে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় বাসা- বাড়িতে পালন করা পশুর সংখ্যা ৫ লাখেরও বেশি বলে জানিয়েছে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
তবে খামারিরা জানিয়েছেন পশু খাদ্যের মূল্য গত বছরের চেয়ে তিনগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এবার অর্থের অভাবে প্রয়োজনীয় খাবার দিতে পারেননি তাদের খামারে থাকা পশুদের। ফলে গরু মোটা তাজাকারণ কিংবা রিষ্ট পুষ্ট সেভাবে করা সম্ভব হয়নি। ফলে তারা পুরো বছর জুড়ে যে অর্থ ব্যায় করেছে সেভাবে পশুর মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারিরা। এতে করে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে গরু মোটাতাজা করণসহ পশু লালন- পালন করে বিপুল পরিমান অর্থ লোকসানের সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
সরেজমিন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট গ্রামে ঘুরে সেখানেই দুই শতাধিক গরুর খামার রয়েছে। প্রতিটি খামারে ২৫ থেকে একশ’ করে গরু-ছাগল রয়েছে। সব গুলোই কোরবানির জন্য প্রস্তুত করে রেখেছে খামারিরা। খামারি রহমান মিয়া জানান তার খামারে ৩৫টি দেশি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু রয়েছে। গড়ে এক থেকে দেড় লাখ টাকা দাম হবার কথা। কিন্তু গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার গরু মোটা তাজাকরণ সেভাবে করা সম্ভব হয়নি। যেভাবে গরু পুষ্ট করা দরকার তা শুধু মাত্র গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সম্ভব হয়নি। ফলে গরুর দাম যে ভাবে আশা করা হয়েছিল তা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। একই কথা জানালেন পীরগজ্ঞ উপজেলার চতরা এলাকার খামারী মমতাজুর রহমান তিনি জানান গরু মোটা তাজাকরণ করতে এবং পুষ্ট করতে ভুষি, খৈল, চালের গুড়াসহ খাদ্য প্রয়োজন। একটা গরুর পেছনে কমপেক্ষে গড়ে প্রতিদিন ৫শ’ টাকা করে ব্যায় করতে হয়। এবার গোখাদ্যের দাম আঁকাশ ছোয়া হবার কারণে প্রয়োজনীয় খাদ্য দেয়া যায়নি। সেকারণে ভালো দাম পাবার আশা কম বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে রংপুর নগরীর মাহিগজ্ঞ এলাকায় প্রায় দুই হাজারেও বেশি গরুর খামার রয়েছে। খামারিরা জানালেন রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পাইকাররা আসছেন তারা যে গরুর দাম ২ লাখ টাকা পুষ্ট সেরকম না হওয়ায় এক লাখ টাকাও বলছে না।
অনেক খামারি বলেছেন রংপুরে অনেক শিক্ষিত বেকার তরুণ গরুর খামার গড়ে তুলেছেন ফলে রংপুরে খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তারা কোরবানি ঈদ উপলক্ষ করে গরু-ছাগল পুষ্টু ও মোটা তাজাকরণ করেন আশা করেন ঈদের সময় তাদের খামারের সব গরু-ছাগল বিক্রি করে যে আয় হবে তাই দিয়ে সারাবছর পরিবার পরিজন নিয়ে দিন যাপন করবেন। আবারও আগামী বছরের ঈদের জন্য অপেক্ষা করেন তারা। কিন্তু এবার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে গোখাদ্যের দাম বৃদ্ধি রোধে সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় তারা এবার লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা নেই বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
এ ব্যাপারে রংপুর ডেইরি পার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন জানিয়েছেন পশু খাদ্যসহ অন্যান্য উপকরনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রংপুর বিভাগে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক বন্ধ হবার পথে আর অনেকে আছেন রীতিমত ধার দেনা করে বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছেন। তিনি জানান কোরবানি ঈদে মাংস ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা দর হিসেব করে গরুর দাম নির্ধারণ না করা হলে খামারিরা লোকসানের মুখে পড়বে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড, নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান রংপুর বিভাগে এবার কোরবানির পশুর চাহিদা মিটিয়েও ৮ লাখেরও বেশি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। ফলে কোরবানির জন্য ভারতীয় গরু কিংবা বিদেশ থেকে গরু আমাদানি করার কোনো প্রয়োজন নেই। রংপুর বিভাগ ছাড়াও রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে বিপুল পরিমান পশু রয়েছে যা পুরো দেশের চাহিদা মেটাতে সক্ষম। তিনি বলেন এখন মানুষ মোটা তাজা করণ করা গরু কিনতে চায় না সে জন্য চাহিদাও কমে গেছে। ফলে মাঝারি ও দেশি জাতের গরুর চাহিদা বাড়ছে।
সূত্র: সংবাদ।