২৪ এপ্রিল ২০২৫ খ্রি. কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার মধ্যম কুচাইতলী গ্রামে গড়ে উঠেছে একটি অনন্য প্রাণিসম্পদ খামার, যার নাম আল-মদিনা এগ্রো ফার্ম। ২০১৯ সালে মাত্র ৫টি গরু ও ১০টি ছাগল নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন এই খামারের উদ্যোক্তা আমির হোসেন। আজ সেই ফার্মে রয়েছে ৪৫টি গরু ও ১০৫টি ছাগল। স্বপ্ন, পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি এই খাতে একটি সফল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
বিদেশ ফেরত আমির হোসেন নিজ গ্রামে ফিরে বিকল্প কর্মসংস্থানের চিন্তা থেকেই গড়ে তুলেছিলেন এ খামার। বর্তমানে তার খামারে কাজ করছেন তিনজন শ্রমিক, যাঁদের প্রত্যেককে মাসিক ১৭ হাজার টাকা করে বেতন প্রদান করা হয়।
প্রাণিসম্পদের বিবরণ অনুযায়ী, খামারে বর্তমানে রয়েছে সংকর জাতের ৬০টি ছাগল ও দেশি জাতের ৪৫টি ছাগল। গরুর মধ্যে রয়েছে সংকর ও শাহীওয়াল জাতের ৪০টি, যার মধ্যে দুধ দেওয়া গাভী ৩টি এবং বকনা বাছুর রয়েছে আরও ৩টি।
খাদ্য ব্যবস্থাপনাতেও রয়েছে বিশেষত্ব। নিজস্ব ৮ বিঘা জমিতে জারা ও জার্মান জাতের কাঁচা ঘাস উৎপাদন করে তা দিয়ে গবাদিপশুদের খাদ্য সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি নিজ হাতে তৈরি করা খাদ্যও ব্যবহার করেন, যা প্রাণিসম্পদের সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করছে।
প্রতিদিন প্রায় ২০ লিটার দুধ সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজার ও দোকানে বিক্রি করেন তিনি, যা থেকে আসে উল্লেখযোগ্য আয়। তবে খামারে কিছু রোগবালাইও দেখা গেছে, যেমন—ছাগলের পিপিআর ও গরুর মধ্যে লাম্পি ও ফুড পয়জনিং। তবে নিয়মিত টিকা ও পশুচিকিৎসকের পরামর্শে এসব সমস্যার মোকাবিলা করে চলেছেন তিনি।
যৌথ পরিবারে ১৬ জন সদস্য থাকা সত্ত্বেও আমির হোসেনের উদ্যোগ ছিল সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। যদিও তিনি এখনো মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে ডেইরি ফার্ম গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তার।
প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, কুমিল্লার পক্ষ থেকে পরিচিতি প্রদান করা হয় এবং প্রয়োজনীয় মুদ্রণ সামগ্রী বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হয়। নিকটস্থ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে খামারে নিয়মিত টিকাদান ও পরামর্শের মাধ্যমে সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
মাসিক প্রায় এক লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে পরিচালিত এই ফার্ম এখন কুমিল্লা অঞ্চলের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমির হোসেন প্রমাণ করেছেন, সঠিক চিন্তা, ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রম থাকলে গ্রামে বসেই গড়ে তোলা যায় সফল একটি খামার—যা হতে পারে অন্যদের অনুপ্রেরণার উৎস।
প্রতিবেদক:
খালেক হাসান, কৃষি তথ্য কেন্দ্র সংগঠক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ তথ্য দপ্তর, কুমিল্লা