মুরগির খামার দিয়ে বেকারত্ব দূর করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন দিনাজপুর চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল গ্রামের মনিরুজ্জামান রিফাত। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অবসান করে স্বল্প পুঁজিতে মুরগির খামার দিয়ে জীবনে সুদিন ফিরেছে তার।
দীর্ঘদিন দুবাইয়ের আবুধাবিতে কাটানোর পর ২০০৯ সালের দেশে ফিরে আর্থিক সংকটে পড়েন মনিরুজ্জামান। হতাশায় না ভুগে চ্যানেল আইয়ের ইউটিউবে সায়েক সিরাজরে ভিডিওতে দেশের বিভিন্নস্থানে উন্নত জাতের মুরগির খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হন। পরে উন্নত জাতের সেনালী মুরগির খামার করার জন্য নরসিংদী থেকে ২০টি ডিম সংগ্রহ করেন। এভাবেই শুরু তার পথচলা।
প্রবাসী মনিরুজ্জামান রিফাত ঢাকা পোস্টেকে বলেন, আমি মাদরাসা লাইনে পড়াশোনো শেষ করে উন্নত জীবন গড়ার লক্ষে বাইরের দেশে যাওয়ার সিন্ধান্ত নেই। এরপরে ২০০৫ সালে আমি আবুধাবি শহরে চলে যাই সেখানে কাজ শুরু করি। দীর্ঘদিন কাজ করে নিজের জীবনের কোনো উন্নতি করতে পারছিলাম না তখন সিন্ধান্ত নেই দেশে গিয়ে কিছু করব। দেশে ফিরে কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। তখন ইউটিউবে সায়েক সিরাজ স্যারের মুরগির খামার নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদনগুলো দেখি। তখন মনে মনে নিয়ত করি দেশে গিয়ে উন্নত মানের মুরগির খামার তৈরি করব। পরে ২০০৯ সালে দেশে ফিরে নরসিংদী থেকে ২০টি সেনালি উন্নতমানের মুরগির ডিম সংগ্রহ করে শুরু করি ।পরে আমি ঢাকা মিরপুর থেকে আবার ২০০ পিচ মুরগি কিনে এনে প্রবাস বন্ধু পল্ট্রি অ্যান্ড চিকস নামের খামার শুরু করি। এখন আমার ৪টি সেডে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ হাজার মুরগী থাকে। শীতকালে মুরগি কম থাকে এখন টোটাল প্যারেন্টস আছে সাত হাজার ৫০০, আর রানিং ডিমে আছে ২ হাজার। সেখান থেকে ৭০ শতাংশ ডিম প্রতিদিন সংগ্রহ করা হয়। সেই ডিম থেকে প্রতিমাসে ২৮ থেকে ৩০ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। সেই বাচ্চা দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় খামারের নিজেস্ব পরিবহনে পৌঁছে দেওয়া হয়। এক একটি বাচ্চা ৪০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, আমি যখন প্রবাসে ছিলাম তখন ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ইনকাম করতম। এখন দেশে আমার খামারে ১৬ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। তাদের বেতন ভাতা আরও আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আয় হয় আমার।
খামারের কর্মচারী পিন্টু ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রবাস বন্ধু পল্ট্রি অ্যান্ড চিকস্ খামারের মুরগিগুলো দেখাশোনা করি। মুরগির খাবার থেকে শুরু করে কখন ভিটামিন দিতে হবে কখন ভ্যাকসিন দিতে হবে সব কাজ আমি করি। আগে জয়পুর হাট জেলায় খামারে কাজ করেছি। এখন মনিরুজ্জামান ভাইর খামারে কাজ করে ভালো টাকা বেতন পাই। তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে।
খামারের আরেক কর্মচারি সুজন ইসলাম বলেন, আমি পড়ালেখার পাশাপশি প্রবাস বন্ধু পল্ট্রি অ্যান্ড চিকস্ খামারে মুরগির ডিম ও বাচ্চার হিসাব রাখি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খামারগুলোতে একদিনের মুরগির বাচ্চাগুলোকে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এ খামারে কাজ করে নিজের পড়াশোনার খরচ যোগাই ও পরিবারকে সহযোগিতা করি।
চিরিরবন্দর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সারফারাজ হোসাইন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মনিরুজ্জামন একজন পরিশ্রমী উদ্যোক্তা। দীর্ঘ দিন প্রবাসে থেকে এসে মুরগির খামার করে এখন জেলার সফল খামারি হয়েছেন। মনিরুজ্জামানের প্রবাস বন্ধু পল্ট্রি অ্যান্ড চিকস খামারে প্রাণী সম্পদ কার্যালয় থেকে ভ্যাকসিন থেকে শুরু করে সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়।
copy from: Jago news