ছাগল পরিচর্যার গুরুত্বপূর্ণ দিক গুলো নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। খামারের ছাগলকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখা এবং সেই সাথে ছাগল থেকে আসানুরুপ উৎপাদন পেতে হলে তাদেরকে সঠিকভাবে যত্ন বা পরিচর্যা করতে হবে। ছাগল খামারের যত্ন বা পরিচর্যা বলতে সময়মতাে খাবার পরিবেশন করা , গর্ভবতী ছাগীর যত্ন , অসুস্থ ছাগলকে ওষুধ খাওয়ানাে , ঘরদোর পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন করা ইত্যাদিকে বুঝায়।
প্রতিটি ছাগলের জন্য সাধারণ পরিচর্যা এবং গর্ভবতী ছাগী, নবজাতক বাচ্চা, প্রজননের পাঠা প্রভৃতির জন্য কিছু বিশেষ যত্ন বা পরিচর্যার প্রয়ােজন হয়।
ছাগল পরিচর্যা সমূহ
- খামারের সকল ছাগলকে প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বের করে খােয়াড়ে (দিনের বেলা ছাগল রাখার জন্য বাসস্থানের সঙ্গে লাগােয়া ঘর) অথবা থাকার ঘরের আশেপাশের খােলা জায়গায় চারণ করতে দিতে হবে। এটি ছাগল পরিচর্যার অন্যতম দিক।
- ছাগলগুলোর গায়ে পর্যাপ্ত সূর্য কিরণ লাগার সুযােগ প্রদান করতে হবে।
- বের করার পর ছাগলের শরীর ব্রাস দিয়ে ভালােভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
- খামারে বেশি পরিমান ছাগল থাকলে তাদেরকে চিহ্নিত করার জন্য কানে ট্যাগ নম্বর লাগাতে হয়। এবং প্রতিটি ছাগলের জীবন বৃত্বান্ত লিপিবদ্ধ করতে হবে। এটা ছােট বড় যে কোনাে খামারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- ছাগলকে নিয়মিত সুষম দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস সরবরাহ করতে হবে।
- খাবার পাত্র ও পানির পাত্র সবসময় পরিষ্কার করে দিতে হবে।
- প্রতিটি ছাগলকে তার চাহিদা অনুযায়ী আলাদাভাবে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। প্রতিদিন একই নিয়মে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর খাবার প্রদাণ করতে হবে। ঘাসের বিকল্প হিসাবে পাতাসহ বিভিন্ন গাছের ডাল ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
- ছাগল সাধারণত পানি পছন্দ করে না। আর তাই নিয়মিত গােছলের পরিবর্তে ব্রাশ দিয়ে ঘষে দেহ পরিষ্কার করে দিতে হবে। এতে লােমের ভিতরে জমে থাকা ময়লা বেরহয়ে আসবে এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত ব্রাশ করলে ছাগলের লােম উজ্জ্বল দেখাবে এবং চামড়ার মান বৃদ্ধি পাবে।
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে দুগ্ধবতী ছাগীর দুধ দোহন করা যেতে পারে। দুধ দোহনের সময় হাত পরিষ্কার রাখতে হবে।
- খামারে কোনাে ছাগল অসুস্থ কিনা তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কোনাে ছাগলের মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে পৃথক করে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- খামারের সকল বয়সের ছাগলকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে এবং রোগ প্রতিশোধক টিকা প্রদান করতে হবে।
গর্ভবতী ছাগীর পরিচর্যা বা যত্ন
অধ্যায়ে প্রসঙ্গক্রমে এ সম্পর্কে কিছুটা আলােকপাত করা হয়েছে। ছাগল পরিচর্যা অন্যতম পার্ট হলো গর্ভবতী ছাগীর পরিচর্যা বা যত্ন।
- ছাগীর গর্ভধারণকাল ১৪৫ দিন (প্রায় ৫ মাস)। ছাগীর গর্ভধারণকাল পূর্ণ হওয়ার এক দুই দিন আগে বাচ্চা প্রসবের লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।
- বাচ্চা প্রসব করার অন্তত এক সপ্তাহ আগেই তাকে প্রসূতি ঘরে স্থানান্তর করতে হবে। অথবা অন্য ছাগল এর থেকে আলাদা রাখতে হবে।
- গর্ভবতী অবস্থার শেষের দিকে ছাগীকে কখনোই উঁচু মাচায় ওঠতে দেয়া যাবে না।
- ছাগল ডেলিভারির আগে কখনো কখনো ওলানে দুধ বা পানি জাতীয় পদার্থ আসে যেটা অনেকেই টেনে ফেলে দেয় যা মারাত্বক একটা ভুল। ওলান শক্ত হলে অর্থাৎ মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে গেলে অথবা অস্বাভাবিক হলে সেক্ষেত্রে দুধ ফেলে দিতে হবে। তা না হলে ওলানপ্রদাহ বা মাস্টাইটিস রোগ দেখা দিতে পারে।
পাঠার যত্ন ও পরিচর্যা
পাঠার পরিচর্যা সঠিক না হলে এর থেকে ভালােমানের বীজ উৎপাদিন করা সম্ভব হবে না। ফলে সে পাঠা দিয়ে ছাগীকে প্রজনন করালে ভালােমানের বাচ্চা হবে না। ছাগল পরিচর্যা আরেকটি পার্ট হলো পাঠার যত্ন ও পরিচর্যা।
- কোনাে পাঠার শারীরিক দুর্বলতা , পঙ্গুত্ব বা কোনাে যৌন রােগ থাকলে সে পাঠা প্রজননের জন্য বাতিল করে দিতে হবে।৩
- পাঠাকে নির্ধারিত মাত্রায় সুষম খাবার ও বিশুদ্ধ পানি প্রদান করতে হবে।৪
- সপ্তাহে অন্তত ২/৩ দিন ব্রাশ দিয়ে দেহ পরিষ্কার করে দিতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে যত্ন নিলে ও সুষম খাদ্য সরবরাহ করলে একটি পাঠা ১০-১২ বছর বয়স পর্যন্ত ভালােমানের বীর্য উৎপাদন করতে পারে। এটা একটি পিডিএফ ফাইল থেকে সংগ্রহ করা।